Advertisement
E-Paper

সেই শীতলখুচির স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বদলি করা হল দেবাংশীকে, বেনিয়মে কড়া নবান্ন

বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে এক উল্লেখযোগ্য নাম শীতলখুচি। সেখানেই কেন বদলি করা হল তা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে বিবিধ প্রশ্ন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২১ ০৬:২৭
বদলির নির্দেশিকা

বদলির নির্দেশিকা গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ২৬টি টসিলিজুমাব ইঞ্জেকশন উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসক দেবাংশী সাহাকে কোচবিহারের শীতলখুচির স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বদলি করল নবান্ন। বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে এক উল্লেখযোগ্য নাম শীতলখুচি। গত ১০ এপ্রিল চতুর্থ দফার নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে শীতলখুচির জোরপাটকির বুথে মৃত্যু হয় ৪ জনের। সেই ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে। এর মধ্যেই দেবাংশীকে শীতলখুচিতে কেন বদলি করা হল তা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে বিবিধ প্রশ্ন।

শুক্রবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘মেডিক্যাল কলেজের সিসিইউ-তে মেডিক্যাল অফিসারের পদে কর্মরত দেবাংশীকে কোচবিহারের শীতলখুচি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধীনে জাতামারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার পদে বদলি করা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসক মহম্মদ আরিফ ইকবাল হুসেনের সহকারী হিসাবে যোগ দেবেন তিনি।’ দ্রুত এই বদলি কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।

বেআইনি ভাবে বহুমূল্য ইঞ্জেকশন সরানোর ঘটনায় অভিযুক্ত মেডিক্যাল অফিসার দেবাংশী এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ারের এক নার্সের সঙ্গে উঠে এসেছে তৃণমূলের বিধায়ক নির্মল মাজির নামও। অভিযোগ, তাঁর সঙ্গে ওই তরুণী অফিসারের যোগ আছে। এই বিষয়ে তদন্ত করে সম্প্রতি জোড়া রিপোর্ট জমা পড়ে স্বাস্থ্যভবনে। তবে ইঞ্জেকশনগুলি কোথায় গেল, সেই প্রশ্নের জবাব এখনও মেলেনি।

গত এপ্রিলে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়মবহির্ভূত ভাবে ২৬টি টসিলিজুমাব ইঞ্জেকশন সরানোর অভিযোগ ওঠে সিসিইউ-এর মেডিক্যাল অফিসার দেবাংশীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, দামি ওষুধ বা ইঞ্জেকশন নেওয়ার নির্দিষ্ট নিয়মবিধি না-মেনে, স্রেফ কয়েকটি ‘স্পেসিমেন এগ্জ়ামিনেশন ফর্ম’-এ রোগীর নাম ও ক’টি করে ইঞ্জেকশন লাগবে, তা লিখে পাঠিয়েছিলেন দেবাংশী। বিষয়টি নজরে আসতেই হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটির শুনানির মধ্যেই, জুনের প্রথমে ঘটনাটি সমাজমাধ্যমের সূত্রে প্রকাশ্যে চলে আসে। সেই সময় প্রকাশ্যে আসে দু’টি অডিয়ো ক্লিপিং (আনন্দবাজার পত্রিকা যেগুলির সত্যতা যাচাই করেনি)। তাতে দেবাংশী এবং সিসিইউ-এর নার্সের কথোপকথনেই উঠে আসে ‘প্রভাবশালী’ চিকিৎসক-বিধায়ক নির্মল মাজির নাম।

তার পরেই নড়চড়ে বসে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। তাদের নির্দেশে তিন সদস্যের অন্য একটি কমিটিও ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করে। সংশ্লিষ্ট সব তরফের সঙ্গে কথা বলে তা রেকর্ড করে দু’টি কমিটিই। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জোড়া কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ে স্বাস্থ্য ভবনে। স্বাস্থ্য শিবির সূত্রের খবর, রিপোর্টে মেডিক্যাল অফিসার দেবাংশী এবং সিসিইউ-এর নার্সকেই বেআইনি ভাবে ইঞ্জেকশন সরানোর ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। কিন্তু সব দেখেশুনে চিকিৎসক মহলের একাংশের প্রশ্ন, “এক তরুণী চিকিৎসকের একার পক্ষে কি এই কাজ করা সম্ভব? যদি সম্ভব না-হয়, তা হলে তাঁকে সেই কাজটি করার সাহস জোগালেন কে বা কারা?” স্বাস্থ্য শিবিরের অন্য একটি অংশের প্রশ্ন, “ইঞ্জেকশন কাণ্ডে কোনও ভাবে কাউকে আড়াল করা হচ্ছে না তো?”

রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তা থেকে শুরু করে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। স্বাস্থ্য শিবির সূত্রের খবর, স্পেসিমেন এগ্জ়ামিনেশন ফর্মে হাতের লেখার পাশাপাশি অডিয়ো ক্লিপিংয়ের সত্যতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তা হল, কয়েক লক্ষ টাকা দামের ওই ২৬টি টসিলিজুমাব গেল কোথায়? স্বাস্থ্য সূত্র জানাচ্ছে, এই বিষয়টিও পৃথক ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Nabanna Investigation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy