ভোটার তালিকার বিশেষ আমূল সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লাগাতার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলছে তৃণমূল কংগ্রেস। এ বার তালিকায় কারচুপির পরিকল্পনা চলছে বলে রাজ্যের শাসক দলের দিকে পাল্টা আঙুল তুলল বিজেপি।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী শনিবার অভিযোগ করেছেন, ভোটার তালিকা যাচাইয়ে তৃণমূলের দলীয় পদাধিকারীদের নিয়োগ করা হচ্ছে। ডায়মন্ড হারবার বিধানসভা কেন্দ্রের ৮৭ নম্বর পার্টে বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) হিসেবে নিযুক্ত আলাউদ্দিন মোল্লা নামে এক জনের সম্পর্কে শুভেন্দু দাবি করেছেন, ওই ব্যক্তি ডায়মন্ড হারবারের সরিষা অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি। আলাউদ্দিনের স্ত্রী লায়লা বিবি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তৃণমূলের পদাধিকারী হিসেবে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আলাউদ্দিন দলীয় প্রতীক ও দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে ছবি ব্যবহার করেছেন, তা-ও প্রকাশ করেছেন শুভেন্দু। এই প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বিরোধী নেতা বলেছেন, ‘তৃণমূলের পক্ষে কাজ করার জন্য রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত যে ব্যক্তিদের বিএলও হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁদের চিহ্নিত করে বাদ দেওয়া হোক, যাতে তাঁরা ভোটার তালিকায় কারচুপি করার সুযোগ না-পান।’ সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক পদে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে বিজেপির রাজনৈতিক সম্পর্কের পাল্টা অভিযোগ করেছে তৃণমূলও। একাধিক ‘সম্পর্কের’ কথা উল্লেখ করে তৃণমূল বলেছে, ‘শুভেন্দুর যুক্তি অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির উচিত, এখনই বিভিন্ন হাই কোর্ট ও সাংবিধানিক পদে থাকা বিজেপির লোকেদের সরিয়ে দেওয়া।’
এসআইআর-প্রক্রিয়া এবং বিজেপিকে পাল্টা নিশানা করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, “১৯৮৭ থেকে ২০০৪-এর মধ্যে যাঁদের জন্ম, তাঁদের বাবার জন্ম-শংসাপত্র দিতে হবে। ’৮৭ সালে যাঁর জন্ম, তাঁর এখন ৩৭-৩৮ বছর বয়স। তাঁর বাবা-মায়ের বয়স কত হবে? তাঁদের জন্ম-শংসাপত্র আসবে কোথা থেকে? আর অন্যকে অবৈধ বলার আগে নিজেদের অবৈধ বলুন। গদি ছাড়ুন। ১ কোটি ২০ লক্ষ বাদ যাবে বলছে। কী করে জানল? বাংলায় এই সব হবে না।”
এসআইআর-এর নাম করে, জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) যে অভিযোগ বিরোধীরা তুলছে, তা-ও এ দিন উড়িয়ে দিয়েছেন শুভেন্দু। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে দলীয় সভা থেকে তাঁর বক্তব্য, “যাঁরা অনুপ্রবেশকারী নন, তাঁদের চিন্তা নেই। বাম আমলে, ২০০২-এ এসআইআর-এর ফলে ২৬ লক্ষ নাম বাদ পড়েছিল। নাগরিকত্বের সঙ্গে এসআইআর-এর সম্পর্ক নেই। যাঁরা ভারতীয় নন, তাঁদের নাম থাকবে-না। রাজ্যে এসআইআর নিয়ে বিশেষ শিবির হবে। তাতে শুধু বিজেপি নয়, বিভিন্ন রাষ্ট্রবাদী সংগঠন থাকবে।” সভা থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারও বলেছেন, “যে সব ভারতীয় মুসলিমদের নাম ২০০২-এর তালিকায় ছিল, তাঁরা কোনও ভাবেই বাদ যাবেন-না। যদি কোনও হিন্দুর নাম না-থাকে, বিশেষ নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে তাঁকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের এখানে থাকতে দেওয়া হবে-না।”
তৃণমূল ও বিজেপি, দু’পক্ষকেই নিশানা করেছে সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, “কমিশন চাইছে, গরিব মানুষের নাম যাতে তালিকা থেকে বাদ যায়। এ দিকে, আরএসএস-এর পন্থায় বিজেপি ও তৃণমূল চলে। মৃত মানুষদের তালিকায় রেখে দিতে তৃণমূল এবং প্রকৃত ভোটারদের নাম কেটে দিতে বিজেপি বিএলও-দের উপরে চাপ তৈরি করছে।”
পাশাপাশি, এসআইআর-কে সামনে রেখে সরব হয়েছে বিভিন্ন নাগরিক ও গণ-সংগঠনও। এসআইআর বাতিল চেয়ে এ দিন এপিডিআর, নো এনআরসি মুভমেন্ট, আইএফটিইউ-সহ ১৬টি সংগঠনের ডাকে কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এসআইআর-এর নামে এনআরসি-র তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ তুলে রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এপিডিআর-এর রঞ্জিত শূর। এর সঙ্গেই এসআইআর নিয়ে জনসাধারণকে সতর্ক করতে দুই বর্ধমান, দুই ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, মালদহ-সহ রাজ্যের সব জেলায় জনসভা করবে বলে জানিয়েছে জমিয়তে উলামা। এসআইআর-এর নথির নাম করে হয়রান করা হলে প্রতিরোধ হবে বলেও রাজ্য জমিয়তের নবগঠিত ওয়ার্কিং কমিটির অধিবেশনে প্রস্তাব পাশ হয়েছে। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর অভিযোগ, “এনআরসি সামনে রেখে এসআইআর-এর মুগুর দিয়ে ভোটারদের দুরমুশ করা হবে। ভোটার তালিকা ও নাগরিকত্বের নামে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরির মনোভাব নিয়ে চলছে নির্বাচন কমিশন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)