সব রাজ্যই হলফনামা জমা দিয়েছে। বাদ শুধু পশ্চিমবঙ্গ! এই গাফিলতির জন্য সোমবার রাজ্য সরকারকে তুলোধোনা করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর। প্রধান বিচারপতির নির্দেশ, দু’দিনের মধ্যে রাজ্যের পরিবেশ দফতরের সচিবকে সশরীর আদালতে হাজির হতে হবে হলফনামা-সহ। রাজ্য প্রশাসনের খবর, পরিবেশ সচিব অর্ণব রায় কাল, বুধবার হলফনামা-সহ শীর্ষ আদালতে হাজির হবেন ।
‘পর্যাবরণ সুরক্ষা সমিতি’ নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ২০১২ সালে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে নদী, জলাশয় এবং ভূগর্ভস্থ জলে দূষণ নিয়ে জনস্বার্থ মামলা করেছিল সুপ্রিম কোর্টে। ৪৩টি ‘আশঙ্কাজনক দূষিত এলাকা’ চিহ্নিত করেছিল তারা। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ৩টি এলাকা রয়েছে। তাদের নির্ধারিত ৩২টি ‘প্রচণ্ড দূষিত এলাকা’-র মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের একটি। ওই সংগঠনের দাবি ছিল, কোনও কারখানাকে যেন অশোধিত বর্জ্য নদীতে বা জলাশয়ে ফেলতে না দেওয়া হয়। বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা না থাকলে কারখানা চলার অনুমতিও দেওয়া যাবে না।
সেই মামলায় নদী-জলাশয়ে দূষণ ঠেকাতে কোন রাজ্য কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানিয়ে হলফনামা দিতে বলেছিল শীর্ষ আদালত। গত ১৬ জানুয়ারি শুনানির সময় বিচারপতিরা দেখেন, অনেক রাজ্যই হলফনামা জমা দেয়নি। সে দিনই প্রধান বিচারপতি রাজ্যগুলিকে হুঁশিয়ার করে দেন, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিতে হবে। আদালতে হাজির হতে হবে পরিবেশ সচিবকে। না হলে মুখ্যসচিবদের সমন করা হবে।
এ দিন প্রধান বিচারপতি খেহর, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি সঞ্জয় কৃষ্ণন কউলের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি শুরু হলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইনজীবী জয়দীপ মজুমদার হলফনামা দাখিলের জন্য আরও দু’সপ্তাহ সময় চান। এতে চটে যান প্রধান বিচারপতি। বলেন, ‘‘আপনারা অসাধারণ। চার সপ্তাহেও হলফনামা জমা না দিয়ে আরও দু’সপ্তাহ সময় চাইছেন! আবার আগের দিনের নির্দেশ অনুযায়ী অফিসারকেও আনছেন না!’’ দু’সপ্তাহের বদলে প্রধান বিচারপতি খেহর নির্দেশ দেন, সময় মিলবে আর দু’দিন। বুধবারই পরিবেশ সচিবকে হলফনামা হাতে আদালতে হাজির হতে হবে।
এর পরে রাজ্যের অ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড পারিজাত সিংহ বলেন, ‘‘মঙ্গলবারই পরিবেশ দফতরের সচিব হলফনামা নিয়ে দিল্লি পৌঁছে যাবেন।’’ যদিও প্রশ্ন উঠেছে, শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের পরেও কেন ঠিক সময় হলফনামা দিল না রাজ্য?
আগের দিন প্রধান বিচারপতি নিজে হুঁশিয়ার করেছিলেন। তার পরেও সময় মতো হলফনামা জমা না দেওয়াটা কি গাফিলতি, নাকি আদালতকে অগ্রাহ্য করার মনোভাব— তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘হলফনামা দিয়ে এমন মনোভাব দেখানোটা এ রাজ্যের রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসারের শাস্তি হওয়া উচিত।’’
গত ১৬ জানুয়ারি শুনানির সময়েই প্রধান বিচারপতি সব রাজ্যের হলফনামা না দেখে মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘এটা কি সুপ্রিম কোর্ট না রসিকতা করার জায়গা? এখানে কি পঞ্চায়েত বসেছে যে রাজ্যগুলো গুরুত্ব দিচ্ছে না? কেন আপনারা সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে রসিকতা করছেন? মুখ্যসচিবদের ডেকে পাঠানো হলে ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝতে পারবেন। এখানে কি ছেলেখেলা চলছে? যাঁরা হলফনামা জমা দিতে চান না, তাঁরা স্পষ্ট বলুন। বয়ান নথিভুক্ত করে নেওয়া হবে।’’
পরিবেশ দফতরের খবর, বিষয়টি সচিবেরই দেখার কথা। তাই তাঁকে তলব করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সময়ে হলফনামা জমা না দেওয়ার কারণ জানতে পরিবেশ সচিব অর্ণব রায়কে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। মেসেজ পাঠানো হলেও উত্তর দেননি। তবে তাঁর দফতরের মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় বলছেন, এই মামলায় আগের অ্যাডভোকেট অন-রেকর্ড ঠিক মতো জানাননি। ফলে সমন্বয়ের খামতি রয়ে গিয়েছিল। শুক্রবার হলফনামা দাখিল করার কথা জানা যায়। রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল কিন্তু তা হলফনামার আকারে জমা দেওয়া যায়নি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এ ধরনের গাফিলতি কাম্য নয়। যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, তা সচিবকে দেখতে বলেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy