‘১লা পার্বণ’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। আর তার পরেই দ্বিতীয় বড় পার্বণ হিসেবে পালিত হয় পয়লা বৈশাখ অর্থাৎ বাংলা নববর্ষ। বাংলা মতে বছরের প্রথম দিন। এই পয়লা পার্বণের মধ্যে দিয়েই কিন্তু পৃথিবীর সমস্ত বাংলা ভাষার মানুষকে বেঁধে ফেলা যায়। সেখানে কোন ভেদাভেদ নেই, নেই জাত-ধর্ম-উঁচু-নিচুর ভাগাভাগি। সবটাই বাঙালির নববর্ষ।
বৈশাখী আড্ডা
বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের এই মুহূর্তকে আরও সুন্দর করে তুলতে বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসবের প্রাঙ্গণে আয়োজিত হয়েছিল তিন দিন ব্যাপী এক অভিনব অনুষ্ঠান ‘১লা পার্বণ।’ যার আয়োজক সংস্থা ছিল মাইন্ডশ্যাফ্ট মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড। খাওয়াদাওয়া, গান-বাজনা থেকে শুরু করে আড্ডা, বাঙালিয়ানায় ভরা অভিনব ফ্যাশন শো ছিল- মেলার আকারে এই উদ্যাপনে ছিল সব কিছুই। এ ছাড়াও অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ সেজে উঠেছিল আলপনায়।
হস্তশিল্পের সামগ্রী
বাঙালিয়ানার এই উদ্যাপনের কথা মাথায় রেখেই পুরো অনুষ্ঠানটি সাজানো হয়েছিল। যার অঙ্গ হয়ে উঠেছিল ‘আমি বাংলায় গান গাই থেকে’ শুরু করে ‘বাঙালি ঠেকে শেখে’, ‘প্রাণ খোলা প্রাঙ্গণ’ কিংবা ‘সাজ বেলা’ ইত্যাদি।
‘১লা পার্বণ’ অনুষ্ঠানের কিছু বিশেষ ঝলক
আয়োজকদের মতে, “আমরা একটা বিশেষ জায়গা তৈরি করতে চেয়েছি। দুর্গাপুজো বলতে আমাদের মনের মধ্যে নানা রকমের ছবি ভেসে আসে, ঈদ বললে আর এক রকম, ক্রিসমাস বলতে আবার আর এক রকম। পয়লা বৈশাখ বলতে আমরা ছোট বেলায় জানতাম নতুন জামা আর দুপুরে সপরিবারে একটু ভালমন্দ খাওয়াদাওয়া ইত্যাদি। ভেবে দেখুন, এই প্রজন্মের কাছে সবই আছে, কিন্তু এই পয়লা বৈশাখ বা পয়লা পার্বণটা কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে। বাঙালির সেই আনন্দ, একান্নবর্তী পরিবারের ভাই বোনেদের হুটোপাটির ওই আমেজটা আমরা ফিরিয়ে আনতে চেয়েছি। একটা জায়গা তৈরি করতে চেয়েছি, যেখানে বাঙালি প্রতি বছর নববর্ষে আসবে, হাসবে, গাইবে।”
ভিন্ন ধরনের ফুড স্টল
মাইন্ডশ্যাফ্ট মিডিয়ার ডিরেক্টর মুনমুন চক্রবর্তী বলেন, “দুর্গাপুজোর পরে বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব হল পয়লা বৈশাখ। কিন্তু আমরা পরিবারের কয়েক জন লোক ছাড়া আর কোথাও সে ভাবে নববর্ষ পালন করতে উদ্যোগী হই না। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই আমাদের এই চিন্তাভাবনা ‘১লা পার্বণ।’ বাঙালিয়ানার ছোঁয়া রেখেই সাজানো হয়েছিল পুরো মেলাটি। বোলপুর শান্তিনিকেতন থেকেও কুটির শিল্পের অনেক শিল্পীরা এসেছিলেন। সব মিলিয়ে খুব সুন্দর ভাবে সেজে উঠেছিল এই মেলা প্রাঙ্গণ।”
আধিবাসী নৃত্য
অনুষ্ঠানে যোগ দেন কবি শ্রীজাত। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেছেন, “পয়লা বৈশাখ বাংলার সংস্কৃতির একটা অংশ। এই ধরনের একটা অনুষ্ঠানের অংশ হতে পেরে খুব ভাল লাগছে। ওপার বাংলার পাশাপাশি এপার বাংলাতেও এখন এই ধরনের অনুষ্ঠান হচ্ছে, খুব ভাল লাগছে। অনুষ্ঠানের আয়োজকদের আমার তরফ থেকে অনেক অভিনন্দন।”
সঞ্চালক, আরজে সোমক
মাইন্ডশ্যাফ্ট মিডিয়ার উপদেষ্টা পিনাকী শৌকালীন ঘোষের কথায়, “আমাদের এই চিন্তাভাবনা এসেছে ‘বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ’ এই প্রবাদটি থেকে। কিন্তু তেরো পার্বণ কোনটা? দুর্গাপুজোর পর বাঙালিদের সবচেয়ে বড় উৎসব হল পয়লা বৈশাখ। কিন্তু এই পয়লা বৈশাখ চিরকালই বাড়ির মধ্যেই বন্দি হয়ে থেকে গিয়েছে, এর আলাদা কোনও ঠিকানা নেই। সেখান থেকেই এই ‘১লা পার্বণ’-এর ভাবনা। পয়লা কিন্তু একলা নয়।”
অভিনেতা সুমিত সমাদ্দারের কথায়, “এই ধরনের একটা উদ্যোগে সামিল হতে পেরে ভীষণ ভাল লাগছে। এটা শুধুমাত্র একটা মেলা বললে ভুল হবে। এখানে বাংলার বিভিন্ন ঐতিহ্যকেও তুলে ধরা হয়েছে। বৈশাখী আড্ডার মধ্যে দিয়ে এখানে বাংলার সংস্কৃতির বিভিন্ন দিকগুলি নিয়েও চর্চা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ভীষণ ভাল একটা অনুভূতি।”
অনুষ্ঠানের ডিজিটাল মিডিয়া পার্টনার আনন্দবাজার অনলাইন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy