Advertisement
০৪ মে ২০২৪
school

School Drop Out: স্কুলছুটদের ফেরাতে ঘরে ঘরে শিক্ষকেরা

স্কুল খুলতে এমনই স্কুলছুটের ঘটনা সামনে আসায় উদ্বিগ্ন ফরাক্কার এক হাই মাদ্রাসার শিক্ষকেরা।

ফরাক্কায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে স্কুলছুটদের ফেরানোর উদ্যোগ শিক্ষকদের।

ফরাক্কায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে স্কুলছুটদের ফেরানোর উদ্যোগ শিক্ষকদের। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২১ ০৭:২৩
Share: Save:

করোনা পরিস্থিতিতে গত দেড় বছরে ১৪ জন ছাত্রী বিয়ে হয়ে চলে গিয়েছে শ্বশুরবাড়ি। ২১ জন ছাত্র ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়েছে বাবা, দাদার সঙ্গে। স্কুল খুলতে এমনই স্কুলছুটের ঘটনা সামনে আসায় উদ্বিগ্ন ফরাক্কার এক হাই মাদ্রাসার শিক্ষকেরা। শুধু তাই নয়, ভিন্ রাজ্যে কাজে যাওয়া ছাত্রের পরিবার থেকে প্রধান শিক্ষককে কার্যত জানিয়েও দেওয়া হয়েছে, আর স্কুলে যাবে না তারা। গত সপ্তাহে স্কুল খোলার পর থেকে তাদের ক্লাসে টানা অনুপস্থিতি দেখে ভুরু কুঁচকেছিলেন শিক্ষকেরা। তাদের খোঁজেই গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরতে গিয়েই এই চিত্র সামনে আসে নুর জাহানারা হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক জানে আলমের।

পড়ুয়াদের সন্ধানে বটতলা, মুস্কিলনগর, শিবতলা, মহেশপুর, এনায়েত নগর, মমরেজপুর, মহাদেব নগর গ্রামগুলি ঘুরে বেরিয়েছেন শিক্ষকেরা। ক’দিন আগেও বোমা, গুলির সংঘর্ষ ছিল এই এলাকার নিত্য দিনের ঘটনা। তটস্থ পুলিশ প্রশাসন গ্রাম সামলাতে বসিয়েছিল পুলিশ ক্যাম্পও। স্কুল সূত্রে খবর, ২০১৭ সালে ৮০ জন কিশোর স্কুলছুট হয়ে যায়। তাদের ফের ভর্তি করানো হয় স্কুলে। যাদের অধিকাংশেরই তখন বয়স পেরিয়েছে। পরের বছর ১৪০ জন স্কুলছুট ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে আসা গিয়েছে স্কুলে। স্কুলের ছাত্র সংখ্যা এখন ৯৫৪। ছাত্রের সংখ্যা যত বেড়েছে, গ্রামে বোমা ও দুষ্কৃতী তাণ্ডব তত কমেছে। তার পরেই নেমে এল করোনার থাবা। দীর্ঘদিন স্কুলে তালা।

জানে আলম বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার দেখে কেন তারা স্কুল আসছে না, তা খোঁজ নিতে বের হই। একে একে অনুপস্থিত ছাত্রদের বাড়ি গিয়ে দেখি, বেশির ভাগই বাড়িতে নেই। ছাত্রীদের কারও বিয়ে হয়ে গিয়েছে। অনেক বোঝানোর পরে অনেককে স্কুলে ফেরানোর প্রতিশ্রুতি পেয়েছি।’’ তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষার হার বাড়লে গ্রামে শান্তিও যে ফিরবে, সে কথা বোঝানো হয়েছে।’’

পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির জয়পুর হাই স্কুলের শিক্ষকদের একটি দল শনিবার গিয়েছিল জনজাতি অধ্যুষিত গ্রাম দুর্গারামপুরে। স্কুলছুটদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা জানতে পারেন, অনেক ছেলেই চাষের কাজে মাঠে যায়। তাই স্কুলে যাওয়া বন্ধ। জয়পুর হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘অনেক পড়ুয়াই এখনও স্কুলে আসছে না। এটা খুবই উদ্বেগের। স্কুলে না এসে তারা চাষের কাজে চলে যাচ্ছে।’’ প্রধান শিক্ষক জুড়ছেন, ‘‘আমরা গ্রামে গ্রামে যাচ্ছি। ওই পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। ছেলেদের স্কুলে পাঠাতে বলছি। এ জন্য শিক্ষকদের নিয়ে একাধিক দল গঠন করেছি।’’

স্কুলছুটদের ফেরাতে নিজেদের মতো করে উদ্যোগী হয়েছে স্কুলগুলি। কোথাও শিক্ষকেরা দল বেঁধে গ্রামে যাচ্ছেন। অভিভাবকদের বোঝাচ্ছেন। কোথাও অভিভাবক সভা ডাকা হচ্ছে। কোথাও মাইকে প্রচার করেও অভিভাবকদের সচেতন করা হচ্ছে। শালবনির মৌপাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসূনকুমার পড়িয়া বলেন, ‘‘আমরা স্কুলে অভিভাবক সভা করেছি। অভিভাবকদের বুঝিয়েছি।’’ শালবনির ভাদুতলা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরী বলেন, ‘‘যে সব পড়ুয়া স্কুলে আসছে না, তারা কেন আসছে না, খোঁজখবর নিয়েছি। ওই পড়ুয়ারা যাতে স্কুলে ফেরে, সে জন্য মাইকে প্রচারও চালানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

school Covid 19 Drop out
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE