দুর্ঘটনায় আহতদের রাস্তা থেকে তুলে যাঁরা হাসপাতালে নিয়ে করান, সেই ‘গুড সামারিটানদের’ কোনও ভাবে হেনস্থা করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এত জিজ্ঞাসাবাদের কী আছে?!’’
বছর দেড়েক আগে এই একই নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার পরেও দেখা গিয়েছে, মানবিকতার ডাকে যাঁরা আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন, জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাঁদের হেনস্থা করছেন পুলিশ অথবা হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ। তাই অনেকে আহতদের দেখেও পাশ কাটিয়ে চলে যান। এই প্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, উপকারীদের কোনও ভাবে জেরা করে সমস্যায় ফেলা যাবে না।
শুক্রবার পৈলানে দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠকে পুলিশ, স্বাস্থ্য ও প্রশাসনিক কর্তাদের সামনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আহতকে যে-কেউ হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেন। তাঁকে অযথা হেনস্থা করা হবে কেন? লোকে ভয় পায় পুলিশের জেরাকে। এটা তো মানবিক ব্যাপার। জেরা করা যাবে না। এটা আপনারা দেখে নিন।’’
পুলিশ ও হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ অবশ্য হেনস্থার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, কলকাতার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ফাঁড়ি রয়েছে। আহতকে জরুরি বিভাগে আনার পরে পুলিশকে খবর দেন সেখানকার চিকিৎসকেরা। তাঁরাই নামধাম-সহ কী ভাবে আহত হয়েছেন, তা নথিভুক্ত করেন। বেসরকারি হাসপাতালে দুর্ঘটনায় আহতকে আনা হলেও খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। পুলিশের দাবি, যিনি আহতকে নিয়ে এসেছেন, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কী ভাবে ঘটনা ঘটেছে, সেটা বোঝার চেষ্টা করা হয়। একে হেনস্থা বললে সমস্যা হবে।
আবার অধিকাংশ হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পরিচয় ছাড়া আর কিছু জানার জন্য তাঁরা চাপ দেন না। যে-হেতু পথ-দুর্ঘটনায় পুলিশ কেস হয়, তাই উদ্ধারকারীর নাম, বাড়ির ঠিকানা এবং টেলিফোন নম্বর নিয়ে রাখা হয়। এটা হেনস্থা নয়।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ‘গুড সামারিটানদের’ জন্য তৈরি কেন্দ্রীয় আইনে বলা হয়েছে, উদ্ধারকারীদের নিজের পরিচয় প্রকাশে চাপ দেওয়া যাবে না, জেরা করা যাবে না, টাকা চাওয়া যাবে না। এ রাজ্যের সরকার ওই আইন রূপায়ণে তেমন উৎসাহ দেখায়নি বলে অভিযোগ। পরিবহণ দফতর জেলাকে আইন বলবৎ করতে বললেও তা নিয়ে বিশেষ প্রচার হয়নি।