গ্রেফতার হয়ে আপাতত সিবিআই হেফাজতে তিনি। কিন্তু রাজধানীর রাজনীতিতে দিব্যি চর্চায় আছেন উত্তর কলকাতার তৃণমূল সাংসদ!
তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার কাছ থেকে বেআইনি সুবিধা পেয়েছেন। তদন্তে নেমে সিবিআই তাঁকে গ্রেফতার করেছে। আইনি পথে সুবিধা পেতে চেয়েও আপাতত হাত খালিই থাকছে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের! কারণ, না যৌথ সংসদীয় কমিটি, না কেন্দ্রীয় সরকার— কেউ তাঁর আর্জিতে সাড়া দিতে রাজি নয়!
খোলসা করা যাক। সাংসদদের বেতন-সহ অন্য সুযোগ-সুবিধা পর্যালোচনা করার জন্য রাজ্যসভা ও লোকসভা থেকে প্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটি গড়া হয়েছে যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে। তৃণমূলের তরফে সেই কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সুদীপবাবু। কমিটির কাছে তিনি লিখিত ভাবে দাবি করেছিলেন, সাংসদদের নিজেদের শহরে (হোমটাউন) যথেচ্ছ বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে দেওয়া হোক নিখরচায়! যেমনটা দিল্লিতে সাংসদদের সরকারি বাসভবনে হয়ে থাকে। কমিটির চেয়ারম্যান, বিজেপি-র আদিত্যনাথ সুদীপবাবুর এমন প্রস্তাব অন্য সদস্যদের সামনেই পেশ করেছেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রকের সচিব রাজীব যাদবের কাছে। সদ্য সিবিআইয়ের ছোঁয়া-লাগা সুদীপবাবুর ব্যাপারে কমিটির বাকি সদস্যেরা সরাসরি মত দিতে চাননি। তবে সংসদীয় সূত্রের খবর, সংসদীয় মন্ত্রকের তরফে বলে দেওয়া হয়েছে, এমন প্রস্তাব বাস্তবায়িত করা অসম্ভব!
রাজনৈতিক শিবির দাবি খারিজের সময় বেছে নেওয়ার মধ্যে বিজেপি-র চালই দেখছে। কারণ, সুদীপবাবু চিঠি দিয়েছিলেন মাসআড়াই আগে। সাধারণত এ সব বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব পাওয়ার পরে আলোচনা হতে আরও সময় লাগে। এখন রোজভ্যালি-কাণ্ডে সুদীপবাবু যখন হাজতে এবং দিল্লিতে তৃণমূল সাংসদেরা শোরগোল পাকাচ্ছেন, সেই সময়েই যৌথ কমিটির আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচিতে বিষয়টি তুলে দেওয়া হয়েছে! অনেকেরই ধারণা, এর পিছনে বিজেপি-র প্রচ্ছন্ন উদ্দেশ্য— তৃণমূল সাংসদেরা যে সুবিধা আদায় করে নিতেই অতি উৎসাহী, সেটাই দেখিয়ে দেওয়া!
সাংসদদের সচিব নিয়োগ করার সুবিধা বাড়ানো, টেলিফোন বিলের ঊর্ধ্বসীমা প্রতি বছরের বদলে সাংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া-সহ আরও প্রস্তাব সুদীপবাবুর চিঠিতে ছিল। কিন্তু তার মধ্যে চর্চায় আসছে নিখরচায় বিদ্যুৎ দেওয়ার দাবিই। এ রাজ্য থেকে কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী, সিপিএমের ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ ভিন্ রাজ্য থেকে সমাজবাদী পার্টি, বিএসপি, এনসিপি সাংসদেরা ওই কমিটির সদস্য। তার মধ্যে সিপিএম জানিয়েছে, সাংসদদের বেতন বা অন্য সুবিধা নিজেরাই ঠিক করে নেওয়া উচিত নয়! দায়িত্ব দেওয়া উচিত নিরপেক্ষ কোনও কমিটি বা সংস্থাকে। বিষয়টিকে পে কমিশনের মতো কাঠামোর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যেতে পারে।
তৃণমূল এমন ঘটনায় কিছুটায় আতান্তরে। কমিটির আর এক তৃণমূল সদস্য সুখেন্দু শেখর রায় সুদীপবাবুর লিখিত বয়ান নিয়ে আলোচনার সময়ে বৈঠকে ছিলেন না। পরে যোগাযোগ করা হলেও কমিটির আলোচ্য নিয়ে সুখেন্দুবাবু মুখ খুলতে চাননি। তবে তৃণমূলের এক বর্ষীয়ান নেতার বক্তব্য, ‘‘সংসদীয় কমিটিতে কে প্রতিনিধিত্ব করবেন, সেটা দলই ঠিক করে। তাই কোনও সদস্য কোনও বক্তব্য জানালে সেটাকে দলের বক্তব্য হিসাবেই ধরে নিতে হবে।’’ ব্যক্তি সুদীপবাবুকে ছাড়িয়েও তৃণমূলের বিড়ম্বনা এখানেই!
তৃণমূলের চির প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম এমন সুযোগ ছেড়ে দিচ্ছে না। দলের সাংসদ মহম্মদ সেলিমের কটাক্ষ, ‘‘সুদীপবাবু তো ওই প্রস্তাব আগে পাঠিয়েছেন। এখন হলে লিখতে পারতেন, জেলগুলোকে পাঁচ তারায় উন্নীত করা হোক! অন্য রাজ্যেও সেই সুবিধা দেওয়া হোক!’’ উল্লেখ নিষ্প্রয়োজন যে, উত্তর কলকাতার সুদীপবাবুর বর্তমান ঠিকানা ভুবনেশ্বর!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy