Advertisement
E-Paper

ফোন করে কি ঘুম ভাঙাতে হবে, দলে প্রশ্ন সম্পাদকের

ডাক শুনে কেউ যদি না-ই আসে, তবে একলা চলতে বলে গিয়েছিলেন কবি। কিন্তু সংসদীয় রাজনীতি ঠিক একা একা বেরিয়ে পড়ার বস্তু নয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২৯

ডাক শুনে কেউ যদি না-ই আসে, তবে একলা চলতে বলে গিয়েছিলেন কবি। কিন্তু সংসদীয় রাজনীতি ঠিক একা একা বেরিয়ে পড়ার বস্তু নয়। তাই বার বার ডেকে সাড়া না পেয়েও আহ্বানটা ধরে রেখেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। বাইরে নয়, তাঁর আহ্বান দলের জন্যই।

দেশ ও দশের জীবনে নানা ঘটনা ঘটে চলেছে। কিন্তু সিপিএমের দুয়ার এঁটে ঘুম যেন আর ভাঙছে না! বারংবার বৈঠক করে দলের নেতারা পথে নামার বার্তা দিচ্ছেন। কিন্তু পরের বৈঠক পর্যন্ত পরিস্থিতির কোনও হেরফের ঘটছে না। এই অনন্ত নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধেই এ বার রাজ্য কমিটির অন্দরে উষ্মা প্রকাশ করলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। তির্যক সুরে তিনি যে প্রশ্ন তুলেছেন, প্রায় তার মানে দাঁড়ায়— এ বার কি এলাকায় এলাকায় নেতা-কর্মীদের ফোনে অ্যালার্ম বাজিয়ে ঘুম ভাঙাতে হবে?

প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে বৃহস্পতিবার দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি প্রথমে ব্যাখ্যা করেছেন, সঙ্ঘ পরিবার তথা বিজেপি কী ভাবে দেশ জুড়ে বিপদ ডেকে আনছে। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মোকাবিলায় ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তিকে একজোট করার চেষ্টার কথাও ফের বলেছেন তিনি। তার পরেই রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবু বুঝিয়েছেন, এ রাজ্যে তাঁদের লড়াই জোড়া বিপদের বিরুদ্ধে। এক দিকে শাসক দল তৃণমূল নিকেশের রাজনীতি করছে। টাকা-পয়সা, প্রলোভন দিয়ে বিরোধীদের দল ভাঙানো হচ্ছে। নয়তো মিথ্যা মামলায় বিরোধীদের ‘ফাঁসিয়ে’ দেওয়া হচ্ছে। অন্য দিকে, জেলায় জেলায় গেরুয়া শিবিরের তৎপরতা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। স্থানীয় স্তরে এলাকা ভিত্তিতে উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে। এই জোড়া প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করার জন্য সংগঠনের সক্রিয় হওয়া দরকার। কিন্তু গোল বেধেছে সেখানেই!

সিপিএম সূত্রের খবর, বিভিন্ন ঘটনার পরে দলের তরফে প্রতিক্রিয়া যে মোটেও ঠিকমতো হচ্ছে না, তা নিয়ে এ দিন উদ্বেগ এবং ক্ষোভ গোপন করেননি সূর্যবাবু। বলেছেন, রাজ্য কমিটি এবং আরও নানা বৈঠকে বহু বার আলোচনা করেও লাভ হয়নি। সাম্প্রতিক উৎসবের মরসুমে রাজ্যে নানা এলাকায় যে উত্তেজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেখানেও এক হাজিনগর-নৈহাটি ছাড়া কোথাও দলের কর্মীদের রাস্তায় বেরিয়ে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি। তৃণমূলকে রুখতে এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মোকাবিলায় পথে নামা জরুরি। এ বার তেমন হলে এলাকার পার্টি কেন্দ্রে নেতৃত্ব স্থানীয় কর্মীদের নম্বর হাতের কাছে রেখে তাঁদের ফোন করে সক্রিয় করতে হবে— এমন কথাও বলতে হয়েছে রাজ্য সম্পাদককে! দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘তৃণমূল আর বিজেপি বোঝাপড়া করে মেরুকরণের রাজনীতিতে বাকিদের অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে চাইছে। বসে বসে দেখলে যে চলবে না, এই বার্তাই দলের সর্বস্তরে দিতে চাওয়া হচ্ছে।’’

সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সঙ্গে এঁটে ওঠার জন্যই সংখ্যালঘুদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলাদা করে সরব হতেও চাইছে সিপিএম। সংখ্যালঘুদের নানা মঞ্চ, বিদ্বজ্জন বা সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এই কাজ করার জন্য তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিমকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে

৬ ডিসেম্বর বাবরি ধ্বংসের দিন চোখে পড়ার মতো কর্মসূচি নেওয়ার ভারও দেওয়া হয়েছে এই সংখ্যালঘু সাব কমিটিকে।

রাজ্য কমিটিতে শমীক লাহিড়ীর মতো কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, তৃণমূল সন্ত্রাস করছে ঠিকই। কিন্তু দলটা নিজেই যেন সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে বেশি! জীবেশ সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উত্তরবঙ্গে গেরুয়া বাহিনীর রমরমা বেড়ে যাওয়া নিয়ে। আবার সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেছেন, সামাজিক উৎসবে যোগ দেওয়া নিয়ে বাধা থাকা উচিত নয়। কিন্তু কারও ব্যক্তিগত প্রচারের জন্য এই ধরনের কাজকে ‘ব্যবহার’ করাও ঠিক নয়। শাসক শিবিরের সঙ্গে যোগসাজশ রাখার দায়ে বর্ধমানের নেতা আইনুল হককে যে ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজ্য কমিটির জনাকয়েক সদস্য। সূর্যবাবু জবাবি ভাষণে জানিয়েছেন, আইনুল কার সঙ্গে কী ভাবে যোগাযোগ রাখছিলেন, সেই ব্যাপারে বর্ধমান জেলা কমিটি যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করার

পরেই রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী বহিষ্কারে সায় দিয়েছে। প্রসঙ্গত, বর্ধমানের আইনুল এবং উত্তর ২৪ পরগনার বরানগরের রঞ্জিত দাসের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত এ দিনই রাজ্য কমিটিতে অনুমোদিত হয়েছে। তবে এ সব ছাপিয়ে উদ্বেগ রয়ে গিয়েছে পথে নামার দেরিতেই!

Surjya Kanta Mishra CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy