Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Tapas Mandal

‘স্যরের নির্দেশ’! টাকা দিতে বলেন তৃণমূলের বিভাস, আনন্দবাজার অনলাইনে ‘মানিক-ঘনিষ্ঠ’ তাপস

তাপসকে আগামী ২০ অক্টোবর তলব করেছে ইডি। তিনি জানান, ১৯ তারিখ দিল্লি থেকে ফিরে ২০ তারিখ ইডি দফতরে হাজিরা দেবেন। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছেন তাপস।

‘মানিক-ঘনিষ্ঠ’ তাপস মুখ খুললেন আনন্দবাজার অনলাইনে।

‘মানিক-ঘনিষ্ঠ’ তাপস মুখ খুললেন আনন্দবাজার অনলাইনে। —ফাইল ছবি

সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২২ ১৮:৩৭
Share: Save:

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়িয়েছে ‘মানিক ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ’ তাপস মণ্ডলের। তাঁর বাড়ি ও একাধিক ডেরায় হানা দিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। দিল্লি থেকে আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে মুখ খুললেন সেই তাপস। দাবি, তৃণমূল নেতা বিভাস অধিকারীর কথাতেই মানিকের ছেলের সংস্থায় টাকা দিয়েছিলেন তিনি।

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত সন্দেহে তাপসকে আগামী ২০ অক্টোবর তলব করেছে ইডি। তিনি জানিয়েছেন, ১৯ তারিখ দিল্লি থেকে ফিরে ২০ তারিখ ইডি দফতরে হাজিরা দেবেন। দুর্নীতির সঙ্গে তাঁর বা তাঁর সংস্থার কোনও যোগ নেই বলেও দাবি করলেন তাপস। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, টাকা দিতে বলা হয়েছিল বলেই তিনি টাকা দিয়েছিলেন।

রাজ্যের ৫৩০টি বেসরকারি বিএড এবং ডিএলএড কলেজের থেকে মানিকের ছেলে শৌভিক ভট্টাচার্যের সংস্থা এককালীন ৫০ হাজার টাকা করে নিয়েছিল বলে অভিযোগ তুলেছে ইডি। সেই সূত্রেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে তাপসকে। নিজের ৩টি কলেজের জন্য মোট দেড় লক্ষ টাকা দিয়েছেন বলে জানান তাপস। কেন টাকা দিতে হল? আনন্দবাজার অনলাইনে তিনি বলেন, ‘‘সব কলেজ টাকা দিয়েছিল। টাকা দিতে বলা হয়েছিল। তাই আমরাও দিয়েছি। বিভাস আমাদের বলেছিল, স্যরের নির্দেশ মতো টাকা দিতে হবে।’’

কিন্তু কে এই স্যর? তা অবশ্য স্পষ্ট করে জানাননি তাপস। যদিও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিকের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল, স্বীকার করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘রাজ্যের ৬৫৪টি কলেজের প্রতিনিধিত্ব করতে হয় আমাদের। স্বাভাবিক ভাবেই মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গে আমার ওঠাবসা ছিল। আমাদের নানা সমস্যা নিয়ে ওঁর কাছে যেতাম। ছাত্র ভর্তি থেকে শুরু করে অনলাইন-অফলাইন ক্লাস, অনুমোদন নিয়ে নানা রকম সমস্যা হত। তখন বোর্ডের কাছে যেতাম।’’

তাপস এ-ও জানান, মহিষবাথানের তাঁর সংস্থার যে দফতরে শনিবার ইডি তল্লাশি চালিয়েছে, কোভিডের সময় সেখানেই ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। টালিগঞ্জের একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে সেই ক্লাসগুলি নেওয়া হচ্ছিল। তখন ক্লাসের জন্য তাপসের অনুরোধে শিক্ষক সরবরাহ করেছিলেন পর্ষদ সভাপতি মানিক। সে সময় প্রায় ৪৫ হাজার পড়ুয়ার জন্য ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তাপস।

মানিকের সঙ্গে পরিচয় থাকলেও তাঁর ছেলে শৌভিকের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না বলে দাবি করেছেন তাপস। তিনি বলেন, ‘‘মানিকবাবুর ছেলের সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। আমাকে বিভাস বলেছিল যে, ওরা একটা সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কোর্স সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। তাই ৫০ হাজার টাকা করে দিতে হবে। আমি তাতে রাজি হই।’’

যাঁর দিকে তাপসের আঙুল, সেই বিভাস অধিকারী আবার উল্টো দাবিই করছেন। আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘‘আমিই টাকা দেওয়ার বিরোধিতা করেছিলাম। বরং সংস্থাকে টাকা দেওয়ার বিষয়টি তাপস সমর্থন করেছিল।’’ বিভাসের দাবি, কলকাতায় কলামন্দিরে হওয়া একটি সভায় ৫০ হাজার টাকা করে নেওয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন তিনি।

৩টি বিএড কলেজ ছাড়াও, তাপসের সংস্থা মিনার্ভা এডুকেশনাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটিও ইডির আতসকাচের নীচে রয়েছে। এই সংস্থার অধীনে ৬ থেকে ৭টি পলিটেকনিক এবং আইটিআই কলেজ রয়েছে বলে জানিয়েছে ইডি। ইডির তলব নিয়ে তাপস বলেন, ‘‘আমাকে কেন ডাকা হয়েছে, জানি না। তবে যে হেতু ডেকেছে, নিশ্চয়ই যাব। ইডিকে সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি দিয়ে দেব। নিয়োগের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই।’’

বস্তুত, মানিক-পুত্র শৌভিকের সংস্থা ‘অ্যাকিওর কনসালটেন্সি সার্ভিস’-এর সঙ্গে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ‘বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর একটি চুক্তি হয় বলে দাবি করেছে ইডি। তাপসের দাবি, ‘‘ওই অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। আমি ‘বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাচিভার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য প্রেসিডেন্ট। শৌভিকের সংস্থার সঙ্গেও এটির কোনও সম্পর্ক নেই।’’

ইডির প্রাথমিক তদন্তে দেখা গিয়েছে, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাস থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে শৌভিকের সংস্থায় ৫৩০টি কলেজ ৫০ হাজার টাকা করে দিয়েছে। তার বিনিময়ে পরিকাঠামো এবং প্রযুক্তিগত সাহায্য দেওয়ার কথা থাকলেও মানিক-পুত্রের সংস্থা থেকে তেমন কোনও সহায়তা মেলেনি বলে ইডির দাবি। সে ক্ষেত্রে অন্য কোনও কারণে এই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি শৌভিকের সংস্থায় অর্থ দিত কি না, তা খতিয়ে দেখতে চাইছেন ইডি আধিকারিকরা। শৌভিকের সংস্থার অ্যাকাউন্টে ২ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকার সন্ধান পেয়েছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tapas Mandal TET Scam Manik Bhattacharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE