— প্রতীকী চিত্র।
মুর্শিদাবাদের লালগোলা হোক বা উত্তর ২৪ পরগনার ন্যাজাট— নর্দমার গর্তে নেমে প্রাণ হারানো তিন শ্রমিকের পরিবার চলবে কী করে, এ প্রশ্নটাই বার বার শোনা গেল সোমবার।
বানতলার চর্মনগরীতে ম্যানহোলের ভিতরে বিষাক্ত গ্যাসে রবিবার মারা যান মুর্শিদাবাদের লালগোলার আইড়মারির বাসিন্দা ফরজেম শেখ (৬০) এবং তাঁর পাশের গ্রাম টিকারপাড়ার বাসিন্দা হাসিবুর রহমান (২৬)। দু’টি বাড়িতেই আত্মীয়-পড়শিদের ভিড়। হাসিবুরের স্ত্রী সারাবান তোহরা জ্বরে আক্রান্ত ১৪ মাসের মেয়েকে জড়িয়ে শুয়ে ছিলেন। অনেক কষ্টে বলেন, ‘‘সংসার চালাতে ভরসা ছিল স্বামীর রোজগার। মেয়ের জ্বর হয়েছে, তাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম। শনিবার ফোন করে তা স্বামীকে জানাই। সেই শেষ কথা।’’
ফরজেমের ছেলে জাহাঙ্গির আলম বলেন, ‘‘বাবা ১৯৮০ সাল থেকে কলকাতাতেই কাজে যান। রবিবার সকাল ৬টা নাগাদ বাবার সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল।’’ ফরজেমের স্ত্রী আশরাফুন্নেসা বিবি বলেন, ‘‘সোমবার ওর বাড়ি আসার কথা ছিল।’’ দু’টি পরিবার এবং আত্মীয়দের প্রশ্ন, ‘‘এ বার কী হবে!’’ একই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার ন্যাজাটের বাসিন্দা সুমন সর্দারের (৩২)। একমাত্র রোজগেরে ছেলেকে হারিয়ে চোখের জল সামলাতে পারছেন না সুমনের বৃদ্ধ বাবা দয়াল সর্দার। দৃষ্টিহীন বৃদ্ধ সোমবার বলেন, ‘‘পুলিশ জানাল, ছেলে আর নেই। চারটি সন্তান সুমনের। সবাই ছোট। আমি আর ওর মা কাজ করার ক্ষমতা হারিয়েছি। আয়ের পথ করে দিক সরকার।’’
লালগোলার তৃণমূল বিধায়ক মহম্মদ আলির দাবি, ‘‘পরিবারগুলিকে কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে দশ লক্ষ টাকা করে অর্থ সাহায্য করা হবে।’’ দয়ালও তেমন প্রতিশ্রুতির কথা শুনেছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘শুধু দশ লক্ষ টাকা পেয়ে আমাদের কী করে দিন চলবে?’’ হাসিবুর, ফরজেমের পরিবারেরও একই কথা। বিধায়ক মহম্মদ আলি বলেন, ‘‘আমরা কলকাতা পুরসভার মেয়রের কাছে এই পরিবারগুলির এক জনের জন্য চাকরির আবেদন করব।’’
সুমনের মা সাজোবালা বলেন, ‘‘গত সপ্তাহেই ঠিকাদার ডাকল। ছেলে বাড়ি থেকে গেল। বলেছিল সামনের সপ্তাহে ফিরে আসবে। আর কোনও দিন ফিরবে না! কী করব এখন?’’ গ্রামবাসীদের প্রশ্ন, পুরসভার কাজ করতে গিয়ে সুমনের মৃত্যু হয়েছে, কেন ওই কাজ করার জন্য শ্রমিকদের উপযুক্ত নিরাপত্তা থাকবে না? গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং কারও গাফিলতি থাকলে তাদের শাস্তিরও দাবি তুলেছেন সুমনের পড়শিরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy