Advertisement
০৬ মে ২০২৪

দুষ্কৃতী ঢুকিয়ে তাণ্ডব, নেপথ্যে ‘স্যার’

ঘটনার কথা কানে গিয়েছে রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্রের। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষকের এ ধরনের আচরণ মেনে নেওয়া হবে না। উপযুক্ত তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

অভিযুক্ত শিক্ষক অমিয় কুমার

অভিযুক্ত শিক্ষক অমিয় কুমার

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৭ ০২:৫৭
Share: Save:

তখন পুরোদমে চলছে ক্লাস। তার মধ্যেই নিরাপত্তা কর্মীকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে গেট খুলিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে দাপাল মোটরবাইকে চড়ে আসা এক দল দুষ্কৃতী। এক হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ধরা দুষ্কৃতীদের চড়-থাপ্পড় পড়ল ছাত্রছাত্রীদের গালে, পিঠে। রেহাই পেলেন না শিক্ষাকর্মীরা। এই কাণ্ডের নেপথ্যে কিনা সেখানকারই এক শিক্ষক! কারণ, তিনি এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত। এ যেন তাঁর ‘বদলা’ নেওয়া!

কোনও শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ ভাবে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসে ‘মদত’ দেওয়ার অভিযোগ বেনজির। মঙ্গলবার সেই অভিযোগই উঠল রাজ্য কারিগরি শিক্ষা দফতরের অধীনস্থ চুঁচুড়ার হুগলি আইটিআই-তে। প্রায় আধ ঘণ্টা ওই ‘হামলা’র পরে দুষ্কৃতীদের সঙ্গেই শিক্ষাঙ্গন ছাড়েন অমিয় কুমার নামে ‘ইলেট্রিক্যাল’ বিভাগের চুক্তিভিত্তিক ওই শিক্ষক। গোলমালের কথা শুনে সেখানে পুলিশ যায়।

অমিয়বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ঘটনার সময়ে আইটিআই-তে ছিলেন না সুপার প্রণব দত্ত। পরে তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। প্রণববাবু বলেন, ‘‘পুলিশ ব্যবস্থা নিক। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও তদন্ত করা হচ্ছে।’’ চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার পীযূষ পাণ্ডে বলেন, ‘‘আমি পুলিশকে ওই ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’

ঘটনার কথা কানে গিয়েছে রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্রের। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষকের এ ধরনের আচরণ মেনে নেওয়া হবে না। উপযুক্ত তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আইটিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, অমিয়বাবু গত ১৭ জুলাই ‘ইলেকট্রিক্যাল’ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। আগেও কয়েক জন ছাত্রীকে তিনি নানা কুপ্রস্তাব দেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। ওই বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা একজোট হয়ে সুপারের কাছে অমিয়বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। থানাতেও অভিযোগ হয়। আইটিআই কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে অমিয়বাবুকে শোকজ করেন। রাজ্য কারিগরি শিক্ষা দফতরকেও বিষয়টি জানানো হয়। অমিয়বাবু এখনও শোকজের জবাব দেননি। কিন্তু অভিযোগ করার জন্য কয়েকদিন ধরেই তিনি ওই বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের নানা ভাবে হেনস্থা এবং প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। এ দিন ক্লাসেও তিনি তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দেন বলে অভিযোগ। তার পরে হঠাৎই ক্লাস থেকে বেরিয়ে ফোনে দুষ্কৃতীদের ডাকেন বলে ছাত্রছাত্রীদের দাবি। তার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই সাতটি মোটরবাইকে ১৫ জন দুষ্কৃতী সেখানে ঢোকে। নিরাপত্তারক্ষী দিবাকর সিংহ বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা অমিয়বাবুর নাম বলে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গেট খোলায়। তার পরে ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে ছাত্রদের মারধর করে। বাধা দিলে গুলি করার হুমকি দেয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE