Advertisement
E-Paper

জঙ্গি ঢুকল বুঝি, সরগরম বসিরহাটের স্কুল

খানিকটা গুজব, খানিকটা স্কুল কর্তৃপক্ষের আগ বাড়ানো ‘সাবধানবাণী’— সব মিলিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে হুলুস্থুল পড়ল বসিরহাটের একটি প্রাথমিক স্কুলে। একটা সময়ে প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান ছেলেমেয়েদের বাড়ির লোকজন।

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৩৯
অভিভাবকদের শান্ত করছেন আইসি। নিজস্ব চিত্র।

অভিভাবকদের শান্ত করছেন আইসি। নিজস্ব চিত্র।

খানিকটা গুজব, খানিকটা স্কুল কর্তৃপক্ষের আগ বাড়ানো ‘সাবধানবাণী’— সব মিলিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে হুলুস্থুল পড়ল বসিরহাটের একটি প্রাথমিক স্কুলে। একটা সময়ে প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান ছেলেমেয়েদের বাড়ির লোকজন। পুলিশকে আসতে হয় ঘটনাস্থলে।

কী ছিল গুজব?

পড়ুয়াদের অপহরণ করতে জঙ্গিরা ঢুকে পড়েছে স্কুলে।

কেন ছড়াল এমন কথা?

রজনীকান্ত প্রাথমিক স্কুলের কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, স্কুল শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিকের কাছ থেকে তাঁরা খবর পেয়েছিলেন, স্কুলের কিছু পড়ুয়াকে অপহরণ করতে পারে জঙ্গিরা। সোমবার কিছু অভিভাবককে ডেকে সে কথা জানিয়ে দেন প্রধান শিক্ষক চপলকুমার মণ্ডল। জানিয়ে দেওয়া হয়, অভিভাবকেরা যেন মঙ্গলবার সকলে নিজেরা হাজির থেকে ছেলেমেয়েদের স্কুল থেকে নিয়ে যান।

এ দিন সকালে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয় নিমেষে। নানা জল্পনা আর গুজব দানা বাঁধে। অভিভাবকদের হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। রেললাইন ধরে স্কুলের দিকে পড়িমড়ি দৌড়তে গিয়ে দুই মহিলার ট্রেনে কাটার পড়ার হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান বলে স্থানীয় সূত্রের খবর।

বসিরহাট থানার আইসি গৌতম মিত্র বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলে জঙ্গি ঢুকে পড়েছে বলে খবর ছড়ায়। আমরাও রীতিমতো চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। স্কুলে এসে জানতে পারি, প্রধান শিক্ষক অভিভাবকদের সাবধান করে জানিয়ে দিয়েছেন, স্কুলের পাঁচ ছাত্রকে জঙ্গিরা অপহরণ করতে পারে। প্রধান শিক্ষকের কাছে এমন ভয়ঙ্কর খবর কে দিলেন, কেনই বা তা পুলিশ-প্রশাসনকে না জানিয়ে অভিভাবকদের আগেভাগে বলে দেওয়া হল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

পুলিশ ও স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, মাসখানেক আগে বসিরহাট পূর্বচক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরে এক বৈঠকে হাজির ছিলেন সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক চপলবাবু। তাঁর দাবি, ওই সভায় শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক তাঁদের সাবধান করে দিয়ে বলেন, ‘উপর মহল’ থেকে জরুরি বার্তায় বলা হয়েছে, সীমান্ত এলাকায় জঙ্গি ঢুকে পড়েছে। তারা কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে অপহরণ করতে পারে। সে কথাই সোমবার শিশু শ্রেণির অভিভাকদের বলেছিলেন প্রধান শিক্ষক।

স্কুলটিতেও পড়ুয়ার সংখ্যা ২৮৯ জন। শিক্ষক-শিক্ষিকা ৬ জন। স্কুল চত্বরে ভিড় করে থাকা অভিভাবকদের মধ্যে সাগরিকা দাস, অর্পিতা দে বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষক বলেছিলেন, জঙ্গি হামলার ভয় আছে। সাবধানের মার নেই। তাই বাচ্চাদের সঙ্গে করে আনবেন এবং ছুটির পরে একা ছাড়বেন না। সেই খবর পেয়েই আতঙ্ক ছড়ায়। পরে বুঝলাম, বেশির ভাগটাই গুজব।’’

চপলবাবু বলেন, ‘‘কিছু দিন আগে এস আই দফতরে এক বৈঠকে এক আধিকারিক আমাদের সাবধান করে দিয়ে জানান, জঙ্গিরা ঢুকে পড়েছে। পড়ুয়া অপহরণের ছক আছে তাদের। তাই অভিভাবকদের সাবধান করেছিলাম। কিন্তু এই পরিস্থিতি তৈরি হবে বুঝতে পারেনি।’’

কিন্তু প্রশ্ন হল, জঙ্গি অনুপ্রবেশের খবর তিনি পেয়ে থাকলেও পুলিশ-প্রশাসনকে জানাননি কেন? মাসখানেক আগে খবর জানতে পেরেও এত দিন কী করছিলেন? খবরের সত্য যাচাইয়ের অন্য চেষ্টা করলেন না কেন? স্রেফ মৌখিক তথ্যের ভিত্তিতে কী করে এমন স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলতে গেলেন?

কোনও কিছুরই স্পষ্ট উত্তর নেই প্রধান শিক্ষকের কাছে।

বসিরহাট পূর্বচক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরের আধিকারিক শৈলেশ পাল বলেন, ‘‘জঙ্গি নিয়ে একটি সতর্ক বার্তা এসেছিল উপর মহল থেকে। তবে সে কথা কাউকে বলা হয়নি। দফতরের কেউ হয় তো ই-মেল দেখে চপলবাবুকে তা জানান। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষক কেন এ ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে সরাসরি কথা না বলে আগেই অভিভাবকদের জানাতে গেলেন, তা বুঝে উঠতে পারছি না।’’

জেলা শিক্ষা দফতরের একটি সূত্রের খবর, ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে খবর আসে, রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকার কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাশকতামূলক হামলার নিশানা হতে পারে। সেই সতর্কতা যায় বিকাশভবনে। সেখান থেকেই জেলা হয়ে খবর যায় বসিরহাটে। কিন্তু সে কথা কী ভাবে স্কুল পর্যন্ত পৌঁছল, তা ভাবাচ্ছে জেলা শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদেরও। কেন্দ্র সতর্কবার্তার কপি চেয়েছে বসিরহাট পুলিশ।

terrorist Basirhat school
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy