রাজ্য সরকারের দেওয়া অর্থ সাহায্য পত্রপাঠ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তাঁরা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দেওয়া সাহায্য-অর্থ স্বীকার করলেন শমসেরগঞ্জে নিহত বাবা-ছেলের পরিজন।
মুর্শিদাবাদের জাফরাবাদে ওই বাড়িতে গিয়ে শনিবার নিহতদের পরিবারের হাতে ব্যক্তিগত সামর্থ্য থেকে ১০ লক্ষ এক হাজার টাকা করে মোট ২০ লক্ষ দু’হাজার টাকার চেক তুলে দিয়েছেন শুভেন্দু। নিহত বৃদ্ধের স্ত্রী বলেন, ‘‘দেহ চার ঘণ্টা রাস্তায় পড়ে থাকলেও পুলিশ আসেনি। তার প্রতিবাদেই মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্য আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি।’’ আর ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এ দিন শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘হিন্দু হৃদয়ে আমি জায়গা করে নিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী ওঁদের কাছে ব্রাত্য। রাজ্য সরকারের টাকা ওঁরা নেননি। কিন্তু বিরোধী দলনেতার আর্থিক সাহায্য ওঁরা স্বীকার করেছেন। ওঁরা তো সিপিএম সমর্থক ছিলেন। বোঝা যাচ্ছে, আমাদের হিন্দুত্বের লাইন ঠিক আছে।’’
সাড়ে তিন ঘণ্টার ধুলিয়ান, শমসেরগঞ্জ সফরে বিভিন্ন জায়গায় শুভেন্দুকে ঘিরে গ্রামবাসীরা নিরাপত্তার পাশাপাশি এলাকায় বিএসএফ শিবির বসানোর দাবি করেছেন। ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী আপনাদের পাশে থাকবে’’ বলে বিজেপি নেতা তাঁদের বার বার আশ্বস্ত করেছেন। জাফরাবাদ, রানিপুর, বেতবোনা, দিঘরি, ঘোষপাড়া, নিমতিতায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরও পরিদর্শন করেছেন শুভেন্দু।
চার কামরার বিশেষ ট্রেনে বেলা ঠিক ১২টায় ধুলিয়ান গঙ্গা স্টেশনে নামেন শুভেন্দু। সেখান থেকে তিনি গাড়িতে যান জাফরাবাদে নিহতদের বাড়িতে। তাঁকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের লোকজন। শুভেন্দু নিহত ছেলের স্ত্রীর কাছ থেকে জীবনপঞ্জি-সহ একটি চাকরির আবেদনপত্র চেয়ে নেন। তাঁকে কেন্দ্রীয় সংস্থায় চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। ওই গ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনীর একটি বিশেষ শিবির বসানোর দাবি উঠলে তিনি সে ব্যাপারে সরকারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছেন। গোলমালের ঘটনার এনআইএ তদন্ত এবং বাবা-ছেলে খুনে জড়িতদের কঠোর শাস্তির কথাও বলেছেন।
পরে শমসেরগঞ্জের ঘটনা নিয়ে শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘এনআইএ তদন্ত করতেই হবে। কারণ, এই ঘটনার পিছনে আসল অপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের যারা এই ঘটনায় জড়িত, তাদেরও ধরা হচ্ছে না। অন্তত ছ’মাস কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকুক এখানে।’’ জাফরাবাদ থেকে বেতবোনা, রানিপুর, পালপাড়া, ঘোষপাড়া পরিদর্শনের পরে ধুলিয়ান স্টেশন হয়ে তিনি গিয়েছিলেন নিমতিতায়। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি এবং দোকানপাট পরিদর্শনের পরে বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ শুভেন্দু সংরক্ষিত ট্রেনেই রওনা দেন কলকাতার উদ্দেশে।
শুভেন্দুর সফর নিয়ে জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, “আদালতের অনুমতি নিয়ে শুভেন্দুবাবু শমসেরগঞ্জে এসেছিলেন। তিনি তাঁর মতো করে যা বলার বলেছেন। তবে তিনি কয়েক জন তৃণমূল নেতার উপরে গোলমালের দায় যে ভাবে চাপিয়েছেন, তা ঠিক নয়। তৃণমূলের কেউ এতে জড়িত নন।”
দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি ফের তুলে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘টাকা দিলেই হিন্দু হৃদয় সম্রাট হওয়া যায় না! আমাদের মূল উদ্দেশ্য সেই এলাকায় মৈত্রী ও সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনা। খোঁজ নিয়ে দেখলে জানবেন, ওই পরিবারের এক জন কংগ্রেসের নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যা রয়েছেন।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীরও মতে, ‘‘হিন্দুত্বকে ওঁরা (বিজেপি) রাজনৈতিক প্রকল্প হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন। সেই কাজে শোকাতুর পরিবারকে ব্যবহার করা সমীচীন নয়।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)