Advertisement
০৫ মে ২০২৪
West Bengal SSC Scam

কার বেতন পাওয়া উচিত? কার চাকরি যাওয়া উচিত? আদালতে তিন পক্ষের যুক্তি, পাল্টা যুক্তির লড়াই

গ্রুপ ডি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনেরও লড়াই চলল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। মুখোমুখি তিন পক্ষ। এসএসসি, চাকরিহারা এবং যোগ্য প্রার্থীদের কুরুক্ষেত্রে পরিণত হল কোর্ট চত্বর।

গ্রুপ ডি মামলায় ওএমআর শিট বা উত্তরপত্রে কারচুপি করার অভিযোগে স্কুলের ১৯১১ জন গ্রুপ ডি কর্মীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্ট।

গ্রুপ ডি মামলায় ওএমআর শিট বা উত্তরপত্রে কারচুপি করার অভিযোগে স্কুলের ১৯১১ জন গ্রুপ ডি কর্মীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্ট। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:৫২
Share: Save:

গ্রুপ ডি মামলার শুনানিতে আচমকাই ‘মহাভারত’ কলকাতা হাই কোর্ট চত্বরে!

বৃহস্পতিবার ১৯১১ জন গ্রুপ ডি কর্মীর চাকরি বাতিল এবং বেতন ফেরত মামলার শুনানি ছিল হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। সেখানেই মুখোমুখি হয়েছিল তিন পক্ষ— এসএসসি, চাকরিহারা গ্রুপ ডি কর্মী এবং পরীক্ষায় পাশ করেও চাকরি না পাওয়া যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবীরা। ছিল আরও দুই পক্ষ রাজ্য এবং সিবিআই। আত্মপক্ষ সমর্থনে যখন এসএসসি, যোগ্য এবং চাকরিচ্যুতদের ‘যুদ্ধ’ তুঙ্গে, তখন আচমকাই নিজেকে ‘ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির’ বলে দাবি করল নিয়োগ দুর্নীতির ‘কেন্দ্রীয় চরিত্র’ এসএসসি।

ডিভিশন বেঞ্চে তখন চাকরি যাওয়া গ্রুপ ডি প্রার্থীরা বলছিলেন, ‘‘আমরা যদি অপরাধ করিও, তা-ও আইন মেনে বক্তব্য পেশের সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা হয়নি। একক বেঞ্চ সুবিচার থেকে বঞ্চিত করেছে। অন্য দিকে এসএসসিও এখন নিজেদের ভাবমূর্তি ঠিক রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এখন তারা প্রমাণ করতে চাইছে আগের আধিকারিকরা ভুল ছিলেন। ফলে তারা আমাদের কথা শোনার প্রয়োজন মনে করছে না।’’ অভিযুক্তদের এই বক্তব্য শুনেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী বলেন, ‘‘এত দিন ধরে মামলা চলছে চাকরিপ্রার্থীরা তো আগেও কোর্টে এসে নিজেদের বক্তব্য জানাতে পারতেন। কিন্তু তা তো তাঁরা করেননি। এখন মামলা হওয়ার পর নিজের কথা বলতে চাইছেন।’’ এর পরই এসএসসির আইনজীবীর সংযোজন, ‘‘ধর্মাবতার আমাদের দেড় বছর লেগেছে যুধিষ্ঠির হতে, আর এখন আমাদের দোষ দেখা হচ্ছে!’’

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম মজুমদারের ডিভিশন বেঞ্চে যখন এসএসসি বনাম চাকরিহারাদের এই বাগ্‌যুদ্ধ চলছে, যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরাও নিজেদের কথা জানান। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁরা বলছেন তাঁদের কথা শোনা হয়নি। কিন্তু এটা বলতে পারছেন না যে তাঁরা চাকরিটা বৈধ ভাবে পেয়েছেন।’’

গ্রুপ ডি মামলায় ওএমআর শিট বা উত্তরপত্রে কারচুপি করার অভিযোগে স্কুলের ১৯১১ জন গ্রুপ ডি কর্মীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। একই সঙ্গে বলেছিলেন, এই কর্মীরা আর স্কুলে ঢুকতে পারবেন না। বেতন হিসাবে যত টাকা পেয়েছেন, তা ফেরত দিতে হবে। এমনকি, চাকরিচ্যুতরা আর কোনও সরকারি চাকরিতেও অংশ নিতে পারবেন না। সেই নির্দেশকেই চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন গ্রুপ ডি কর্মীরা। বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানি ছিল।

বৃহস্পতিবার তিন পক্ষ স্বপক্ষ সমর্থনে আরও অনেক কিছু বলেছেন। চাকরিচ্যুতদের আইনজীবী বলেছেন, ‘‘যে উত্তরপত্রগুলো (ওএমআর শিট) নিয়ে এই সব পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তার গ্রহণযোগ্যতা কোথায়? শুধুমাত্র স্ক্যান করা বৈদ্যুতিন নথির ভিত্তিতে সব পদক্ষেপ করেছে সিঙ্গল বেঞ্চ। এসএসসিও সিবিআইয়ের নথি দেখেই বুঝে গেল, কারচুপি হয়েছে?’’ জবাবে এসএসসি বলে, ‘‘এখন চাকরি যাওয়ার পর এসএসসি-র দিকে দায় ঠেলার কোনও যুক্তি নেই। ২০২১ সাল থেকে মামলা চলছে। ৩০টির বেশি নির্দেশ রয়েছে। আমরা চাইছি আগের ভুল সংশোধন করতে। কোনও দুর্নীতির জন্য প্রতিষ্ঠানের বদনাম হতে পারে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE