Advertisement
E-Paper

টানা পাঁচটি নববর্ষে শীতের মেজাজ গরম কেন

ঠান্ডা মাথার মানুষ ক্বচিৎ-কদাচিৎ ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেও রাগ পড়ার পরে তিনি আবার সেই মাটির মানুষ। কিন্তু ২০১৭-কে ধরে একটানা পাঁচ বছর ইংরেজি নববর্ষে শীতের মেজাজ চড়েই আছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৯
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ঠান্ডা মাথার মানুষকেও হঠাৎ হঠাৎ রেগে আগুন হয়ে উঠতে দেখা যায়। স্বভাব-শীতল শীতও কি চরিত্রবিরুদ্ধ উষ্ণতারই উপাসক হয়ে উঠছে? বদলে ফেলতে চাইছে নিজেকেই?

গত কয়েক বছরের পয়লা জানুয়ারির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এমনই প্রশ্ন তুলছেন অনেক আবহবিদ ও পরিবেশবিজ্ঞানী। তাঁরা বলছেন, গত চারটি ইংরেজি বছরের প্রথম দিনেই কলকাতায় রাতের তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের উপরে। ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি তো মহানগরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি। সোমবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫.৩ ডিগ্রি, স্বাভাবিকের থেকে দু’ডিগ্রি বেশি। অথচ শীতকালে রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে থাকাটাই দস্তুর। তাতেই শীতকে শীত বলে চেনা যায়।

ঠান্ডা মাথার মানুষ ক্বচিৎ-কদাচিৎ ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেও রাগ পড়ার পরে তিনি আবার সেই মাটির মানুষ। কিন্তু ২০১৭-কে ধরে একটানা পাঁচ বছর ইংরেজি নববর্ষে শীতের মেজাজ চড়েই আছে। তার উত্তাপের এই অস্বাভাবিক স্থায়িত্বটাই ভাবাচ্ছে আবহবিদদের।

শীতের চরিত্র বদলে যাচ্ছে কেন?

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে সাগরের জলতল গরম হয়ে ওঠা এবং তার জেরে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা চলছে বিশ্ব জুড়ে। বহু আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী জানাচ্ছেন, সাগরের জল যত গরম হবে, ততই ঘূর্ণাবর্ত-নিম্নচাপ দানা বাঁধবে। তার ফলে শুধু শীত নয়, সামগ্রিক ভাবেই বদলে যাবে ঋতুচক্রের মেজাজমর্জি। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই একের পর এক নিম্নচাপ-ঘূর্ণাবর্তের চক্করে শীত এ বার মুখ থুবড়ে পড়েছে।

এ দিনও সকাল থেকে শীতের ঝকঝকে রোদ, মেঘমুক্ত আকাশ মেলেনি। মেঘলা আবহাওয়ায় দিনের বেলা তাপমাত্রা কম থাকলেও রাতে কিছুটা গুমোট ভাব মালুম হয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, বাংলাদেশের উপরে একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। তার প্রভাবেই জলীয় বাষ্প ঢুকে আকাশ মেঘলা হয়েছে। রাতের তাপমাত্রাও বেড়েছে। এমনকী বীরভূম, বাঁকু়ড়ার মতো রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাতেও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে নামেনি! শ্রীনিকেতনে এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাঁকুড়ায় ১২.২ ডিগ্রি।

পৌষে রাতের তাপমাত্রার এমন বৃদ্ধি বেশ কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন অনেক বিজ্ঞানী। সমুদ্রবিজ্ঞানী সুগত হাজরা জানান, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গে গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রার বৃদ্ধি লক্ষ করা যাচ্ছে। এর জন্য বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং বিশেষ করে সাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধিই দায়ী। ‘‘রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং শীতের বদলে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে পরিবেশের সর্বত্রই। বিশেষ করে শীতের ফসল এবং ফুলের পরাগমিলনে ব্যাঘাত ঘটছে,’’ বলছেন সুগতবাবু।

দিল্লির মৌসম ভবনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এ বছর গোটা দেশেই শীতের বেহাল দশা। পশ্চিমি ঝঞ্ঝা (ভূমধ্যসাগর থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা ভারী বায়ুপ্রবাহ) এলেও কাশ্মীরে তেমন জোরালো তুষারপাত হচ্ছে না। সাধারণ ভাবে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার দাপটে বরফ পড়ে আর সেই তুষারপাতের জেরেই জাঁকিয়ে ঠান্ডা প়ড়ে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে। এবং সেই ঠান্ডাই উত্তুরে হাওয়াকে বাহন করে ছড়িয়ে পড়ে কলকাতা-সহ পূর্ব ভারতে। এ বার ভূস্বর্গে জোরদার তুষারপাত হয়নি। অর্থাৎ উৎসমুখেই মার খাচ্ছে শীত। ফলে কলকাতা বা পূর্ব ভারতের অন্য কোথাও তার ধুন্ধুমার ব্যাটিং দেখা যাচ্ছে না।

এ বার মরসুমের গোড়া থেকেই শীতের ফিরে আসার আশ্বাস দিয়েছে হাওয়া অফিস। কিন্তু বারে বারেই সেই পূর্বাভাসকে ধোঁকা দিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে শীত। হাওয়া অফিস এ দিনও জানায়, আজ, ঘূর্ণাবর্তটি সরে গেলে মঙ্গলবার থেকে আকাশ পরিষ্কার হবে। চলতি সপ্তাহেই কলকাতার রাতের তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে। আবহবিদেরা জানান, জানুয়ারিতে রাতের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি। সেই স্বাভাবিকতা পেরিয়ে পারদ নামলে তবেই না শীত!

এ বার সেটা এখনও দূর অস্ত্‌।

Temperature West Bengal Weather Forecast Winter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy