Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Sweta Chakraborty

মামা-ভাগ্নি পরিচয় থেকে অয়নের টাকায় গাড়ি! আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের মুখে শ্বেতা

ইডির একটি সূত্রের দাবি, অয়নের বাড়ি এবং অফিস থেকে প্রাপ্ত একাধিক নথিতে শ্বেতার নাম রয়েছে। তাঁর নামে একটি গাড়ি কেনা এবং সম্পত্তি হাতবদলের নথিও রয়েছে সেখানে।

Sweta Chakraborty talks about her relationship with businessman Ayan Sil, arrested  in recruitment scam and about the document found with her name

আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলার সময় শ্বেতা জানান, তিনি অয়নের ‘ঘনিষ্ঠ’ নন। নিজস্ব চিত্র।

সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৩ ১৭:০৯
Share: Save:

—অয়নের টাকায় গাড়ি কিনেছিলেন?

—হ্যাঁ, কিন্তু...

—অয়নের অ্যাকাউন্ট থেকে আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা গিয়েছিল?

—হ্যাঁ, কিন্তু...

—আপনারা কি মামা-ভাগ্নি বলে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন?

—না।

নিয়োগকাণ্ডে ধৃত অয়ন শীলের বাড়ি এবং অফিস থেকে পাওয়া নথিপত্রে নাম মেলার পর থেকে কৌতূহল বাড়ছে যাঁদের নিয়ে, তাঁদেরই এক জন শ্বেতা চক্রবর্তী। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। মডেলিং, অভিনয় জগতেও কাজ করেন। চাকরি করেন কামারহাটি পুরসভায়। তাঁকে ঘিরে অনেকগুলো কী, কেন-র উত্তর পেতে যোগাযোগের চেষ্টা করছিল আনন্দবাজার অনলাইন। পাওয়া গেল বুধবার। নিউ টাউনের রাস্তায় গাড়িতে বসেই তিনি মুখোমুখি হলেন আনন্দবাজার অনলাইনের একের পর এক প্রশ্নের।

এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর একটি সূত্রের দাবি, অয়নের বাড়ি এবং অফিস থেকে প্রাপ্ত একাধিক নথিতে তাঁর নাম রয়েছে। সেই সব নথি কী করে পৌঁছল? গাড়িই বা কার নামে কেনা? শ্বেতা বললেন, ‘‘অয়নের প্রযোজনা সংস্থার ‘কাবাড্ডি কাবাড্ডি’ ছবিতে কাজ করার সুবাদে বাকি কলাকুশলীদের মতো আমিও ওঁর সল্টলেকের অফিসে গিয়েছি। আমি সিনেমা করেছিলাম কিন্তু কোনও পারিশ্রমিক নিইনি। তার পরিবর্তে উনি আমাকে হন্ডা সিটি গাড়িটি ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলার সময় শ্বেতা জানান, তিনি অয়নের ‘ঘনিষ্ঠ’ নন। কর্মসূত্রেই তাঁকে চেনেন। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া কুন্তল ঘোষ বা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কেও তিনি চেনেন না বলে দাবি করেছেন শ্বেতা। তাঁর কথায়, ‘‘অয়নের সঙ্গে পরিচয় ২০১৬-১৭ নাগাদ। আমরা একসঙ্গে ডুমুরডহ গ্রাম পঞ্চায়েতে কাজ করেছিলাম। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ওই পঞ্চায়েতে কাজ করছিলাম আমি। তখনই অয়নের সঙ্গে পরিচয়।’’

তবে পরে তিনি অয়নের প্রযোজনা সংস্থাতেও কাজ করেন বলে জানিয়েছেন শ্বেতা। তাঁর দাবি, তিনি আগে মডেল হিসাবে কাজ করতেন। সেই সূত্রেই অল্পবিস্তর অভিনয় করেছিলেন অয়নের প্রযোজনা সংস্থার কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতে। এর পর ওই প্রযোজনা সংস্থার একটি পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি ‘কাবাড্ডি কাবাড্ডি’তে কাজও করেছিলেন তিনি। সেই ছবির পরিচালনা করেছিলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। অভিনয় করেছিলেন ঋত্বিক চক্রবর্তী এবং সোহিনী সরকার। ওই ছবিতেই পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শ্বেতা। যদিও তাঁর দাবি, ওই সিনেমাতে তিনি সুযোগ পেয়েছিলেন, কারণ ছবির পরিচালকই শ্বেতাকে পছন্দ করেছিলেন। এতে অয়নের কোনও হাত নেই।

ইডির একটি সূত্রের দাবি, অয়নের বাড়ি এবং অফিস থেকে প্রাপ্ত একাধিক নথিতে শ্বেতার নাম রয়েছে। তাঁর নামে একটি গাড়ি কেনা এবং সম্পত্তি হাতবদলের নথিও রয়েছে সেখানে। পাওয়া গিয়েছে শ্বেতার নামে থাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্যও। শ্বেতার জবাব, ‘‘অয়নের প্রযোজনা সংস্থার ‘কাবাড্ডি কাবাড্ডি’ সিনেমা করে কোনও পারিশ্রমিক নিইনি। তার পরিবর্তে উনি আমাকে হন্ডা সিটি গাড়িটি ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন। সেই গাড়ির এগ্রিমেন্ট হয়েছিল কি না মনে নেই। তবে গাড়ি আমার নামে কেনা নয়। সম্পত্তি হাতবদলের যে নথি পাওয়া গিয়েছে তা-ও আমার নয়। এ রকম কোনও কাগজে আমার সই নেই। ওঁর (অয়নের) অফিস থেকে কী নথি পাওয়া গিয়েছে, তা আমি কী করে বলব?’’

শ্বেতার দাবি, তিনি চুঁচুড়ার জগুদাসপাড়ার আবাসনের একটি ফ্ল্যাট অয়নের কাছ থেকে কিনবেন বলে ঠিক করেছিলেন। ফ্ল্যাট কেনার টাকাও তিনি অয়নকে দিয়েছিলেন। ফ্ল্যাট কেনার সময় তিনি ওই টাকা নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে অয়নের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছিলেন। সেই সূত্রেই তাঁর ব্যাঙ্কের নথি অয়নের অফিস থেকে পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন শ্বেতা। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, যে ফ্ল্যাট কিনবেন বলে তিনি অয়নকে টাকা দিয়েছিলেন, তা তিনি শেষ পর্যন্ত তিনি কেনেননি। তবে কিছু দিন সেখানে ছিলেন। শ্বেতার কথায়, ‘‘আমার ব্যাঙ্কের তথ্য ওঁর কাছে কী করে গেল, বলতে পারব না। তবে আমি টাকা দিয়ে ওঁর কাছে চুঁচুড়ার জগুদাসপাড়ায় ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। সেই এগ্রিমেন্ট আছে। পরবর্তী কালে সেই ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রি আমি করিনি। উনি আমাকে টাকা ফেরত দিয়ে দেন। ছেড়ে দিয়েছিলাম ফ্ল্যাটটা।’’

ঘটনাচক্রে ওই ফ্ল্যাট যে আবাসনে রয়েছে, সেই আবাসনের বাসিন্দাদের দাবি, অয়ন এবং শ্বেতা ওই ফ্ল্যাটে মামা-ভাগ্নি পরিচয় দিয়ে একসঙ্গে থাকতেন। যদিও শ্বেতার দাবি, ‘সহকর্মী’ পরিচয় ছাড়া অয়নের সঙ্গে তাঁর আর কোনও সম্পর্ক ছিল না। এক ফ্ল্যাটে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে থাকার ঘটনাও মিথ্যা।

অয়নের বাড়ি এবং অফিস থেকে পুরসভার নিয়োগ সংক্রান্ত যে নথি পাওয়া গিয়েছে তাতে কামারহাটি পুরসভার নথিও রয়েছে। ঘটনাচক্রে শ্বেতা বর্তমানে কামারহাটি পুরসভাতেই সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করেন। যদিও শ্বেতার দাবি তাঁর নিয়োগ হয়েছিল বৈধ পদ্ধতিতেই। তাঁর ‘সহকর্মী’র নাম নিয়োগ দুর্নীতিতে থাকা সত্ত্বেও তাঁর কোনও ভয় নেই বলেও দাবি করেছেন শ্বেতা। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ২০১৪ থেকে চাকরি করছি। সম্পূর্ণ বৈধ ভাবে চাকরি পেয়েছি। আমার কোনও ভয় নেই। আমার কাছে সমস্ত নথি রয়েছে।’’ পাশাপাশি, অয়নের বাড়ি থেকে প্রাপ্ত নথিতে নাম রয়েছে বলেও তাঁর কোনও ভয় নেই বলেই দাবি করেছেন তিনি। এমনকি, অয়ন যে নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িয়ে তা-ও তিনি জানতেন না বলে দাবি করেছেন শ্বেতা। অয়ন তাঁকে কখনও দুর্নীতিতে যোগ দিতে বলেননি বলেও শ্বেতার দাবি।

কুন্তলের কাছ থেকে গাড়ি কেনার টাকা নিয়েছিলেন বলে ইডির জিজ্ঞাসাবাদের পর টাকা ফেরত দিয়েছেন অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত। তাঁকেও টাকা ফেরত দিতে বলা হলে বা তলব করা হলে তিনি কী করবেন? শ্বেতার স্পষ্ট জবাব, ‘‘যদি কিছু প্রমাণ হয় এবং ইডি কিছু বলে, তা হলে আমি টাকা-গাড়ি ফেরত দেব। এখনও বিষয়টি বিচারাধীন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE