কালীপুজোর উদ্বোধনে তন্ময় ভট্টাচার্য। ছবি ফেসবুক থেকে।
সময় বদলেছে। বদলেছে সিপিএমও। কিন্তু বদলায়নি চোখের অভ্যাস! তাই কালী পুজোর উদ্বোধনে এ বার সিপিএম বিধায়ককে দেখে কটাক্ষে নামল বিজেপি। এবং সিপিএম নেতৃত্ব দাঁড়ালেন বিধায়কের পাশেই।
উত্তর দমদমের সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য তাঁর এলাকায় একটি কালীপুজো উদ্বোধনের আমন্ত্রণ স্বীকার করেছিলেন। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। ফিরে এসেছে সেই পুরনো প্রশ্ন— কমিউনিস্ট হলে কি পুজোয় যাওয়া যায়? কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, তা হলে সুভাষ চক্রবর্তী তারাপীঠে বিগ্রহের সামনে তন্ময় হয়ে দাঁড়িয়ে কী দোষ করেছিলেন? কেন তাঁকে দলীয় নেতৃত্বের ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছিল?
তন্ময়বাবু অবশ্য পুজোয় অংশ নেননি। উদ্বোধন করেছেন শুধু। কিন্তু রাজ্যে তিন কেন্দ্রে উপনির্বাচন যখন দোরগোড়ায়, সেই সময়ে বিজেপি সিপিএমের ‘দ্বিচারিতা’ আবিষ্কারের এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি! রাজ্য বিজেপির নেতা ও অন্যতম মুখপাত্র কৃশানু মিত্র যেমন প্রশ্ন তুলছেন, কালী মূর্তির সামনে তন্ময়বাবুর ছবি কি সত্যি না জাল? বিজেপি-র সমর্থক মহলের একাংশ আরও এগিয়ে প্রচার করছেন, সিপিএমের এখন রূপান্তর হয়েছে! সিপিএম নেতারা এ বার আর মার্ক্সে নেই, মা কালীতে আছেন! যদি কালী পুজোয় যাওয়া যায়, তা হলে এ বঙ্গের কমিউনিস্টরা বাংলাদেশে হিন্দুদের উপরে নিপীড়ন নিয়ে মুখ খোলেন না কেন, তা নিয়েও সরব গেরুয়াপন্থীরা!
এর আগে দলের অনুমতি না নিয়ে কংগ্রেসের মিছিলে যোগ দিয়ে বিতর্ক বাধিয়েছিলেন তন্ময়বাবু। দলের তরফে তাঁকে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। কালী-কাণ্ডে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য ভিন্ন অবস্থান নেননি। এক মাস আগেই কলকাতায় দলের রাজ্য প্লেনামে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল, সামাজিক উৎসবে-অনুষ্ঠানে দলের কর্মীদের আরও বেশি করে যোগ দিতে হবে। উৎসবের সঙ্গে যে হেতু বহু মানুষের যোগ থাকে, তাই তার মাধ্যমে জনসংযোগ ভাল হয়। বিপদে-উৎসবে পাশে থাকার চিরায়ত মন্ত্র মনে রাখলে রাজনীতিতে মন্দ হয় না! উৎসবে যোগ দেওয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে ধর্মাচরণের যে সম্পর্ক নেই, তা-ও ইদানীং মনে করাচ্ছে সিপিএম। দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নেপালদেব ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘ধর্মীয় আচারে বিশ্বাসী না হয়ে অ়ঞ্জলি দিলে সেটা পাপ। কিন্তু পুজো উদ্বোধনে পাপ নেই! পুজোর সঙ্গে যে অসংখ্য মানুষ যুক্ত থাকেন, তাঁদের সঙ্গে থাকাটাও দরকার। আগামী দিনে আরও বেশি, বেশি করে এ সবের সঙ্গে থাকতে হবে।’’ তন্ময়বাবু ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তিনি পুজোয় নয়, উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন। বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী এই অবসরে ধর্ম ও উৎসব পালনের ফারাক মনে করিয়ে বলছেন, ‘‘ব্যক্তিগত বিশ্বাস কারও থাকতেই পারে। কিন্তু নেতৃত্ব স্থানীয় কমরেডদের কাছে এটা আশা করব, ঐশ্বরিক কোনও শক্তির উপরে বিশ্বাস না করে প্রকৃতি ও মানুষের উপরে বিশ্বাস রাখবেন।’’
বস্তুত, নয়ের দশকে সুভাষ-পর্ব যখন ঘটেছিল, তার সঙ্গে এখনকার সিপিএমের তফাত বিস্তর। জ্যোতি বসুকে সেই সময়ে বলতে হয়েছিল, ‘‘সুভাষের বোধহয় মৃত্যুভয় হয়েছে!’’ এখন, বিশেষত ক্ষমতা হারানোর পরে, ধর্মের সঙ্গে গুলিয়ে না ফেলে উৎসবে এক দিকে জড়িয়ে যেতে চাইছে সিপিএম। তাই ইদ বা শারদোৎসবে শুভেচ্ছা জানিয়ে কার্ড বিলি করছেন সিপিএম নেতারা। লাগানো হচ্ছে শুভেচ্ছা-বার্তার ব্যানার-ফ্লেক্স। অন্য দিকে আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার মতো নেতা দলের সম্মতি নিয়ে হজে যেতে পেরেছেন। ব্যক্তিগত স্তরে ধর্মবিশ্বাসকেও সেখানে আলাদা রাখার চেষ্টা হয়েছে।
সময় বদলেছে। বদলেছে সিপিএমও!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy