Advertisement
E-Paper

এ বার বাঙালি প্রধানমন্ত্রী, ৪২-এ ৪২, শাহের পাল্টা সভায় হুঙ্কার শুভেন্দুর

বিজেপির দাবি, তিন জনকেই খুন করা হয়েছে। তাঁদের ‘শহিদ’ আখ্যা দিয়েছে বিজেপি। পুরুলিয়ার শিমুলিয়া ময়দানে অমিত শাহের জনসভার পোশাকি নামটাও ছিল ‘শহিদ স্মরণ সভা’।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৮ ১৯:৫১
পুরুলিয়ার সভায় শুভেন্দু অধিকারী।- নিজস্ব চিত্র।

পুরুলিয়ার সভায় শুভেন্দু অধিকারী।- নিজস্ব চিত্র।

তিন দিনের মাথায় চ্যালেঞ্জ বিজেপি-কে। চ্যালেঞ্জ সরাসরি অমিত শাহকে। পুরুলিয়ার যে মাঠে শুক্রবার সভা করে গিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, সেই মাঠেই রবিবার সভা হল তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে। মিথ্যাচারের উপরে দাঁড়িয়ে সভা করেছেন অমিত শাহ— বললেন শুভেন্দু। কোন স্লোগানে ভর করে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ঝাঁপাতে চলেছে তৃণমূল, তার স্পষ্ট আভাস দিয়ে শুভেন্দু বললেন, বাঙালি প্রধানমন্ত্রী চাই, ৪২-এ ৪২ তাই।

পঞ্চায়েত ভোটের আগে জগন্নাথ টুডু, পঞ্চায়েত ভোটের পরে ত্রিলোচন মাহাত, দুলাল কুমার— তিন বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে নির্বাচনী মরসুমে। তৃণমূল বলেছে, জগন্নাথের মৃত্যু দুর্ঘটনায়, আর দুলাল কুমার আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু বিজেপির দাবি, তিন জনকেই খুন করা হয়েছে। তাঁদের ‘শহিদ’ আখ্যা দিয়েছে বিজেপি। পুরুলিয়ার শিমুলিয়া ময়দানে অমিত শাহের জনসভার পোশাকি নামটাও ছিল ‘শহিদ স্মরণ সভা’।

পঞ্চায়েত ভোটে পুরুলিয়ায় তৃণমূলকে বেজায় অস্বস্তিতে ফেলেছে বিজেপি। তার পরে দুই বিজেপি কর্মীর মৃত্যুতে পুরুলিয়ার রাজনীতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এমনই এক পরিস্থিতিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জনসভা করেন পুরুলিয়ায়। সভা সফল করতে যে বিজেপির তরফে যে সর্বশক্তি প্রয়োগ করা হবে, তা রাজনৈতিক শিবিরের জানাই ছিল। সভার ভিড় সাফল্যের ইঙ্গিতও দিয়ে দিয়েছিল। শুক্রমার শিমুলিয়া ময়দানে অমিত শাহের সভা উপলক্ষে যে পরিমাণ জমায়েত হয়েছিল, কোনও জেলায় ততটা বড় রাজনৈতিক সমাবেশ কমই হয়।

আরও পড়ুন- রাম-লক্ষ্মণ নয়, উন্নয়নের মুখ দেখতে চায় নতুন প্রজন্ম​

পুরুলিয়ার সভায় শুভেন্দু অধিকারী। -নিজস্ব চিত্র।

অমিত শাহের সভার শেষে স্বাভাবিক ভাবেই হসি চওড়া হয়েছিল রাজ্য বিজেপির। কিন্তু সে দিন থেকেই চ্যালেঞ্জ ছোড়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল তৃণমূল এবং জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ওই শিমুলিয়া মাঠেই পাল্টা সভা হবে।

রবিবার পাল্টা সভা হল। বেলা ৩টে নাগাদ সভা শুরু হল। নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের বাইরেও জঙ্গলমহলে তৃণমূলের সংগঠন গড়ে তোলার পিছনে অন্যতম বড় ভূমিকা যে নেতার, সেই শুভেন্দু অধিকারীই ছিলেন এ দিনের কর্মসূচির মূল আকর্ষণ এবং নেতা। জমায়েতের সামনে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু অধিকারী এ দিন বললেন, ‘‘আগের দিন এই মাঠে বিজেপির যে সভা হয়েছিল, সেটা বিহার-ঝাড়খণ্ডের সভা ছিল।’’ প্রতিবেশী রাজ্য থকে লোক এনে অমিত শাহের মাঠ ভরিয়েছিল বিজেপি, দাবি করেন শুভেন্দু। তৃণমূল বাইরে থেকে লোক না এনেই বিজেপি-র চেয়ে অনেক বেশি ভিড় জমিয়ে দিয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

আরও পড়ুন- রাজস্থানে অনুগত বসাতে ব্যর্থ অমিত​

অনেকটা অমিত শাহের ভঙ্গিতেই যেন এ দিন ভাষণ শুরু করেন শুভেন্দু। মাথার দু’পাশে মুষ্টিবদ্ধ দুই হাত— অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘ভারত মাতা কি জয়’, শুভেন্দু অধিকারী বললেন, ‘বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও’। কণ্ঠস্বরে সমান আগুন। পুরুলিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহের সমস্যা রয়েছে, পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে— বলেছিলেন অমিত শাহ। কেন্দ্র ২ টাকা কিলো দরে চাল দিচ্ছে, এ রাজ্যে মানুষ তা পাচ্ছেন না— এমন অভিযোগও করেছিলেন বিজেপি সভাপতি। তৃণমূলের দাপুটে নেতা সোমবার সে সব অভিযোগ নস্যাৎ করলেন। পানীয় জল, বিদ্যুৎ বা স্বল্প মূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়ার প্রশ্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার কী কী পদক্ষেপ করেছে, তা বিশদে ব্যাখ্যা করলেন। সেই প্রসঙ্গেই শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘মিথ্যাচারের উপরে দাঁড়িয়ে ভারতীয় জনতা পার্টি তাদের ফাইভ স্টার নেতাকে এনে সভা করেছে।’’

শুভেন্দু অধিকারী ছাড়া এ দিনের সভায় ছিলেন ববি হাকিম, শশী পাঁজা। ছিলেন পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাত, ছিলেন আর এক মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু।

ববি এবং শশীও নিজের নিজের ভাষণে বিজেপি-কে, অমিত শাহকে, নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন। তৃণমূল বাংলার ক্ষমতায় আসার আগে জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি কেমন ছিল, এখন পরিস্থিতি কেমন, প্রত্যেকেই তার তুলনা তুলে ধরেন। অমিত শাহ কিছুই না জেনে জঙ্গলমহল নিয়ে কথা বলতে এসেছেন বলে তাঁরা কটাক্ষ করেন।

শুভেন্দু অধিকারীই অবশ্য ছিলেন সভার শেষ বক্তা। নিজের ভাষণের শেষ দিকে পৌঁছে শুভেন্দু এ দিন আভাস দিয়ে দেন যে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কী আওয়াজ তুলতে চলেছে তৃণমূল। শুভেন্দু এ দিন বলেন, ‘‘২০১৯ সালে দিল্লিতে বাঙালি প্রধানমন্ত্রী চাই, তাই ৪২-এ ৪২।’’ শুভেন্দুর এই মন্তব্যও আসলে অমিত শাহের প্রতিই চ্যালেঞ্জ। এ রাজ্যে থেকে ২২টির বেশি লোকসভা আসনে জিতবে বিজেপি, বলে গিয়েছেন অমিত। শুভেন্দু প্রথমে বলেন, ‘‘ও সব অর্ধেকের বেশি আসন-টাসন গল্প... এত সহজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরানো যাবে না।’’ আর ভাষণের শেষ দিকে পৌঁছে আভাস দেন, ২০১৯ সালে এ রাজ্যের সবক’টি লোকসভা আসনে জয়ের লক্ষ্য নিয়ে ঝাঁপাবে তৃণমূল।

শিমুলিয়া ময়দানে যে সভা এ দিন হয়েছে, তা ‘দুদিনের নোটিসে ছোট্ট শক্তি’ প্রদর্শন— দাবি রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রীর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও পুরুলিয়ায় সভা করবেন এবং তা আরও অনেক বড় সভা হবে বলে শুভেন্দু এ দিন হুঙ্কার শুনিয়েছেন।

Shuvendu Adhikari TMC BJP Amit Shah শুভেন্দু অধিকারী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy