স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য এখন জেলবন্দি। ফাইল চিত্র ।
স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অপসারিত উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্য জেলে রয়েছেন। কিন্তু তিনি এখনও রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ অধ্যক্ষ পরিষদ (অল বেঙ্গল প্রিন্সিপাল কাউন্সিল)-এর প্রেসিডেন্ট পদে। মঙ্গলবার তারই প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলন করে সরব হতে দেখা গেল অধ্যক্ষ পরিষদের সদস্যদের একাংশকে। অধ্যক্ষ পরিষদের সদস্যসংখ্যা তিন শতাধিক। তাঁদেরই প্রায় ২৫ জন সদস্য মঙ্গলবার এই সাংবাদিক সম্মেলনের ডাক দিয়েছিলেন।
সুবীরেশের পদে থাকা নিয়ে ওই অধ্যক্ষদের দাবি, জোর করে এবং বেআইনি ভাবে অধ্যক্ষ পরিষদের প্রেসিডেন্টের পদ ধরে রেখেছেন সুবীরেশ। তাঁরা জানিয়েছেন, সুবীরেশ শ্যামাপ্রসাদ কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন অধ্যক্ষ পরিষদের প্রেসিডেন্ট হন। নিয়ম অনুযায়ী, দু’বছর অন্তর প্রেসিডেন্ট পদে নতুন কারও বসার কথা। কিন্তু ২০১৭ সালের পর থেকে ছ’বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও ওই পদ ছাড়েননি সুবীরেশ। অধ্যক্ষদের দাবি, ২০১৯-এ প্রেসিডেন্ট বদলের কথা উঠলেও লোকসভা নির্বাচনের জন্য তা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে পুরো প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরের বছর আবার করোনা অতিমারির কারণে প্রেসিডেন্ট বদলের প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার পরেও সুবীরেশ অধ্যক্ষ পরিষদের প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়েননি।
আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু কলেজের অধ্যক্ষ পূর্ণচন্দ্র মাইতির দাবি, ‘‘ছ’বছর পেরিয়েও সুবীরেশ অধ্যক্ষ পরিষদের প্রেসিডেন্ট পদে বহাল রয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি দু’বছরের বেশি অধ্যক্ষ পরিষদের প্রেসিডেন্ট থাকতে পারেন না। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ পাওয়ার পর ওই পদ ধরে রাখার নিয়ম নেই। কিন্তু তার পরও কেন পদ আঁকড়ে রয়েছেন? সুবীরেশ তো এখন জেলে। তা হলে কী জেল থেকেই তিনি পরিষদ চালাচ্ছেন? আমরা অবিলম্বে সুবীরেশের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি।’’
তিনি আরও জানিয়েছেন, সুবীরেশ জেলে যাওয়ার পর অক্ষ্যক্ষ পরিষদের যে সমস্ত কর্মসূচি হয়েছে, তার চিঠি এসেছে সাদা কাগজে। সেই কাগজে কোনও স্বাক্ষর বা স্ট্যাম্প নেই। আগামী ২২ জানুয়ারিও পরিষদের বার্ষিক বৈঠক ডাকা হয়েছে। কিন্তু তার জন্য যে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তাতেও কোনও স্বাক্ষর নেই বলেই দাবি করেছেন পূর্ণচন্দ্র।
চিত্তরঞ্জন কলেজের অধ্যক্ষ শ্যামলেন্দু চট্রোপাধ্যায়। তিনিও উপস্থিত ছিলেন ওই সাংবাদিক সম্মেলনে। শ্যামলেন্দু বলেন, ‘‘আমরা ন্যায্য কারণেই সুবীরেশের পদত্যাগের দাবি তুলেছি। আমরা যদি অধ্যক্ষ হিসাবে নিজেরাই এই কাজ করি, তা হলে পড়ুয়াদের কী শেখাব? সমাজের বাকিদের কাছেই বা কী দৃষ্টান্ত স্থাপন করব?’’
তবে এই বিষয়ে সরকার কোনও রকম হস্তক্ষেপ করবে না বলেই সাফ জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন, ‘‘এটি সরকার অনুমোদিত পরিষদ নয়। তাঁরা কাকে নির্বাচন করবেন তা তাঁদের সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে সরকার হস্তক্ষেপ করবে না।’’
সুবীরেশ জেল থেকে পরিষদ চালাচ্ছেন বলে যে প্রশ্ন পরিষদের অধ্যক্ষ সদস্যেরা তুলেছেন, তার উত্তরে সুবীরেশের আইনজীবী তমাল মুখোপাধ্যায় আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘জেলে বসে উনি কী করছেন তা জেল কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন। আমার কাজ আদালতে। এই বিষয়ে আমার পক্ষে কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy