প্রথমে ধর্ষণ, তার পরে গণধর্ষণ এবং শেষে, জোর করে টাকা আদায়ের চেষ্টা। দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় এই তিন দফায় অপরাধের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। যে সব তথ্য-প্রমাণ মিলেছে, তার সঙ্গে নির্যাতিতার বয়ানের যোগসূত্র তৈরি করে এমন ধারণাই স্পষ্ট হচ্ছে, দাবি পুলিশ সূত্রের।
নির্যাতিতা ছাত্রীকে শুক্রবার বেসরকারি ওই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন একটি অতিথিশালায় আছেন। শনিবার ওড়িশা থেকে ফোনে তাঁর বাবার দাবি, ‘‘আমার মেয়েকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হল! হাসপাতালও দায়িত্ব এড়াতে চাইছে।’’ মেয়ের কি আরও চিকিৎসা প্রয়োজন ছিল বলে মনে করছেন? তাঁর জবাব, ‘‘আর কিছু জানি না।’’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যদিও দাবি, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গড়া ‘মেডিক্যাল বোর্ড’ নির্যাতিতার চিকিৎসা করেছে। ওই চিকিৎসকেরাই তাঁকে ছুটি দেওয়ার উপযুক্ত বলে জানিয়েছেন। পরিবারের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্তকারীরা নির্যাতিতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তাঁকে মানসিক ভাবে চাঙা রাখার চেষ্টা হচ্ছে।
১০ অক্টোবর রাতে সহপাঠী এক ছাত্রের সঙ্গে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে বেরিয়ে নির্যাতনের শিকার হন ওই ছাত্রী। পুলিশ ওই সহপাঠী এবং লাগোয়া গ্রামের পাঁচ যুবককে ধরেছে। তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, অপরাধের ঘটনাটি তিন ভাগে ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথমে ধর্ষণ, যেটির সঙ্গে সহপাঠীর যোগ রয়েছে বলে অনুমান। তার পরে গণধর্ষণ, যাতে অন্য তিন জন ধৃত যুক্ত। শেষে, টাকা আদায়ের চেষ্টা, যার সঙ্গে বাকি দু’জন জড়িত। নানা তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এমনই অনুমান তদন্তকারীদের। সূত্রের দাবি, যে ডিজিটাল তথ্যপ্রমাণ মিলেছে, তার সঙ্গে নির্যাতিতার বয়ান সঙ্গতিপূর্ণ হচ্ছে। সূত্রের খবর, এই মামলায় তদন্তের জাল দ্রুত গোটাতে চাইছেন তদন্তকারীরা। নির্যাতিতাকে দিয়ে অভিযুক্তদের শনাক্ত করানোর পরে, দ্রুত চার্জশিট তৈরির প্রক্রিয়ায় হাত দেওয়া হবে।
শনিবার পশ্চিম বর্ধমানে কালীপুজোর উদ্বোধনে এসে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, “দুর্গাপুরে দোষীদের আড়াল করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ এক জনকে অভিযুক্ত হিসেবে খাড়া করছে। আমরা ক্ষমতায় এলে, তৃণমূলের আমলে ঘটা সব নারী নির্যাতনের মামলা ফের খোলা হবে।” দুর্গাপুরে এই ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপি যে ধর্না-মঞ্চ করেছিল, উৎসবের মরসুমের কারণে তা সাময়িক প্রত্যাহার করা হল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘১ নভেম্বর থেকে রাজ্য জুড়ে আন্দোলন নামবে বিজেপি। দুর্গাপুরে মহিলারা ঝাঁটা-মিছিল করবেন।” তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘যে সব জায়গায় ক্ষমতায় আছে, সেখানে দোষীদের মালা দিয়ে বরণ করছে বিজেপি। আগে সে রাজ্যগুলিতে বিচারের ব্যবস্থা করে দেখাক।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)