Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Jadavpur

যাদবপুরের যক্ষ্মা হাসপাতাল চলে যাচ্ছে বারুইপুর

করোনা চিকিৎসা বন্ধ হতে চলেছে এমআর বাঙুর হাসপাতালে।

ছবি সংগৃহীত।

ছবি সংগৃহীত।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:১২
Share: Save:

শুধু যে প্রাণ কাড়ছে, তা নয়। শুধু যে মৃত্যুভীতি জাগিয়ে তুলছে, তা-ও নয়। একই সঙ্গে চিকিৎসা পরিকাঠামোতেও ধাক্কা দিচ্ছে করোনা। তার জেরে যাদবপুরের কেএস রায় যক্ষ্মা হাসপাতালে যক্ষ্মারই চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নতুন বছরে ১৩০টি শয্যা নিয়ে কেএস রায় পুরোদস্তুর কোভিড হাসপাতাল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। সেখানকার যক্ষ্মা নিরাময়ের পুরো পরিকাঠামো সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বারুইপুরে। অন্য দিকে, করোনা চিকিৎসা বন্ধ হতে চলেছে এমআর বাঙুর হাসপাতালে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সদর হাসপাতাল হিসেবে সেখানে আবার সব রোগের চিকিৎসা শুরু হয়ে যাবে অচিরেই।

রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বাঙুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলা হাসপাতালে অন্য রোগের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা, এমনকি দক্ষিণ কলকাতার একটা বড়় অংশে পরিষেবা দিতে খুবই সমস্যা হচ্ছিল। ভয়ঙ্কর ভাবে চাপ বেড়ে গিয়েছিল এসএসকেএমের উপরে। তাতে রোগী-প্রত্যাখ্যানের হারও বেড়ে গিয়েছিল। তাই শুরু হয় বিকল্পের খোঁজ। যাদবপুরে বড় ছড়ানো চত্বরে রয়েছে কেএস রায় যক্ষ্মা হাসপাতাল। তারই খানিকটা জমিতে গড়ে উঠেছে কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ।

স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, যক্ষ্মার নতুন চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগীকে একটানা সাত দিনের বেশি হাসপাতালে থাকতে হয় না। বাকি চিকিৎসা চলে বাড়িতেই। ফলে কেএস রায় যক্ষ্মা হাসপাতালের বিশাল পরিকাঠামোর যথাযথ ব্যবহার হচ্ছিল না। তাই বাঙুর থেকে কোভিড হাসপাতাল কেএস রায়ে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই মর্মে ২১ ডিসেম্বর রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছেন। ‘‘বাঙুর কোভিডের জন্য আটকে থাকায় খুবই সমস্যা হচ্ছিল। কোভিডের চিকিৎসা কেএস রায় হাসপাতালে সরিয়ে আনা হলে সাধারণ মানুষের খুব সুবিধা হবে,’’ বলেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কেএস রায়কে দক্ষিণ কলকাতার এবং বেলেঘাটার আইডি-কে উত্তর কলকাতার ‘কোভিড নোডাল হাসপাতাল’ করা হবে। কেএস রায় কোভিড হাসপাতালের ১৩০টি শয্যার মধ্যে ৪০টি নিয়ে গড়ে উঠবে ‘হাই ডিপেন্ডেন্সি ওয়ার্ড’ (এইচডিইউ)।

প্রশ্ন উঠছে, যক্ষ্মা চিকিৎসার যে-পরিকাঠামো কেএস রায় হাসপাতালে আছে, তার কী হবে? সেটা কি পুরোপুরি উঠে যাবে? স্বাস্থ্য দফতরের খবর, সেখানকার যক্ষ্মা চিকিৎসার গোটা পরিকাঠামোই স্থানান্তরিত হচ্ছে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালের একটি ভবনের একতলায়। সেখানে ১২টি শয্যা থাকবে। চলবে যক্ষ্মার ডে কেয়ার এবং বহির্বিভাগ। কোনও ভাবে যাতে সংক্রমণ না-ছড়ায়, সেই জন্য এটিকে হাসপাতালের অন্য অংশ থেকে একেবারে আলাদা রাখা হবে। কেএস রায়ের সব চিকিৎসক, নার্স ও অন্য কর্মীদের বারুইপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাদবপুরের কোভিড হাসপাতালের জন্য নতুন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মী নিয়োগ করা হবে।

কেএস রায় যক্ষ্মা হাসপাতাল ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য-জেলা, পূর্ব মেদিনীপুর ও নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য-জেলার যক্ষ্মা কেন্দ্র। অর্থাৎ ওই সব জায়গার রোগীরা ওখানে ভর্তি হতেন। চিকিৎসার জন্য এ বার তাঁদের বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালের যক্ষ্মা কেন্দ্রে যেতে হবে। ‘‘বারুইপুরে যে-যক্ষ্মা হাসপাতাল চালু হচ্ছে, যক্ষ্মা চিকিৎসার ক্ষেত্রে সেটাকে আমরা ‘সেন্টার অব এক্সেলেন্স’ বা উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছি। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছি,’’ বলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা সোমনাথ মুখোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jadavpur Baruipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE