পাঁচ বছর আগে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম দেখেছিল সম্মুখ সমর। আগামী বছর ভবানীপুরও কি তা-ই দেখবে?
বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্য রাজনীতিতে ‘হাই ভোল্টেজ’ জল্পনা উস্কে দিচ্ছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপির নানা মঞ্চ থেকে তিনি নিয়মিত বলে চলেছেন, ‘‘আগে নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়েছি। এ বার ভবানীপুরে হারাব!’’ তাঁর এই দাবি কি ভোটের আগে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে কথার কথা? নাকি সত্যিই সলতে পাকানো চলছে? ঘনিষ্ঠ মহলে বিরোধী দলনেতা বলছেন, ভবানীপুরের লড়াইয়ের জন্য তিনি প্রস্তুত! অমিত শাহ-সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অনুমোদন দিলে ভবানীপুরে প্রার্থী হতে তাঁর আপত্তি নেই। সে ক্ষেত্রে গত বার তৃণমূল নেত্রী মমতা নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর মাঠে খেলতে গিয়েছিলেন। এ বার উল্টো ছবি দেখা যেতে পারে! তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য মনে করছে, ভবানীপুরে মুখ্যমন্ত্রীর জয় নিশ্চিত হয়ে আছে। বিজেপি নেতারা যা করছেন, সবই প্রচারে থাকার লক্ষ্যে!
দক্ষিণ কলকাতার বিধানসভা আসন নিয়ে প্রশ্নে শুভেন্দু বলছেন, ‘‘ভবানীপুরে হারাব যখন বলছি, ভেবে-চিন্তেই বলছি! দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যা বলবেন, তা-ই হবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বিজেপিতে একার ইচ্ছায় কিছু করা যায় না। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিষয়টা দেখবেন। যদি এমন পরিস্থিতি হয়, ব্যত্তিগত ভাবে আমি হয়তো প্রার্থী হলাম না, তা হলেও ভবানীপুরে জোরদার প্রার্থীই দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রীকে কোনও ভাবেই ময়দান ছেড়ে দেওয়া যাবে না! দেখতে পাবেন!’’ সেই লক্ষ্য মাথায় রেখেই ভবানীপুরে কর্মসূচি সাজিয়ে চলেছে বিজেপি।
ভবানীপুর কেন্দ্রে গত কয়েকটি নির্বাচনেই কলকাতার অন্যান্য অনেক জায়গার তুলনায় ভাল ফল করেছে বিজেপি। শুভেন্দুদের অঙ্ক, দক্ষিণ কলকাতার ওই কেন্দ্রে গুজরাতি, শিখ, বিহারি, ওড়িয়া-সহ অ-বাঙালি ভোট আছে ভাল পরিমাণে। এই রকম পরিস্থিতিতে ভবানীপুরে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘ঘিরে ফেলা’ সম্ভব। তবে ভবানীপুরে দু’টি ওয়ার্ড থেকে তৃণমূল সচরাচর যা ‘লিড’ পায়, তাতেই তারা জয় নিশ্চিত করে ফেলে। সে ক্ষেত্রে জোরদার টক্কর দিতে হলে নন্দীগ্রামের মতো ভবানীপুরেও তীব্র মেরুকরণের হাওয়া তৈরি করতে হবে বিজেপিকে। তবে নন্দীগ্রাম গ্রামীণ আসন। ভবানীপুর পুরোদস্তুর শহুরে। তার উপরে মমতা তথা তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি দক্ষিণ কলকাতায়!
তৃণমূলে থাকাকালীন তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ-পদে ইস্তফা দিয়ে নন্দীগ্রাম থেকে বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছিলেন শুভেন্দু। বিজেপিতে গিয়ে সেই আসন থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে হারিয়েছেন ২০২১ সালে। ধারাবাহিক ভাবে নন্দীগ্রামের পরিচর্যা করেছেন। সেই আসন ছেড়ে বিরোধী দলনেতা ভবানীপুরের মতো জায়গায় আসতে যাবেন কেন? শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, রাজ্যে ২০২৬-এর ভোটকে তাঁরা যে ‘মরণ বাঁচনের লড়াই’ হিসেবে দেখছেন, সেই বার্তা জনমানসে দিতে চান। তার জন্য প্রয়োজনে বিজেপি শিবিরের সেনাপতি হিসেবে শুভেন্দুই শাসক শিবিরের সর্বাধিনায়িকার বিরুদ্ধে ময়দানে নেমে যেতে তৈরি!
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য বলছেন, ‘‘কেন্দ্রের নাম ভবানীপুর, প্রার্থীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানে আর কোনও প্রশ্নই আসে না! তার উপরে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারের কাজ রয়েছে। বিজেপির যিনি ওখানে দাঁড়াবেন, একই হাল হবে! মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্র, তাই প্রচারে থাকার জন্য ওঁরা নানা কথা বলছেন!’’
শুভেন্দুও অন্য দিকে ২০২৬-এর জন্য তাঁদের অঙ্ক সাজিয়ে তৈরি। তাঁদের যুক্তি, রাজ্যে ২০১৯, ২০২১ ও ২০২৪ সালের তিনটে সাধারণ নির্বাচন ধরলে বিজেপি মোটামুটি ৩৯-৪০% ভোট পাচ্ছে। গত বছর লোকসভা নির্বাচনে দু’কোটি ৩০ লক্ষ ২৭ হাজার ভোট ছিল (আসন কমলেও)। ছক উল্টোতে গেলে বিজেপিকে আরও ১৫-২০ লক্ষ ভোট বাড়াতে হবে। বিরোধী দলনেতার কথায়, ‘‘তার জন্য যা যা করতে হয়, আমরা করব!’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)