ওয়েবসাইটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন কলকাতায় ব্রিটিশ ডেপুটি হাই কমিশনার নিক লো। নিজস্ব চিত্র।
চলার পথ ততটা সহজ ছিল না। তবে জীবনের সব পিচ্ছিল বাঁক পেরিয়ে ছুঁয়েছেন সাফল্যের শিখর। অসমের ছোট শহর তিনসুকিয়ার সেই অনামী মেয়েই আজ মিনু বুধিয়া। দু’সন্তানের মা বা উদ্যোগপতি, সাইকোথেরাপিস্ট অথবা টেডএক্স-এর মঞ্চে অনুপ্রেরণার বার্তা ছড়ানো কলামলেখিকা— মিনুর সাফল্যের মুকুটে জু়ড়ে রয়েছে নানা রঙের পালক। নিজের যাত্রাপথে বহু বাধাবিপত্তি কাটিয়ে তোলার টুকরো টুকরো মুহূর্তগুলি একসুতোয় গেঁথে তুলে ধরেছেন তাঁর ওয়েবসাইটে— www.minubudhia.com। শুক্রবার সেই ওয়েবসাইটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন কলকাতায় ব্রিটিশ ডেপুটি হাই কমিশনার নিক লো।
ওয়েবসাইট আত্মপ্রকাশের মঞ্চে নিজের জীবনের পাতাগুলি মেলে ধরেছিলেন মিনু। নানা খুঁত সত্ত্বেও যে নিখুঁত হওয়া যায়, তার উদাহরণ যেন ছড়িয়ে রয়েছে মিনুর জীবন জুড়ে। নিজের ভাষণে মিনু বলেন, ‘‘ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর অসমের তিনসুকিয়ার সেই ছোট শহরের মেয়ে থেকে আজকের আমি— জীবনে বহু ওঠানামার সাক্ষী থেকেছি। তবে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হয় যে চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি অনেকের আশীর্বাদও জুটেছে। সঞ্জয়ের মতো এমন স্বামী যে সব কাজে উৎসাহ দিয়েছে বা প্রাচী এবং প্রিয়মের মতো দুই মেয়ের ভালবাসা— সবই পেয়েছি। অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিজঅর্ডার (এডিএইচডি), নিম্ন আইকিউ এবং বাইপোলার ডিজঅর্ডার নিয়েও ছোট মেয়ে প্রাচীই আমার সমস্ত শক্তি, অনুপ্রেরণার ভাণ্ডার। তার জন্যই আমার যাবতীয় সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। আমার সফরের গোটাটাই তার সঙ্গে পথচলায় জড়িয়ে রয়েছে।’’
মিনুর পথচলার কাহিনি যে সহজ ছিল না, তা জানিয়েছেন নিক লো-ও। তিনি বলেন, ‘‘সব মায়েরাই স্পেশাল। তবে কয়েক জন অন্যদের থেকেও বেশি স্পেশাল।’’ মিনুর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘ছকভাঙা কাহিনিতে আমার টান রয়েছে। আর আপনার কাহিনি তো রূপকথার থেকে কিছু কম নয়। নিজের মেয়েদের কাছে তো বটেই, আপনি বহু জনকেই অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।’’ করোনার মতো অতিমারিতে বয়ঃসন্ধিকালের ছেলেমেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি মিনু যে নজর ঘোরাতে পেরেছেন, নিজের ভাষণে তা-ও উল্লেখ করেছেন নিক। তিনি বলেন, ‘‘সঠিক সময়েই এই ওয়েবসাইটটি দিনের আলো দেখল।’’
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজকর্ম করছেন মিনু। ‘কেয়ারিং মাইন্ডস’ নামে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা-ডিরেক্টর মিনু ‘ক্যাফে আইক্যানফ্লাই’ বলেও একটি সংগঠন শুরু করেছেন। মানসিক স্বাস্থ্য ছাড়াও বিশেষ ভাবে সম্পন্নদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়াই তাঁর উদ্দেশ্য। প্যাটন গোষ্ঠী এবং অ্যাডলাইফ ফিটনেস অ্যান্ড স্পা-র ডিরেক্টর হিসাবেও নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন মিনু। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখা ছাড়াও ‘ডেথ অব আ ক্যাটারপিলার’ নামে একটি আত্মজীবনীও লিখে ফেলেছেন তিনি। এক সময় নিজেই অবসাদের শিকার হওয়া মিনু যেন ‘ইকিগাই’-এর খোঁজ পেয়ে গিয়েছেন। জাপানে যে ধারণা জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পাওয়ার সমানুপাতিক! যার জন্য প্রতিনিয়ত ছুটে চলা যায়। ঠিক যে ভাবে মিনু বুধিয়া ছুটে চলেছেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy