Advertisement
E-Paper

‘আদিবাসীদের উপরে অত্যাচার’! তৃণমূলের বিরুদ্ধে নয়া ‘হাতিয়ার’ শুভেন্দুর, অভিষেক-জীবনের বৈঠকি-ছবি দেখিয়েও আক্রমণ

তৃণমূল অবশ্য শুভেন্দুর সাংবাদিক বৈঠককে আদিবাসী ভোট ফিরে পাওয়ার কৌশল হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহল এবং রাঢ়বঙ্গের অধিকাংশ আসন বিজেপির দখলে গিয়েছিল। কিন্তু ২০২১ আর ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির ফল সেখানে খারাপ হয়।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৫ ১৮:২৫
Subhendu Adhikari attacks TMC on atrocities on tribal people issue, TMC calls it BJP’s ploy to revive vote share in tribal areas

মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: সংগৃহীত।

আদিবাসী সমাজের উপরে লাগাতার অত্যাচারের অভিযোগ তুলে রাজ্য সরকার এবং শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপির রাজ্য দফতরে মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে কয়েকটি ভিডিয়ো এবং ছবি দেখান তিনি। ঘটনাচক্রে যে পাঁচ জনের উপরে ‘অত্যাচারে’র অভিযোগ শুভেন্দু তুলে ধরেন, তাঁরা সকলেই পশ্চিম মেদিনীপুর এবং পুরুলিয়া জেলার বাসিন্দা। ২০১৯ সালে এই দুই জেলার আদিবাসী অঞ্চলে বিজেপি ভাল ফল করলেও পরবর্তী দু’টি নির্বাচনে ওই অঞ্চলে বিজেপির ফল ক্রমশ খারাপ হয়েছে। তাই ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে তৃণমূলের গায়ে ‘আদিবাসী-বিরোধী’ তকমা লাগাতে শুভেন্দু তৎপর বলে অনেকে মনে করছেন।

ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা-সহ কয়েক জনের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি সাম্প্রতিক বৈঠকের ছবিও শুভেন্দু মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে দেখান। তিনি বলেন, ‘‘জীবনকৃষ্ণ সাহা টাকা তুলে দিতেন। টাকা পৌঁছে যেত ভাইপোর কাছে।’’ জবাবে নারদকাণ্ডের ভিডিয়ো ফুটেজ তুলে ধরে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল।

পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে গত ১৪ অগস্ট নিজের শিশু সন্তানকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়ে আদিবাসী মা এক হাসপাতাল কর্মীর হাতে শ্লীলতাহানির শিকার হন বলে শুভেন্দু অভিযোগ করেন। ঘোমটায় মুখ ঢাকা এক মহিলার ভিডিয়ো-বয়ানও সাংবাদিক বৈঠকে দেখানো হয়। অভিযুক্তকে শুভেন্দু ‘একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের’ উল্লেখ করেন বলে।

১৫ অগস্ট পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর শহরে ফুটবল ম্যাচ চলাকালীন রেফারি লক্ষণ মান্ডিকে স্থানীয় তৃণমূল নেতার পদাঘাতের ঘটনা গোটা রাজ্যে নিন্দিত হয়েছিল। অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা আবার স্থানীয় পুরপ্রধানের ভ্রাতুষ্পুত্রও। পুরপ্রধান নিজেও ঘটনার নিন্দা করেন। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করে। মঙ্গলবার শুভেন্দু সেই ঘটনাকেও আদিবাসীদের উপরে অত্যাচারের ঘটনা হিসেবে তুলে ধরেছেন। আক্রান্ত রেফারি লক্ষণের ভিডিয়ো-বয়ানও শুনিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, তফসিলি জাতি-জনজাতির উপরে অত্যাচার প্রতিরোধ করার যে আইন, তা প্রয়োগ করা হলে অভিযুক্তের কঠোর সাজা হত। কিন্তু তার বদলে ৪৮ ঘণ্টাতেই অভিযুক্ত জামিনে মুক্ত হয়েছেন।

১৮ অগস্ট রাজ্যের আবগারি দফতরের কর্মীদের অত্যাচারে পশ্চিম মেদিনীপুরেরই ডেবরার লোয়াদা গ্রামের বাসিন্দা ডাক্তার সোরেন নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে শুভেন্দু অভিযোগ করেন। একই দিনে পুরুলিয়ার পারা বিধানসভার লিপানিয়া গ্রামে আদিবাসী ধনঞ্জয় মুদি ‘একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের’ হাতে আক্রান্ত হন বলে শুভেন্দু দাবি করেন।

১৫ অগস্ট সুবল সোরেন নামে যে শিক্ষক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, সেই ঘটনাকেও আদিবাসীদের উপরে অত্যাচারের ঘটনা হিসেবে শুভেন্দু ব্যাখ্যা করেছেন। ‘যোগ্য শিক্ষক’ হয়েও চাকরিজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় সুবল হৃদরোগে আক্রান্ত হন বলে শুভেন্দুর দাবি। এর জন্য মুখ্যমন্ত্রী দায়ী বলেও বিরোধী দলনেতা মন্তব্য করেন।

তৃণমূল অবশ্য শুভেন্দুর এই সাংবাদিক বৈঠককে আদিবাসী ভোট ফিরে পাওয়ার কৌশল হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহল এবং রাঢ়বঙ্গের অধিকাংশ আসন বিজেপির দখলে গিয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি সে ফল ধরে রাখতে পারেনি। আর ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ফল আরও খারাপ হয়। মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, আসানসোল, বর্ধমান-দুর্গাপুরের মতো আসন হাতছাড়া হয়ে যায়। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের গায়ে ‘আদিবাসী বিরোধী’ তকমা সেঁটে বিজেপি জঙ্গলমহলে তথা রাঢ়বঙ্গে হারানো জমি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে বলে তৃণমূলের অনেকের বক্তব্য। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কথায়, ‘‘আদিবাসীরা জানেন যে, আগে জঙ্গলমহল কেমন রক্তাক্ত ছিল আর এখন সেখানে কেমন পরিস্থিতি। এখন জঙ্গলমহলের মেয়েরা ‘কন্যাশ্রী কাপ’ ফুটবল খেলেন।’’ কুণাল আরও বলেন, ‘‘যে শুভেন্দু অধিকারী আজ সাংবাদিক বৈঠক করে এ সব কথা বলেছেন, তিনি বলেছিলেন, বিরবাহা হাঁসদা, দেবনাথ হাঁসদা আমার জুতার নীচে থাকে। সুতরাং কারা সম্মান দেয়, কারা উন্নয়ন করে, এটা আদিবাসীরা জানেন। এ সব সাংবাদিক বৈঠক করে কোনও লাভ হবে না।’’

শুভেন্দু অবশ্য শুধু আদিবাসী প্রসঙ্গে মঙ্গলবার সীমাবদ্ধ থাকেননি। গ্রেফতার হওয়া বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের প্রসঙ্গেও তৃণমূলকে আক্রমণ করেছেন। তিনি তৃণমূলের একটি বৈঠকের ছবি এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে দেখান। তাতে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের সঙ্গে জীবনকৃষ্ণ-সহ মুর্শিদাবাদ জেলার একাধিক তৃণমূল বিধায়ক ও নেতাকে দেখা যাচ্ছে। ছবিতে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীও রয়েছেন। ছবিটি দেখিয়ে শুভেন্দু দাবি করেন, সেটি গত ১২ অগস্টের বৈঠকের। সেই বৈঠকে জীবনকৃষ্ণের সঙ্গে ‘ভাইপো’র কী আলোচনা হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেন, ‘‘আসল অপরাধী জীবন নন। তিনি টাকা তুলে দিতেন। পৌঁছে যেত ভাইপোর কাছে। সারা বাংলা জুড়ে ভাইপোর এমন শ’য়ে শ’য়ে টাকা তোলার লোক (কালেক্টর) রয়েছে।’’

শুভেন্দুর সাংবাদিক বৈঠক শেষ হতেই নারদকাণ্ডের ভিডিয়ো ফুটেজ তুলে ধরে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল। সমাজমাধ্যমে সেই ভিডিয়ো এবং নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শুভেন্দুর ছবি পাশাপাশি পোস্ট করে তৃণমূল লিখেছে, ‘‘নরেন্দ্র মোদী বাংলায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রবল লড়াইয়ের কথা ঘোষণা করেছেন। এবং সেই অভিযানের মুখ সম্ভবত হচ্ছেন শুভেন্দু।’’

Suvendu Adhikari BJP Bengal West Bengal Politics Atrocities Tribal people TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy