ফলন বিস্তর। জোগানেও কোনও ঘাটতি নেই। বাঁধাকপির দেখা সেই ভাবে না মিললেও কলকাতার বাজার ভরে গিয়েছে সস্তার ফুলকপিতে। প্রমাণ আকৃতির এক-একটি ফুলকপি গত সপ্তাহ পর্যন্ত বহু বাজারেই আট-দশ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ছোট ফুলকপি মিলেছে চার-পাঁচ টাকায়। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ঠান্ডা পড়তে শুরু করায় কিছুটা হলেও ফের ফুলকপির দাম বাড়তে শুরু করেছে। বড় যে ফুলকপি কিছু দিন আগেও ১০-১২ টাকায় বিক্রি হয়েছে, তার দামই এখন ২৫-৩০ টাকা। পরিমাণে কম হলেও বাজারে আসতে শুরু করেছে সবুজ দানার কড়াইশুঁটি, পেঁয়াজকলি ও শীতের বিট-গাজরও।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় থেকে এ সময়ে শহরের বাজারগুলিতে প্রচুর আনাজ আসে। ভাঙড়ের প্রায় ১৮০০ জন চাষিকে নিয়ে তৈরি একটি সংস্থার তরফে আবদুল জব্বর খান জানান, দিন ১৫ আগেও ফুলকপির দাম নেমে গিয়েছিল তলানিতে। পাইকারি বাজারে তিন থেকে পাঁচ টাকায় বড় ফুলকপি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন চাষিরা। কারণ, গরম থাকলে ফুলকপি দ্রুত বাড়তে থাকে, ফলে রেখে দেওয়া যায় না। ডিসেম্বরের শুরুতে ঠান্ডা বাড়তেই ফুলকপি কিছুটা ধীরে বাড়ছে। ফলে জোগান কমতেই বেড়েছে দাম।
ভাঙড়-সহ অন্যান্য এলাকার চাষিদের দাবি, তাঁরা এখন পাইকারি বাজারে ১২-১৫ টাকায় বড় ফুলকপি বিক্রি করছেন। ফলে কলকাতার খুচরো বাজারে সেই ফুলকপি ২০-২৫ বা ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ফুলকপিতে একটু কড়াইশুঁটি দিতে গেলে দাম পড়বে ৬০-৮০ টাকা কেজি। শীতের বেগুনের দাম তুলনায় কিছুটা কম। ভাজা, পোড়া বা বেগুনি খাওয়ার জন্য শহরের খুচরো বাজারগুলিতে ৩০-৪০ টাকায় ভাল বেগুন পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু শীতের সময়ে স্বাদ বদলাতে পটল খেতে গেলে খরচ পড়ছে ভালই। সাদা পটলের দাম এখন ৬০-৮০ টাকা কেজি। গত কয়েক দিনের মতো শনিবারও উত্তরের দমদম, মানিকতলা বা দক্ষিণের গড়িয়াহাট, লেক মার্কেটের মতো খুচরো বাজারগুলিতে ফুলকপির দাম ছিল খানিকটা চড়া। তবে প্রতিটি বাজারেই ফুলকপি-সহ ঢালাও শীতের আনাজ বিক্রি হয়েছে।
শিয়ালদহের কোলে মার্কেটের চিফ সুপারভাইজার উত্তম মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, মাঝে ঠান্ডা ছিল না বলে ফুলকপির দামও পাইকারি বাজারে বেশ কম ছিল। কয়েক দিনে কলকাতা-সহ প্রতিটি জেলায় ভাল ঠান্ডা পড়ায় শীতের আনাজের দামও কিছুটা ওঠা-নামা করছে। তবে কোলে মার্কেটেও ফুলকপির দাম যে আগের তুলনায় বেড়েছে, তা তিনি মেনে নিয়েছেন।
কৃষিবিজ্ঞানীদের বক্তব্য, ঠান্ডা পড়ার আগে যে সব ফুলকপি পাওয়া যাচ্ছিল, সেগুলি অন্তত ৫০-৫৫ দিন আগে লাগানো। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী কৌশিক ব্রহ্মচারীর মতে, জমিয়ে ঠান্ডা পড়লে তবেই ফুলকপির মান ভাল হবে। অনেক চাষি না জেনেই দ্রুত ফলনের বীজ লাগিয়ে ফেলেন। সেই সব ফুলকপি অল্প ঠান্ডাতেই দ্রুত বড় হয়ে যায়। কিন্তু তার স্বাদ ততটা ভাল হয় না। এ বার ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। কৃষকদের আশা, ফুলকপি-সহ অন্যান্য শীতের আনাজের ফলন ভাল হবে। স্বাদে-গুণেও মানুষের মন ভরাবে।