এ যেন হিন্দি সিনেমার গল্প।
এক যুগ আগে মুম্বইয়ে পাচার করা হয়েছিল সোনারপুরের সুস্মিতাকে। সেখানে গিয়েই আলাপ নারী পাচার চক্রের আড়কাঠি মরাঠি সন্তোষ লাঞ্জেকরের সঙ্গে। মাঝবয়সী সন্তোষই পাচার চক্রের কাছ থেকে নিয়ে আসে সুস্মিতাকে। বিয়েও করে। আর তার পরেই শুরু হয় নতুন জীবন!
পুলিশ বলছে, এখানেই গল্পের মোড়। পাচার চক্র থেকে বেরিয়ে সুস্থ জীবন নয়, সুস্মিতা এবং সন্তোষ ফেঁদে বসেছিলেন একেবারে নিজস্ব নারী পাচার চক্র, রাজ্য জুড়ে যার জাল ছিল ছড়ানো! চলতি মাসের গোড়ায় সোনারপুর থেকে ধরা পড়েছিল সন্তোষ। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘুটিয়ারি শরিফ থেকে পাকড়াও করা হয়েছে সুস্মিতাকেও। দু’জনকে জেরা করতে গিয়েই এমন তথ্য পেয়েছেন সিআইডি-র অফিসারেরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, সন্তোষের বয়স এখন ষাটের কাছাকাছি। সুস্মিতার মধ্য তিরিশ। সন্তোষকে গ্রেফতারের পরেই গা-ঢাকা দিয়েছিল সে। কয়েক দিন আগে ‘সোর্স’ মারফত ভবানী ভবনে খবর আসে, ঘুটিয়ারি শরিফের ঘিঞ্জি মহল্লায় আস্তানা গেড়েছেন এক মহিলা। সঙ্গে রয়েছে বছর দশেকের একটি মেয়ে। সন্দেহ হওয়ায় এলাকায় ঘোরাঘুরি শুরু করেন গোয়েন্দারা। অবশেষে বুধবার রাতে হানা দিয়ে আটক করা হয় সুস্মিতাকে, বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেফতার করা হয়। সঙ্গে থাকা মেয়েটি তার, বাবা সন্তোষ। আদালতে হাজির করিয়ে সুস্মিতাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে সিআইডি। সন্তোষকে গ্রেফতার করার সময় অবশ্য পাচারের জন্য নিয়ে আসা আট-দশ বছরের তিনটি মেয়েকে উদ্ধার করা হয়েছিল।
সিআইডি এবং কলকাতা পুলিশের কাছে সুস্মিতা ও সন্তোষের নামে পাচার, অপহরণের একাধিক মামলা রয়েছে। রয়েছে শিশুদের উপরে যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগও। লালবাজার জানিয়েছে, পূর্ব যাদবপুর থানায় ২০১৩ সালের একটি মামলায় ওই দম্পতি নারী পাচার-সহ একাধিক ধারায় অভিযুক্ত। ঘটনার পর থেকেই তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। এ বার ওই মামলায় সুস্মিতা ও সন্তোষকে নিজেদের হেফাজতে পাওয়ার জন্য আদালতে আর্জি জানানো হবে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে গোয়েন্দাদের দাবি, গত বছর দশেক ধরে সারা রাজ্যেই নিজেদের জাল ছড়িয়েছিল এই দম্পতি। শিশু থেকে তরুণী, নানা বয়সের মেয়েদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করা হয়েছে। তবে মূলত গরিব পরিবারের আট-দশ বছরের মেয়েদেরই ‘শিকার’ হিসেবে বেছে নিত এই দম্পতি। তাদের পাচার করা হত মুম্বই, পুণে-সহ পশ্চিম ভারতের নানা এলাকায়। কখনও পরিচারিকা হিসেবে, কখনও বা যৌনপল্লিতে। টোপ হিসেবে মোটা টাকাও পরিবারের সামনে দেওয়া হতো। সন্তোষ-সুস্মিতাকে পাচারে সাহায্য করায় ইতিমধ্যে উদ্ধার হওয়া কিশোরীদের তিন আত্মীয়কেও গ্রেফতার করা হয়েছে। সিআইডির এক কর্তা বলেন, ‘‘এই চক্রে আরও অনেকে জড়িত। তাদের খোঁজেও তল্লাশি শুরু হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy