E-Paper

টেটের গেরোয় সঙ্কটে কি ৯০ হাজার শিক্ষক

বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন এবং শিক্ষকদের দাবি, কমপক্ষে ৯০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যদিও শিক্ষা দফতরের কর্তাদের একাংশের মতে, এই সংখ্যাটা ৪০ হাজারের বেশি নয়।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৫ ০৫:৩৮
২০১০ সালের পরীক্ষার পরে ২০১২ সালে নিয়োগ হন ৪৮ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক।

২০১০ সালের পরীক্ষার পরে ২০১২ সালে নিয়োগ হন ৪৮ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক। —ফাইল চিত্র।

উচ্চ প্রাথমিক পর্যন্ত কর্মরত সমস্ত শিক্ষককে টেট পাশ করতে হবে। যাঁরা টেট পাশ নন তাঁদের আগামী দু’বছরের মধ্যে টেট পাশ করে নিতে হবে। শুধু মাত্র যাঁদের চাকরি পাঁচ বছর বা তার থেকে কম আছে তাঁদের টেট পাশ আবশ্যিক নয়। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পরে প্রাথমিক শিক্ষকদের অভিযোগ, রাজ্যের বহু শিক্ষক যাঁরা টেট পাশ নন তাঁদের চাকরি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন এবং শিক্ষকদের দাবি, কমপক্ষে ৯০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যদিও শিক্ষা দফতরের কর্তাদের একাংশের মতে, এই সংখ্যাটা ৪০ হাজারের বেশি নয়। শিক্ষক সংগঠনগুলির বেশির ভাগের দাবি, সংখ্যাটা কখনওই এত কম নয়।

সমস্যায় পড়া শিক্ষকদের সংখ্যা ৪০ হাজারের মধ্যে বোঝাতে একটা হিসাব দিয়েছেন শিক্ষা দফতরের এক কর্তা। তিনি জানান, ২০১০ সালে পরীক্ষা হয়ে প্রাথমিকে নিয়োগ হয়েছিল ২০১২ সালে। তখন কেউ টেট দেননি। কারণ ২০১০ সালে যখন পরীক্ষা হয় তখন টেট ছিল না। ২০১০ সালের ওই পরীক্ষার পরে ২০১২ সালে নিয়োগ হন ৪৮ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক। তাঁদের মধ্যে প্রায় ১০ হাজারের মতো প্রাথমিক শিক্ষক নানা কারণে বয়সের ছাড় পেয়ে নিয়োগ হয়েছিলেন। ওই শিক্ষকেরা এখন অবসর নিয়েছেন বা তাঁদের অবসর নিতে পাঁচ বছর বা তারও কম সময় আছে। তা হলে ৪৮ হাজারের থেকে ১০ হাজার বাদ দিলে ৩৮ হাজারের মতো শিক্ষক থাকছেন, যাঁদের টেট দিতে হবে। এই ৩৮-৪০ হাজারের মতো শিক্ষকের চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। শিক্ষা দফতরের ওই কর্তার যুক্তি, “২০১০ সালে শিক্ষার অধিকার আইন চালু হয়। সেখানে বলা হয় প্রাথমিকের সমস্ত শিক্ষককে টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট (টেট) পাশ করতে হবে। এই নিয়ম যেহেতু ২০১০ সালে হয়েছে তাই আরও আগে নিযুক্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের টেট পাশ দেখাতে হবে না। তাঁদের চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণ নেই।”

যদিও এই যুক্তি মানতে নারাজ প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ। বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডার মতে, সুপ্রিম কোর্ট কিন্তু নির্দেশে বলেনি, ২০১০ সালের আগে নিযুক্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের টেট দিতে হবে না। বরং বলেছে সব কর্মরত শিক্ষক যাঁরা টেট পাশ নন, তাঁদেরই টেট পাশ করতে হবে। আনন্দ বলেন, “এখন প্রাথমিকে কর্মরত দেড় লক্ষের মতো শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচ বছর বা তার কম চাকরি বাকি আছে এমন শিক্ষকের সংখ্যা ১৫ হাজারের মতো। দেড় লাখের থেকে পনেরো হাজার বাদ দিলে থাকে এক লাখ ৩৫ হাজার। ২০১২ সালের পর থেকে প্রাথমিকে যে নিয়োগ হয়েছে সেই নিয়োগে প্রাথমিক টেট দিয়েই সবার নিয়োগ হয়েছে। সেই টেট পাশ নিয়োগের সংখ্যা ৪৫ থেকে ৫০ হাজারের মতো। আমাদের হিসেব অনুযায়ী, এক লক্ষ ৩৫ হাজার থেকে ৪০-৫০ হাজার বাদ দিয়ে ৯০ হাজারের আশপাশে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।” উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক ভাস্কর ঘোষ ৯০ হাজারের মতো প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরির অনিশ্চয়তার কথা বলেন। শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারীর মতে, “শিক্ষার অধিকার আইন চালু হওয়ার আগে যাঁদের নিয়োগ হয়েছে তাঁদেরা টেট দিতে হবে কী না নিশ্চিত হতে সরকারকে দ্রুত রিভিউ পিটিশনে যেতে হবে। এই বিষয়গুলো দ্রুত স্পষ্ট হওয়া দরকার। এই নিয়ে সরকারকে ততটা উদ্যোগী বলে মনে হচ্ছে না।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Teachers WB Teachers

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy