E-Paper

স্কুলপড়ুয়ার ছুরি চালানো কি সার্বিক হিংসার ফল, উঠছে প্রশ্ন

রাজ্য শিশু অধিকার ও সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী বললেন, ‘‘পুরোটাই অত্যন্ত ভয়ের ও আতঙ্কের। সব দিক থেকেই আমরা অত্যন্ত অধৈর্য হয়ে গিয়েছি। সহিষ্ণু ভাবটা বড্ড কমে যাচ্ছে। স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে কমিশন পদক্ষেপ করবে।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:০৭
দক্ষিণেশ্বর স্টেশনে ঘটনাস্থলে পুলিশ।

দক্ষিণেশ্বর স্টেশনে ঘটনাস্থলে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

মেট্রো স্টেশনেই এক স্কুলপড়ুয়া ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন করছে আর এক স্কুলপড়ুয়াকে! শুক্রবার দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশনের এই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। আলোচনা শুরু হয়েছে, ঠিক কী কারণে এক স্কুলপড়ুয়া সঙ্গে ছুরি রাখতে পারে? কেন ১৭ বছরের এক পড়ুয়া সমবয়সিকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন করতে পারে?

মনোরোগ চিকিৎসক থেকে সমাজতত্ত্ববিদদের বড় অংশ যদিও বলছেন, এ কোনও বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়। এটা সার্বিক সামাজিক অসহিষ্ণুতার ফল। তাঁদের মন্তব্য, ‘‘এমন ঘটনার পিছনে কারণ যা-ই হোক, এটা আদতে অল্পবয়সিদের মধ্যে বাড়তে থাকা আগ্রাসন ও বাড়তে থাকা অসহিষ্ণুতার দিককেই ইঙ্গিত করছে।’’ সেই সঙ্গে তাঁরা ছোটদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিক নিয়ে নতুন করে পর্যালোচনা করে স্কুল স্তর থেকে পদক্ষেপ করার প্রয়োজনের কথাও বলছেন।

মনোরোগ চিকিৎসক দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়ে বললেন, ‘‘রোজই আরও বেশি করে অশান্ত হয়ে পড়ছি। তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া দিতেই হবে ভেবে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে অনেক কিছুই ঘটিয়ে ফেলছি আমরা। এই পরিস্থিতিতে ছোটদের কী শিক্ষা দিচ্ছি, সেটা ভাবা প্রয়োজন। রাগ সংবরণের কোনও শিক্ষাই এখন তারা পাচ্ছে না। সেই সঙ্গে বড়রা আমাদের বুঝবে না, এই ভয় আরও বেশি করে ঘিরে ধরছে শিশু-কিশোর মনকে। বয়ঃসন্ধিকালে এই ভুল বোঝার ভয় আরও বেড়ে যাচ্ছে। এরই ফল হয়তো এ দিনের ঘটনা।’’ মনোরোগ চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায় যদিও মনে করেন, গোটা ব্যাপারটির গভীরে গিয়ে দেখে সিদ্ধান্তে পৌঁছনো প্রয়োজন। তাঁর কথায়, ‘‘এর গভীরে পৌঁছে পুরোটা দেখা উচিত। যে ছেলেটি এই কাণ্ড করেছে, তার পরিবেশ, পারিপার্শ্বিক সমস্ত ব্যাপার জানা জরুরি। এ ছাড়া সমাধান ভাবা যাবে না।’’

রাজ্য শিশু অধিকার ও সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী বললেন, ‘‘পুরোটাই অত্যন্ত ভয়ের ও আতঙ্কের। সব দিক থেকেই আমরা অত্যন্ত অধৈর্য হয়ে গিয়েছি। সহিষ্ণু ভাবটা বড্ড কমে যাচ্ছে। স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে কমিশন পদক্ষেপ করবে।’’

কমিশনের চেয়ারপার্সন তুলিকা দাস বলেন, ‘‘এই ঘটনা নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে যে, বাড়তে থাকা স্ক্রিনটাইমে নতুন প্রজন্ম ঠিক কী শিখছে? প্রায় সর্বক্ষণ দেখতে থাকা হিংসার কনটেন্ট কি তাদের হিংসার দিকেই টেনে নিয়ে যাচ্ছে? শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন করে ভাবা দরকার। স্কুল স্তরে এ নিয়ে কাজ হয়, তবে আরও কাজ দরকার। স্কুলশিক্ষা বিভাগকে বিষয়টি নিয়ে আরও ভাবার জন্য বলব।’’

সমাজতাত্ত্বিক অভিজিৎ মিত্র গোটা ঘটনায় বাক্‌রুদ্ধ। তাঁর মন্তব্য, ‘‘অত্যন্ত ভয়ের ব্যাপার। যে কোনও অভিভাবককে ব্যাপারটি চিন্তায় ফেলতে পারে। বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশার ক্ষেত্রে সন্তানের উপরে অভিভাবকেরা বিধিনিষেধের পথে যেতে পারেন। কিন্তু তাতে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে শিশু-কিশোর মন।’’

এর পরে তিনি বলেন, ‘‘কয়েক বছর ধরেই দেখছি, বন্ধু আর বন্ধু থাকছে না, বিপদের কারণ হয়ে উঠছে। প্রয়োজনে বন্ধু নিজের বন্ধুকে লোপাটও করে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে খারাপ হয়ে যাওয়া পরিবেশে ছেলেমেয়েরা বড় হচ্ছে। অনেকে বন্ধুত্বের দিবস পালন নিয়ে নানা কথা বলেন। আমি মনে করি, দিবস পালনের দরকার আছে। কী করে সমাজে সম্পর্কের বন্ধনবোধ বাড়তে পারে, সেটাই এখন সব পক্ষের মূল ভাবনা হওয়া উচিত।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

police investigation Psychology

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy