Advertisement
E-Paper

সেবির নোটিস সত্ত্বেও সওয়াল সুদীপের

সেবির নিষেধাজ্ঞা জারির পরেও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এক জন সাংসদ হয়ে রোজ ভ্যালির পক্ষে সওয়াল করেছিলেন কেন, প্রশ্ন তুলল সিবিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৪

সেবির নিষেধাজ্ঞা জারির পরেও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এক জন সাংসদ হয়ে রোজ ভ্যালির পক্ষে সওয়াল করেছিলেন কেন, প্রশ্ন তুলল সিবিআই।

আদালতে জমা দেওয়া নথিতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার বক্তব্য, সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে অনেক বেশি টাকা ফেরত দেওয়ার লোভ দেখিয়ে বাজার থেকে টাকা তোলা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিল সেবি। ২০১০ সালে তাদের কাছ থেকে এই মর্মে নিষেধাজ্ঞা পৌঁছয় রোজ ভ্যালি রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশান লিমিটেডে। সিবিআইয়ের দাবি, এর পরেও গৌতম কুণ্ডুর সংস্থার একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে বক্তৃতা দেন সুদীপ। তাঁদের পাশে থাকার কথাও বলেন।

কিন্তু কেন? এমনই বেশ কিছু বিষয় নিয়ে এখনও ধন্দে সিবিআই। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, ভুবনেশ্বরে সুদীপ ও রোজ ভ্যালি মামলায় ধৃত আর এক সাংসদ তাপস পালকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার পরিকল্পনা রয়েছে গোয়েন্দাদের। দুই সাংসদই ভুবনেশ্বরের সিবিআই অফিসে রয়েছেন। সিবিআই জানিয়েছে আজ, শুক্রবার তাপসকে আবার আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে। হতে পারে, এ দিনই তাঁকে জেল হেফাজতে পাঠিয়ে দিলেন বিচারক। সে ক্ষেত্রে আপাতত দুই সাংসদকে একসঙ্গে আর পাওয়া যাবে না। কিন্তু মুখোমুখি বসানো গেলে আরও কিছু নতুন তথ্য পাওয়ার আশা করছে সিবিআই।

তাপসকে এ দিন আরও এক প্রস্ত জেরা করেছেন সিবিআই গোয়েন্দারা। তাঁদের দাবি, রোজ ভ্যালি সিনে ডিভিশনের মাথায় বসে তাপস শিল্পী নিয়োগের বিষয়টি দেখভাল করতেন। ওই ডিভিশনের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার হয়েছে বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ। বাংলাদেশের একাধিক প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে রোজ ভ্যালির চুক্তিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সেই সূত্রে বৃহস্পতিবার রাতে টালিগঞ্জের এক প্রথম সারির অভিনেত্রীকেও সিবিআই নোটিস পাঠিয়েছে বলে সূত্রের খবর। ওই অভিনেত্রীর সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগ করা যায়নি।

ইতিমধ্যেই আদালতে বেশ কিছু তথ্য পেশ করেছেন গোয়েন্দারা। অন্য অনেকের মতো অভিযোগ রয়েছে দুই সাংসদের বিরুদ্ধেও। সেখানেই উঠে এসেছে সেবি-র নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ। আদালতে জমা দেওয়া ওই তথ্য অনুযায়ী, সাংসদ হিসেবে রোজ ভ্যালির একটি অনুষ্ঠানে সংস্থার চেয়ারম্যান গৌতম কুণ্ডুর পাশে দাঁড়িয়ে কর্মীদের উদ্দেশে সুদীপ বলেছিলেন, ‘‘যে কর্মসংস্থান গৌতম করেছেন, তা রাজ্য সরকারও করতে পারেনি। আপনারা সকলে ভাল করে কাজ করুন। আমরা পাশে আছি।’’

সিবিআইয়ের অভিযোগ, ‘আমরা’ বলতে দল এবং সরকারের কথাই বলতে চেয়েছিলেন সুদীপ। এই বক্তব্যই প্রমাণ করে, সংস্থাটি কার্যত ‘বেআইনি’ ঘোষণা হওয়ার পরেও সেটির প্রতি সুদীপদের সমর্থন ছিল।

গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, প্রথম দিকে এই অভিযোগ মানতে চাননি সাংসদ। পরে ওই অনুষ্ঠানের ছবি দেখানো হয় তাঁকে। এক গোয়েন্দার অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রোজ ভ্যালি বাজার থেকে আরও টাকা তুলেছিল। সাংসদের ‘শংসাপত্র’ পেয়ে বরং তাদের ব্যবসা আরও গতি পায়।

অনেক মন্ত্রী, সাংসদ কিংবা নেতারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে ‘ভাল ভাল’ কথা বলেন। তা হলে কি সিবিআই তাঁদের সবাইকে অভিযুক্ত করবে? তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, তৃণমূলের ওই সাংসদ শুধু সংস্থাটির মঞ্চেই থাকেননি, বিভিন্ন সময়ে তাদের কাছ থেকে সুবিধাও নিয়েছেন।

সুদীপের সঙ্গে রোজ ভ্যালির যে ‘দেওয়া-নেওয়া’র সম্পর্ক ছিল, সেই দিকেই ইঙ্গিত করতে চাইছে সিবিআই। আদালতে জমা দেওয়া লিখিত অভিযোগে তারা জানিয়েছে, রোজ ভ্যালির নিজস্ব একটি ‘বিশেষ’ ফান্ড ছিল। সংস্থা থেকে যত বার প্রভাবশালীদের কাছে টাকা গিয়েছে, ওই ফান্ডের অ্যাকাউন্টেই প্রতি বার টাকার অঙ্ক ও প্রাপকের নাম লিখে রাখা হয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, সেই তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে সুদীপের নাম।

সিবিআই সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার ভুবনেশ্বরের দফতরে সুদীপকে কয়েক ঘণ্টা জেরা করা হয়। বাকি সময়টুকু তিনি বিভিন্ন খবরের কাগজ খুঁটিয়ে পড়েছেন। এক তদন্তকারীর কথায়, জেরার ফাঁকেই পাশের ঘরে থাকা তাপসের খোঁজ নিয়েছেন সুদীপ।

ঘটনাচক্রে, এ দিন লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজনকে সরকারি ভাবে চিঠি দিয়ে সুদীপের গ্রেফতারির কথা জানিয়েছে সিবিআই। তাতে বলা হয়েছে, রোজ ভ্যালি মামলায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, টাকা নয়ছয় ও গরিব লগ্নিকারীদের প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হয়েছে সাংসদের বিরুদ্ধে। পরে লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেল অনুপ মিশ্রের তরফেও বিজ্ঞপ্তি জারি করে একই কথা জানানো হয়। এ দিনই সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে একটি স্কুল কর্তৃপক্ষের চার সদস্যকে দু’ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে সিবিআই সূত্রের দাবি। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছিলেন, একটি স্কুলে রোজভ্যালির পক্ষ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছিল। এই অনুদানের ক্ষেত্রেও সুদীপের যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

সংস্থা সূত্রের ইঙ্গিত, এক ছাত্রের ভর্তির বিষয়ে কিছু তথ্য জানার জন্যই ডেকে পাঠানো হয়েছিল ওই স্কুলের কর্তাদের। যদিও ওই চার জন কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

Sudip Bandyopadhyay SEBI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy