Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Sukanta Majumdar

দিলীপের জুতোয় পা গলিয়ে নয়, নিজের নতুন জুতো পরে নতুন পথে দৌড়চ্ছেন, নিজেই জানালেন বিজেপির সুকান্ত

পূর্বসূরি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তাঁর কোনও প্রতিযোগিতা নেই। এমনটাই দাবি করেছেন বর্তমান রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বিজেপিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দিলীপের অবদানের কথাও তুলে ধরেছেন তিনি।

দিলীপ ঘোষ ও সুকান্ত মজুমদার।

দিলীপ ঘোষ ও সুকান্ত মজুমদার। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:১৫
Share: Save:

পূর্বসূরি দিলীপ ঘোষের ‘জুতোয় পা গলিয়ে নয়’, নিজের জুতো পরেই নিজের নতুন পথে দৌড়তে চান বর্তমান রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির দিয়ে-যাওয়া ব্যাটন হাতে নিয়েই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় আরও বেশি সংখ্যক আসন জিতবে তাঁর নেতৃত্বাধীন বিজেপি। শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনের বিশেষ শো ‘অ-জানাকথা’য় এমনই দাবি করেছেন সুকান্ত।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ১৮টি আসনে বিজেপির জয়ের নেপথ্যে অন্যতম কারিগর ছিলেন তদানীন্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এ কথা ঐতিহাসিক ভাবেই সত্য। কারণ, দিলীপের আমলেই বিজেপি এ রাজ্যে সেই ‘ঐতিহাসিক সাফল্য’ পেয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে সরকার গঠনে ব্যর্থ হলেও রাজ্যে প্রধান বিরোধী দলের জায়গা যে ভাবে তৈরি করেছে পদ্ম শিবির, তাতেও দিলীপের অবদান রয়েছে বলে মেনে নিয়েছেন স্বয়ং সুকান্তও। শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক এবং ইউটিউব লাইভ ‘অ-জানাকথা’য় পূর্বসূরি প্রসঙ্গে বর্তমান রাজ্য সভাপতি রাখঢাক না করেই বলেছেন, ‘‘দিলীপ’দা আমাদের সম্মাননীয় নেতা। অস্বীকার করতে পারি না যে, দিলীপ ঘোষ রাজ্য বিজেপিকে অনেকটা দূর এগিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। কর্মী-সমর্থকদের লড়াই করার মানসিকতা তৈরি করেছেন।’’

২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দিলীপের কুর্সিতে বসেছিলেন সুকান্ত। তবে দল পরিচালনায় প্রাক্তনের অবদানকে স্বীকৃতি দিলেও রাজ্য বিজেপিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিজের রাস্তাতেই যে তিনি হাঁটতে চান, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন বর্তমান রাজ্য সভাপতি। সুকান্তের কথায়, ‘‘শুনেছিলাম, রাজ্য সভাপতি করার জন্য সর্বভারতীয় সভাপতির কাছে আমার নাম প্রস্তাব করেছিলেন উনি (দিলীপ)। নিশ্চয়ই হয়তো আমার প্রতি প্রত্যাশা ছিল বা আছে। যদিও এ কথা ওঁর মুখ থেকে শুনিনি কখনও বা জিজ্ঞাসা করার ধৃষ্টতা দেখাইনি।’’ এর পরেই বিজেপি রাজ্য সভাপতি বলেন, ‘‘তাঁর (দিলীপ) অসমাপ্ত কাজের দায়িত্ব আমার কাছে এসে পড়েছে। ওঁর (দিলীপ) জুতোয় পা গলানো নয়। নিজের জুতো পরে দৌড় দেওয়াই ভাল। না হলে রাস্তা একই হয়ে যাবে। তাই নিজের জুতো পরে দৌড় দেওয়ার চেষ্টা করছি।’’ প্রায় একনিশ্বাসে তিনি আরও বলেন, ‘‘উনি আলাদা ট্রেন্ড তৈরি করে দিয়েছেন। নতুন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে একটা ট্রেন্ড তৈরি করা দরকার। আমার কাজ সেই নতুন ট্রেন্ড তৈরি করা।’’ দিলীপের নেতৃত্বাধীন বিজেপির তুলনায় তাঁর পরিচালনায় নয়া জমানা দেখবে বিজেপি, এমন লক্ষ্য রেখেই সুকান্ত এগোচ্ছেন বলে অভিমত গেরুয়াবাহিনীর একাংশের।

দিলীপের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পর সুকান্তের সামনে একাধিক পরীক্ষা রয়েছে। প্রথম পরীক্ষা ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন। দ্বিতীয়, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন। পাশাপাশি দলের অন্দরে ‘আদি-নব্যে’র দ্বন্দ্ব প্রশমনের কাজও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে, নেতৃত্বদানে দিলীপের সঙ্গেই তাঁর আসল চ্যালেঞ্জ। কেননা রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপির অবস্থান যেখানে ছিল, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে সেই ছবি বদলেছে। যার ‘নেপথ্যনায়ক’ দিলীপই। আগামী দুই নির্বাচনে সুকান্ত কি সেই চ্যালেঞ্জ উতরোতে পারবেন? আত্মবিশ্বাসের সুরে বিজেপি রাজ্য সভাপতির জবাব, ‘‘আমার বিশ্বাস, ভাল ফল করবে দল। আরও আসন বাড়বে। কর্মী-সমর্থকরা আবার বাইরে বেরোতে শুরু করেছেন। যে ভাবে এই সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষ বীতশ্রদ্ধ, তাতে আমরা ভাল ফল করব। উত্তরবঙ্গে একটা কেন্দ্র যদি বাড়াতে পারি, তাতেও আশ্চর্য হব না। তৃণমূলকে একেবারেই বিশ্বাস করেন না উত্তরবঙ্গের মানুষ।’’

দিলীপ জমানার বিজেপি থেকে তাঁর আমলের বিজেপি আগামী লোকসভা নির্বাচনে বেশি আসন পাওয়ার ব্যাপারে ‘আত্মবিশ্বাসী’ হলেও প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির সঙ্গে তাঁর কোনও প্রতিযোগিতা নেই বলেই জানিয়েছেন সুকান্ত। অবশ্য সেটা প্রত্যাশিতই। সুকান্তের কথায়, ‘‘দিলীপ’দার সঙ্গে কোনও প্রতিযোগিতা নেই। তিনি সর্বতো ভাবে সাহায্য করছেন। যে ব্যাটন নিয়ে দৌড়োচ্ছি, তা দিলীপ’দাই আমার হাতে তুলে দিয়েছেন। যেমন দিলীপ’দার হাতে তুলে দিয়েছিলেন রাহুল সিংহ (দিলীপের আগের রাজ্য সভাপতি)।’

বস্তুত, রাজ্য সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দিলীপের সঙ্গে সুকান্তর প্রায়শই তুলনা চলে বিজেপির অন্দরে। এমনকি, রাজ্য বিজেপিতে ভাগাভাগির কথাও শোনা গিয়েছে একাধিক বার। দলের একাধিক নেতা রাজ্য নেতৃত্বের উপর অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন। বেশ কয়েক দিন আগে ‘সুকান্তের অভিজ্ঞতা কম’ বলে মন্তব্য করেছিলেন দিলীপই। পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন সুকান্তও। প্রকাশ্যে প্রাক্তন ও বর্তমান রাজ্য সভাপতির সেই ‘বাদানুবাদ’ ঘিরে সরগরম হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। কটাক্ষের সুরে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘সুকান্ত বিজেপি আর দিলীপ বিজেপি।’’

যদিও পরে সুর বদলে পাশাপাশি একই মঞ্চে থেকে বিজেপিতে কোনও দ্বন্দ্ব নেই, বোঝানোর কৌশল নেন সুকান্ত-দিলীপ। কিন্তু তার পরেও প্রাক্তন ও বর্তমানের মধ্যে সমীকরণ নিয়ে চর্চা চলে রাজ্য রাজনীতিতে। এই প্রেক্ষাপটে প্রতিযোগিতার কথা মুখে না বললেও রাজ্য বিজেপিতে দিলীপের নেতৃত্বের ‘ছায়া’ সরিয়ে নিজস্ব ঘরানা তৈরি করে দলকে সফল করাই সুকান্তের লক্ষ্য বলে তাঁর কথায় স্পষ্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sukanta Majumdar Dilip Ghosh BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE