—প্রতীকী ছবি।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে আবেদন নেওয়ার জন্য অনলাইন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। কী ভাবে আবেদন জানাতে হবে, তা শেখাতে এ বার বিজেপির তরফে প্রশিক্ষণও শুরু হয়েছে।
বিজেপি সূত্রের দাবি, লোকসভা ভোট চলাকালীনই অনেকে আবেদন জানিয়ে নাগরিকত্বের শংসাপত্র পেয়ে যাবেন। তার প্রভাব সরাসরি রাজ্যের ১৭টি লোকসভা আসনে পড়বে বলে মনে করছেন দলীয় নেতৃত্ব। নদিয়ার রানাঘাট এবং উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ তার অন্যতম।
মতুয়া ও উদ্বাস্তু প্রধান নদিয়া জেলার ছ’জন ইতিমধ্যে সেই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। গত শনিবার বিধাননগরে বিজেপি কার্যালয়ে দলের আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয় সেই প্রশিক্ষণ দেন। রাজ্যের প্রতিটি সাংগঠনিক জেলা থেকে তিন জনকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। সেই তিন জন আবার প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ককে প্রশিক্ষণ দেবেন। তাঁরা আবার মণ্ডল স্তরে আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ককে শেখাবেন। এই ভাবে একেবারে বুথ স্তর পর্যন্ত ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষিত কর্মীরা আবেদনে ইচ্ছুক জনতাকে সাহায্য করবেন।
আবেদন করার ফর্মে জানাতে হবে, আবেদনকারী পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা আফগানিস্তানের কোন এলাকা থেকে এসেছেন এবং তার প্রমাণস্বরূপ উল্লিখিত ন’টি নথির মধ্যে একটি দিতে হবে। বিজেপির ‘সিএএ স্টেট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি’ সূত্রের দাবি, যাঁদের সেই নথি নেই তাঁদের জন্য নতুন ব্যবস্থা হচ্ছে, যেখানে ‘ভবিষ্যতে নথি দেব’ বলে জানালেই চলবে। যাঁদের নথি নেই, তাঁরা স্থানীয় কোনও মন্দিরের পুরোহিত, রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও সারা ভারত মতুয়া মহাসংঙ্ঘের মতো সংগঠনের শংসাপত্রও জমা দিতে পারেন। তাই দিয়েই কাজ চলবে বলে বিজেপি সূত্রের দাবি।
উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়ায় ছড়িয়ে থাকা মতুয়া উদ্বাস্তুদের একটা বড় অংশ অবশ্য মনে করছেন, দীর্ঘদিন তাঁরা এ দেশে বাস করছেন, ভোট দিচ্ছেন, তাঁরা এমনিই নাগরিক। নাগরিকত্ব পেতে তাঁদের নতুন করে আবেদনের প্রয়োজন নেই। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুরের দাবি, “সিএএ-তে আবেদন করা মানেই বেনাগরিক হয়ে যাওয়া। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড বাতিল হবে। সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।”
যদিও বিজেপির সিএএ স্টেট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির সদস্য সৌভিক চক্রবর্তীর দাবি, “নথি না থাকলেও কোনও হিন্দুর নাগরিকত্ব বাতিল হবে না। আইনেই বলা আছে, আবেদনকারীকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।” যাঁদের আধার কার্ড-ভোটার কার্ড সবই আছে, তাঁরা আবেদন জানাতে যাবেন কেন? সৌভিকের বক্তব্য, “আবেদন জানানো বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু পরে নাগরকিত্ব নিয়ে তাঁদের কোনও সমস্যা হলে সরকার দায় নেবে না।” বিরোধীদের দাবি, এই ভাবে ধন্দের কাঁটা রেখে দিচ্ছে বিজেপি।
মতুয়াদের আর এক অংশ আবার অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি, বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের নির্দেশের অপেক্ষায় আছেন। শান্তনু বলেন, “প্রশিক্ষণের পরেই ওঁরা আবেদন করবেন।” কিন্তু নথি না থাকলে প্রশাসনের আধিকারিক বা জনপ্রতিনিধিদের বদলে পুরোহিত বা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো সংগঠনের নেতাদের থেকে কেন শংসাপত্র নিতে হবে, সেই প্রশ্নও উঠছে। তৃণমূলপন্থী সর্বভারতীয় মতুয়া মহাসঙ্ঘের নদিয়া জেলা সভাপতি প্রমথরঞ্জন বসুর প্রশ্ন, ‘‘পুরোহিত বা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতার শংসাপত্রের কী বিশ্বাসযোগ্যতা আছে?’’ তাঁর দাবি, ‘‘এটা একটা বড় কারচুপি। বিজেপি ফাঁদ পাতছে। ভোট মিটে গেলেই বোঝা যাবে। তাই আমরা নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দাবি করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy