Advertisement
E-Paper

সরে গেল ঢাল, চাপ বাড়ল রাজীবের

এমনিতেই নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে কলকাতা থেকে এসে দিল্লির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে কাজে যোগ দিতে হয়েছে রাজীবকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৯ ০৪:০০
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

আরও চাপ বাড়ল রাজীব কুমারের উপর।

সিবিআইয়ের গ্রেফতারির হাত থেকে বাঁচতে কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার রাজীব কুমারকে দেওয়া ‘রক্ষাকবচ’ আজ তুলে নিল সুপ্রিম কোর্ট। গত ৫ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট রাজীব কুমারকে শিলংয়ে সিবিআইয়ের জেরার মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছিল, সিবিআই তাঁকে গ্রেফতার করতে পারবে না। আজ রাজীবের সেই ঢাল সরিয়ে নিল শীর্ষ আদালত। তবে রাজীব কুমারের পক্ষে স্বস্তির হল, আগামী ৭ দিন সিবিআই তাঁকে গ্রেফতার করতে পারবে না।

সিবিআইয়ের দাবি মেনে রাজীব কুমারকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার নির্দেশ কিন্তু এ দিন দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চ জানিয়েছে, সিবিআইকে আইন মেনেই এগোতে হবে। অর্থাৎ সিবিআই রাজীবের বিরুদ্ধে আইনমাফিক মামলা করতে পারে, তাঁকে জেরার জন্য ডাকতে পারে বা গ্রেফতার করতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট তা নিয়ে কিছু বলবে না।

রাজীবের জন্য আরেকটি স্বস্তির কথা হল, তাঁকে আগামী সাত দিনের ‘রক্ষাকবচ’ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এর মধ্যে রাজীব আদালতে গিয়ে সুরাহা চাইতে পারেন। যার অর্থ, তিনি আগাম জামিনের জন্য আদালতে আবেদন করতে পারেন। অথবা তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই এফআইআর দায়ের করলে তা খারিজ করার জন্য আদালতে আর্জি জানাতে পারেন। এই ৭ দিন, অর্থাৎ ২৪ মে পর্যন্ত সিবিআই তাঁকে গ্রেফতার করতে পারবে না।

এমনিতেই নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে কলকাতা থেকে এসে দিল্লির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে কাজে যোগ দিতে হয়েছে রাজীবকে। তার মধ্যে গ্রেফতারির হাত থেকে বাঁচতে সুপ্রিম কোর্টের ঢাল সরে যাওয়ায় রাজীবের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে বাধ্য। কারণ ২৪ মে-র পরে সিবিআই যদি রাজীবকে গ্রেফতার করে এবং তাঁকে যদি ৪৮ ঘণ্টা হেফাজতে কাটাতে হয়, তা হলে নিয়মমাফিক তিনি সাসপেন্ড হয়ে যাবেন। ২৩ মে ফল প্রকাশ হলেও সরকারি ভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছে ২৭ মে। তত দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গেই যুক্ত থাকতে হবে রাজীবকে।

রাজ্য সরকারের আইনজীবীরা অবশ্য বলছেন, বিষয়টি এত সহজ হবে না। কারণ সিবিআই রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে সারদা-তদন্তের তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করার অভিযোগ আনলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর দায়ের করেনি। খুব বেশি হলে সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২০১ বা ২০২ ধারায় এফআইআর দায়ের করতে পারে। তাঁকে ফের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকতে পারে।

আদালতের রায়ের পরে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। আইন আইনের পথে চলবে।’’ রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘আজকের রায় রাজীবের বিরুদ্ধে নয়। এই রায় আমাদের পক্ষে। এই রায় সন্তোষজনক। একে আমাদের জয় এবং সাফল্যও বলা চলে।’’

কারণ হিসেবে তিনটি যুক্তি দিয়েছেন মনু সিঙ্ঘভি। এক, সিবিআই রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করতে চেয়েছিল। আদালত তা খারিজ করে দিয়েছে। দুই, সিবিআই সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে এসেছিল রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করতে চেয়ে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতে রাজীব কুমারকে জামিনের জন্য যেতে বলেছে। তিন, রাজীব কুমারকে সাত দিনের সময় দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না।

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা কথা কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘আমরা সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে চেয়েছিলাম, দোষীরা শাস্তি পাক এবং প্রতারিতদের টাকা ফেরত দেওয়া হোক। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মামলার ভার নিয়েছিল সিবিআই। কিন্তু পাঁচ বছর ধরে তারা টালবাহানা করেছে। অবশেষে তারা নড়ে বসেছে। তবে আমাদের আশা, আদালতের হস্তক্ষেপেই দোষীদের শাস্তি হবে এবং প্রতারিতরা টাকা ফেরত পাবেন।’’

প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি দীপক গুপ্ত ও বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চ একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছে। তা হল, সিবিআই ও রাজীব কুমারের অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের মধ্যে কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক— সেই বিচারের মধ্যে তাঁরা যাচ্ছেন না। দু’পক্ষের বক্তব্য রায়ে তুলে ধরা হয়েছে।

সিবিআই প্রথমে সুপ্রিম কোর্টে এসে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেছিল। অভিযোগ ছিল, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই সারদা-রোজ ভ্যালির মতো চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে সিবিআই। কিন্তু রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন তাতে সহযোগিতা করছে না। ৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে সিবিআই অফিসারেরা বাধা পাওয়ার পরেই এই মামলা করে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা।

এর পর সিবিআই ধাপে ধাপে অভিযোগ তোলে, রাজীব তথ্যপ্রমাণ লোপাট করেছেন। শিলংয়ে জেরার মুখোমুখি হলেও তিনি আসল সব প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন। অতএব তাঁকে গ্রেফতারির অনুমতি দেওয়া হোক। উল্টো দিকে রাজ্য পুলিশের যুক্তি ছিল, কোনও ভাবেই এই অনুমতি বা স্বাধীনতা দেওয়া চলবে না।

আজ সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে বলেছে, ‘আমরা এই যুক্তি যথেষ্ট জোরালো বলে মনে করছি যে, আদালত অবমাননার মামলায় আমরা ঠিক করতে পারি না যে, রাজীব কুমারকে হেফাজতে নিয়ে জেরার জন্য গ্রেফতার করা উচিত কি না। বস্তুত, সিবিআই এবং কেন্দ্রীয় সরকারও এই আইনি অবস্থান মেনে নিয়ে বলেছে যে, তাদের আর্জি হল, শুধু মাত্র ফেব্রুয়ারি মাসে দেওয়া রক্ষাকবচ তুলে নেওয়া।’ সেই আর্জিতেই সায় দিয়েছেন বিচারপতিরা। আদালত অবমাননার মামলার শুনানি এর পরেও চলবে। রাজ্যের আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব বলেন, ‘‘এতে সিবিআই বা কেন্দ্রীয় সরকারের উৎফুল্ল হওয়ার কোনও কারণ নেই।’’

সুপ্রিম কোর্ট আজ সিবিআই বনাম রাজীব কুমারের বিবাদের মাঝখান থেকে কার্যত সরে দাঁড়িয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আক্ষেপ, সিবিআই বনাম রাজ্য পুলিশের দ্বন্দ্ব মেটাতেই তাঁরা রাজীবকে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে রাজীবকে সিবিআই গ্রেফতার করতে পারবে না বলেও নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রচেষ্টায় কাজ হল না।

একই সঙ্গে সিবিআই ও রাজ্য পুলিশের বিবাদের কড়া সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘আমরা দুঃখের সঙ্গে বলছি, আদালতের পরামর্শ ও নির্দেশ সত্ত্বেও সিবিআই এবং রাজ্য পুলিশের রেষারেষি বেড়েছে। তা যে কমেনি, সেটা দুই পক্ষের অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ থেকেই স্পষ্ট। সিবিআই ও রাজ্য পুলিশের এই বিবাদ দেখে আমরা হতাশ। তারা ভুলে গিয়েছে, পুলিশের প্রাথমিক কাজ হল, অপরাধের তদন্ত করা, প্রমাণ জোগাড় করা, অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া। পরিস্থিতি খুবই খারাপ, কারণ দু’পক্ষই আরও অনড় অবস্থান নিয়েছে। দেশের দুই পুলিশ বাহিনীর এই দ্বন্দ্ব মেটানোর, এ হেন পরিস্থিতি এড়ানোর বা সমাধান করার কোনও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেই। এর ভুক্তভোগী হলেন ছোট শহর ও গ্রামের লক্ষ লক্ষ অপেক্ষমান আমানতকারী, যাঁদের সঞ্চয়ের অর্থ লুঠ হয়েছে।’

Rajeev Kumar Supreme Court CBI Election Commission Saradha TMC BJP Partha Chatterje
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy