Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Lok Sabha Election

লোকসভা ভোটের ‘পয়লা’ লড়াই নভেম্বরেই, অতীতের নজির নিয়ে চিন্তা পদ্মের, এ বার লক্ষ্যপূরণ হবে তো!

নবান্ন দখলের জন্য প্রয়োজনীয় আসনের থেকে অনেকটা দূরেই থমকে যায় গেরুয়া শিবির। ভোটের পরের দলীয় বিশ্লেষণে নানা কারণের মধ্যে এটাও উঠে এসেছিল যে, সাংগঠনিক প্রস্তুতিতেই অনেক খামতি ছিল।

The main political fight of Lok Sabha Election is in this November.

শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৪৯
Share: Save:

গত লোকসভা নির্বাচনে ১৮ আসনে জয় মিললেও বিজেপি নেতৃত্ব এটা মানেন যে, সে বার সংগঠনের থেকে ‘মোদী হাওয়া’ বেশি কাজে লেগেছিল। সেই জয় থেকেই জন্ম নিয়েছিল ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফলের আশা। দল ক্ষমতা দখলের কথাও ভেবেছিল। যদিও নবান্ন দখলের জন্য প্রয়োজনীয় আসনের থেকে অনেকটা দূরেই থমকে যায় গেরুয়া শিবির। আর ভোটের পরের দলীয় বিশ্লেষণে নানা কারণের মধ্যে এটাও উঠে এসেছিল যে, সাংগঠনিক প্রস্তুতিতেই অনেক খামতি ছিল। আর তাতেই অনেক জায়গায় ভাল ফলের অঙ্ক মেলেনি। তখন থেকেই ঠিক হয়, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি সময় থাকতে শুরু করা হবে।

বিজেপি শিবির সূত্রে জানা যায়, ভোটার লিস্ট সংশোধনের মধ্য দিয়েই যে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করতে হয় সেটা রাজ্য নেতৃত্বকে সেই সময়ে বুঝিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি বিজেপিতে যোগ দিলেও তখন আর সেই সময় ছিল না। এ বার তাই বিজেপি এখন থেকেই তৎপর। গত বুধবার জাতীয় নির্বাচন কমিশন রাজ্যের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে। এখন মোটামুটি দু’মাস সময় রয়েছে সেই ভোটার তালিকা সংশোধনের। সেই কাজ ইতিমধ্যেই শুরুও করে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। সেই কাজ ১০০ শতাংশ জায়গায় করার সাংগঠনিক শক্তিই নেই রাজ্য বিজেপির। তাই আপাতত ঠিক হয়েছে, যেখানে দলের শক্তি রয়েছে সেখানে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ এমন ভাবে করতে হবে যেটা অতীতে কখনও রাজ্য বিজেপি করেনি।

আগামী লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য থেকে ৩৫টি আসনে জয় নিশ্চিত করতে হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গত বার ১৮ আসনে জেতা বিজেপির হাতে এখন ১৬টি লোকসভা। আসানসোল তৃণমূলের দখলে আর বারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ দলবদল করেছেন। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের দখলে থাকা আসনের পাশাপাশি হারা আসনেও সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে হবে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেনে প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় এক জন করে এক নম্বর বুথ লেভেল এজেন্ট (বিএলএ-১) নিয়োগ করতে হয়। রাজ্য বিজেপি ইতিমধ্যেই ৪২টি লোকসভা এলাকায় ২৯৪ জন বিএলএ-১ নিয়োগ করে ফেলেছে। কিন্তু কঠিন হচ্ছে বিএলএ-২ নিয়োগ করা। ভোটার তালিকায় সংশোধনে ১০০ শতাংশ অংশগ্রহণের জন্য দলের প্রয়োজন ৮০,৪৫৩ জন বিএলএ-২। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি বুথে এক জন করে বিএলএ-২ রাখতে হয়। একই ব্যক্তি একাধিক বুথে এই দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।

গত লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় এ বার রাজ্য বুথের সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বুথের সংখ্যা ছিল ৭৮,৭৯৯টি। গত বিধানসভা নির্বাচনে বেড়ে হয় ৭৮,৯০৩। গত বুধবার নির্বাচন কমিশন যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে বাংলায় এ বার বুথ ৮০,৪৫৩টি। আর মোট ভোটার সংখ্যা ৭,৫৩,৮৬,০৭২।

যে কোনও রাজ্যের নির্বাচনের ক্ষেত্রেই নতুন ভোটারের নাম তালিকায় সংযোজন, মৃতদের নাম বিয়োজন এবং ভোটার তালিকায় প্রয়োজনীয় সংশোধনের কাজে এগিয়ে থাকে শাসকদল। ভোটার তালিকা তৈরির সময় থেকে সক্রিয় থেকেই বামেরা বাংলায় তিন দশক শাসন ধরে রাখতে পেরেছিল বলে দাবি করা হয়। প্রথম দিকে পিছিয়ে থাকলেও এখন শাসক তৃণমূলও সে কাজ সারা বছর ধরেই করে। কিন্তু বিজেপি শেষ বেলায় হলেও ভোটার তালিকা সংশোধনে বাড়তি জোর দিতে চাইছে। দলের লক্ষ্য যাতে কমপক্ষে তিন চতুর্থাংশ বুথে যাতে বিএলএ-২ নিয়োগ করা যায়।

নির্বাচন কমিশন সব রাজনৈতিক দলকেই ১ নভেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশোধন নিয়ে যাবতীয় অভিযোগ জমা দিতে বলেছে। এই সময়ে প্রতিটি শনি ও রবিবার সব বুথে কমিশনের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। মাঝে বাদ রয়েছে শুধু ১৯ নভেম্বর। এই দিনগুলিতে বিভিন্ন দল যাঁদের বিএলএ-২ নিয়োগ করবে তাঁরা সংশ্লিষ্ট বুথে গিয়ে কোনও নতুন ভোটারের নাম যুক্ত করতে পারবেন। মৃত ভোটারের নাম বাদ দিতে পারবেন। কারও নাম, ঠিকানা ভুল থাকলে সংশোধন করতে পারবেন। একই সঙ্গে ভুয়ো ভোটার নিয়ে অভিযোগও জানাতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী নতুন ভোটারের নাম নথিভুক্ত করতে ফর্ম ৬ পূরণ করতে হয়। নতুন ভোটার বিদেশে বসবাস করলে ফর্ম ৬-এ। কোনও ভোটার মৃত বলে দাবি করা হলে মৃত্যুর শংসাপত্র-সহ ফর্ম ৭ পূরণ করতে হয়। একই ফর্মের মাধ্যমে ভুয়ো ভোটারের অভিযোগ করা যায়। নাম, ঠিকানা সংশোধনের জন্য ফর্ম-৮। এই ফর্মেই জানানো যায় ওই বুথে কোনও ভোটার শারীরিক ভাবে অক্ষম কি না। সেটা জেনে কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। তবে যে ফর্মই পূরণ করা হোক না কেন কোনও দলের বিএলএ-২ হলে তাঁর প্রাথমিক কাজ খুঁটিয়ে নিজের বুথের ভোটার তালিকা পরীক্ষা করা এবং কার নাম নেই, কার নাম মৃত্যুর পরেও রয়ে গিয়েছে ইত্যাদি খুঁজে বের করা।

এই প্রক্রিয়া ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে বলা হলেও ভোটার তালিকায় প্রয়োজনীয় সংশোধন তার পরেও ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চালানো যেতে পারে। আর ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি লোকসভা নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন।

বিজেপি যে বিএলএ-২ নিয়োগ নিয়ে দলের চিন্তার কথা না মানলেও দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মণ বলেন, ‘‘২০২১ সালের নির্বাচনের সময়ে আমরা ২০ হাজারের মতো বুথে এই কাজ করতে পেরেছিলাম। সেই তুলনায় আমাদের সাংগঠনিক শক্তি এখন অনেক মজবুত। ফলে এ বারে অতীতের তুলনায় তিন গুণ জায়গায় ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। দলের সংগঠন এখন অনেকটাই সাজানো। ফলে কাজেও সুবিধা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, শাসকের ভুয়ো ভোটারদের অনেকেরই ভোটের আগে মৃত্যু হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Election Lok Sabha Election BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE