Advertisement
E-Paper

শাঁখা-নোয়া খুলে পরীক্ষা, বিক্ষোভ

বেথুন কলেজেও প্রাথমিক টেট কেন্দ্রের দরজা থেকে প্রথমে ফিরিয়ে দেওয়া হয় দুই পরীক্ষার্থীকে। তাঁদের ‘অপরাধ’, পরীক্ষাকক্ষে ঢোকার আগে কিছুতেই হাতের সোনা দিয়ে বাঁধানো শাঁখা-পলা, চুড়ি খুলতে পারছিলেন না তাঁরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৩৬
নিয়ম-মেনে: পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকার আগে এক পরীক্ষার্থীর নাকছাবি খুলে নেওয়া হচ্ছে। রবিবার তমলুকে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস

নিয়ম-মেনে: পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকার আগে এক পরীক্ষার্থীর নাকছাবি খুলে নেওয়া হচ্ছে। রবিবার তমলুকে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস

পরীক্ষাকক্ষে ঢোকার আগে রবিবার বর্ধমানের রাজ কলেজে এক মহিলা পরীক্ষার্থীকে তাঁর লোহার বালা খুলে রাখতে বলা হয়েছিল। তিনি রাজি না-হওয়ায় তাঁকে টেট কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরীক্ষা না-দিয়ে টেট কেন্দ্র ছেড়ে চলে যান তিনি।

বেথুন কলেজেও প্রাথমিক টেট কেন্দ্রের দরজা থেকে প্রথমে ফিরিয়ে দেওয়া হয় দুই পরীক্ষার্থীকে। তাঁদের ‘অপরাধ’, পরীক্ষাকক্ষে ঢোকার আগে কিছুতেই হাতের সোনা দিয়ে বাঁধানো শাঁখা-পলা, চুড়ি খুলতে পারছিলেন না তাঁরা। হাতে টাইট হয়ে বসে গিয়েছে ওই সব এয়োতি-চিহ্ন, অলঙ্কার। তাঁদের মায়েরা অনেক চেষ্টাচরিত্র করেও সেগুলি খুলতে না-পারায় প্রথম দফায় ফিরিয়ে দেওয়া হয় দুই পরীক্ষার্থীকে। অনেক টানাটানি করে শাঁখা, পলা, চুড়ি খুলে তাঁরা ফের হাজির হন গেটে। দু’জনেই বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, যুদ্ধ করতে যাচ্ছি!’’ শেষ পর্যন্ত শিক্ষকপদে যোগ্যতা নির্ধারণের পরীক্ষা দিতে পেরেছেন দু’জনেই।

কিন্তু পরীক্ষা কেন্দ্রের ফাঁকফোকর বোজানোর নামে গয়না বা শাঁখা পরে ঢোকার উপরে নিষেধাজ্ঞা কেন, সেই প্রশ্নের উত্তর অধরা থেকে গিয়েছে। দুল, নথ, শাঁখা-পলা পরে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকা যাবে না— এমন নির্দেশ ঘিরে গোলমাল বাধে বিভিন্ন জায়গায়। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ দেখান পরীক্ষার্থীরা। কিছু পরীক্ষার্থীর প্রশ্ন, ‘‘সোনার দুল বা নথ কাজে লাগিয়ে কি আমি কোনও কারচুপি করব?’’

বিদ্রোহের সুরে এক শাশুড়ি মা যাদবপুর বিদ্যাপীঠের সামনে পরীক্ষার্থীকে বললেন, ‘‘বৌমা, তুমি শাঁখা-পলা খুলবে না।’’ কিন্তু পরীক্ষা কেন্দ্রে কর্তব্যরত ব্যক্তি জানান, শাঁখা-পলা না-খুললে ঢোকাই যাবে না। অগত্যা নিমরাজি হলেন শাশুড়ি।

হিন্দু স্কুলে এক পরীক্ষার্থী প্রশ্ন তোলেন, তিনি একা এসেছেন। কার কাছে রাখবেন সোনার বালা, সোনা বাঁধানো শাঁখা-নোয়া? শেষে অন্য এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবকের কাছে স্বর্ণালঙ্কার রেখে পরীক্ষা দেন তিনি। আলিপুরদুয়ারের একটি কেন্দ্রে এক মহিলার স্বামী গয়না খোলানোর প্রতিবাদ করেন। পুলিশ তাঁকে আটক করে। পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। শাঁখা-পলা খোলার নির্দেশ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ।

ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে না-দেওয়ায় বীরভূমের বোলপুরে রাস্তা অবরোধ করেন পরীক্ষার্থীদের একাংশ। দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট কলেজেও এই নিয়ে বচসা বাধে। মুর্শিদাবাদের নওদাপাড়ায় তেলের ট্যাঙ্কার উল্টে যাওয়ায় সকাল ৯টা পর্যন্ত অচল ছিল বহরমপুর। ডোমকলের শিবনগরের রবিউল ইসলাম হাঁটতে পারেন না। তিনি গাড়ি ভাড়া করে পরীক্ষা দিতে এসে বহরমপুরে যানজটে আটকে পড়েন। হুইলচেয়ারে অনেকটা পথ নিয়ে যাওয়ার পরে পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি।

পূর্ব মেদিনীপুরে নন্দকুমার-দিঘা জাতীয় সড়কে যানজটে আটকে পড়েন কিছু পরীক্ষার্থী। বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানা থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে চাতরা রামাইপণ্ডিত কলেজে যাওয়ার পথে পুলিশের গাড়ির সঙ্গে পিক-আপ ভ্যানের ধাক্কা লাগে। আহত হন দুই পুলিশকর্মী ও স্কুল পরিদর্শক। পুলিশ অন্য গাড়িতে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেয়।

বায়োমেট্রিক যন্ত্র খারাপ থাকায় সমস্যা হয়েছে কিছু কেন্দ্রে। ওই পদ্ধতি ছাড়াই পরীক্ষার্থীদের প্রবেশের অনুমতি দিতে হয় সেই সব জায়গায়। সবং কলেজে এক পরীক্ষার্থীর চারটি রোল নম্বর এবং চারটি ওএমআর শিট ঘিরে শোরগোল পড়ে যায়। শেষে একটিতেই পরীক্ষা দেন তিনি। পৃথক মোবাইল নম্বর দিয়ে চারটি ফর্ম জমা দেওয়ায় এই ঘটনা বলে অনুমান।

শিশুসন্তানকে নিয়ে উলুবেড়িয়া কলেজে পরীক্ষা দিতে হাজির হন ডোমজুড়ের রহিনা মোল্লা। কলেজ চত্বরে শিশুটিকে নিয়ে এক পরিজনের থাকার অনুমতি চেয়েছিলেন তিনি। অনুমতি মেলেনি। তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁর পরিবার। আসানসোলের রিঙ্কু চৌধুরীও শিশুসন্তানকে নিয়ে দুর্গাপুরে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন। কেন্দ্রের বাইরে স্বামীর কাছে সন্তানকে রেখে পরীক্ষা দিতে হয় তাঁকে।

নদিয়ার কল্যাণীতে এক পরীক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে জেএনএম হাসপাতালের জরুরি ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। আরও দু’জন পরীক্ষার্থী সামান্য অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসেন। মাজদিয়াতেও এক পরীক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন।

West Bengal TET 2022 TET Examinations
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy