Advertisement
E-Paper

ঘটনার পরদিন আরজি করে বিক্ষোভের মুখে নতুন অধ্যক্ষ, পড়ুয়ারা অভিযোগ করছেন হুমকি আর ভয় দেখানোর

স্নাতকোত্তর স্তরের চিকিৎসক-পড়ুয়ারা দুপুরে বলছিলেন, “আতঙ্কে রয়েছেন এমবিবিএসের পড়ুয়ারা। হুমকি ও ভয় দেখানো চলছেই।” আন্দোলনকারী ছাত্রীরা ভাঙা মঞ্চে দাঁড়িয়েই পুলিশের ভূমিকায় সরব।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২৪ ০৮:০৯
ভাঙচুর হওয়া জরুরি বিভাগ।

ভাঙচুর হওয়া জরুরি বিভাগ। —নিজস্ব চিত্র।

মনে হচ্ছে কোনও ভূমিকম্প বা বোমা বিস্ফোরণ ঘটে গিয়েছে। যেখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসেন জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা নিতে, সেই হাসপাতাল আজ ধ্বংসস্তূপ! মেঝেতে ছড়িয়ে অজস্র কাচের টুকরো। রোগীর শয্যা উল্টে পড়ে রয়েছে। জীবনদায়ী ওষুধ, ইঞ্জেকশন রাখার ফ্রিজ ভাঙাচোরা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আধ-ভাঙা ভেন্টিলেশন যন্ত্র থেকে কার্ডিয়াক মনিটর। কোল্যাপসিবল গেট থেকে কাচের দরজা সব উপড়ে পড়ে রয়েছে। লন্ডভন্ডের ছবিটা বাইরেও স্পষ্ট। আবাসিক চিকিৎসকদের আন্দোলনস্থল একেবারে তছনছ হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে, তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার খুনের প্রতিবাদ-আন্দোলনের আঁচে উত্তপ্ত শহরে খাস আরজি কর হাসপাতালেই এমন বিধ্বংসী তাণ্ডব চালিয়েছে দুর্বৃত্তেরা।

এ দিন সকালেও শহরের ওই মেডিক্যাল কলেজে জরুরি বিভাগের গেটের সামনে থেকেই তাণ্ডবের চিত্র ছিল স্পষ্ট। গেটের পাশে পুলিশের বসার বড় গুমটি উল্টে পড়ে রয়েছে। অস্থায়ী আন্দোলন মঞ্চে বাঁশ-ত্রিপল দিয়ে বানানো ছাউনি এক দিকে হেলে গিয়েছে। সামনেই ডাঁই করে রাখা প্লাস্টিকের চেয়ারের ভগ্নাংশ। মাটিতে ভেঙে পড়ে রয়েছে স্ট্যান্ডপাখা। ঠিক তার ডান পাশের র‌্যাম্প দিয়ে উঠলেই জরুরি বিভাগে ঢোকার মূল গেট। ভাঙা কোল্যাপসিবল গেট পেরিয়ে ঢুকে প্রথমেই মেডিক্যাল অফিসারের রুম। উল্টো দিকে ভর্তির কাউন্টার। দু’টি ঘরেই চেয়ার-টেবিল থেকে শুরু করে কম্পিউটার ভেঙে তছনছ। পাশে অক্সিজেন কিয়স্কের প্রতিটি শয্যা লন্ডভন্ড। আছড়ে ভাঙা হয়েছে কম্পিউটারগুলি। সেখান থেকে আরও ভিতরে এগোলেও থমকাতে হয়। কোল্যাপসিবল গেট ভাঙা। ভিতরের করিডর অন্ধকার। হামলায় ভেঙে ফেলা হয়েছে সিসি ক্যামেরা থেকে আলো। মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে এগোলেও, পা ফেলতে হচ্ছিল সাবধানে। কারণ চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে কাচের টুকরো থেকে লোহার গ্রিল, জানলা। করিডর ধরে খানিক এগোতেই, নার্সিং স্টেশন ও জরুরি বিভাগের পর্যবেক্ষণ রুম। সেখানে আস্ত নেই একটা শয্যাও। পিটিয়ে ভাঙা হয়েছে আসবাবপত্রও।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক থেকে নার্সেরা জানাচ্ছেন, তিন তলার নাক-কান-গলা (ইএনটি) বিভাগেও ভাঙচুর করা হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, তরুণীর দেহ মিলেছিল থার্ড ফ্লোর অর্থাৎ চারতলায়। আর, সেটিকে তিন তলা ভেবেই ইএনটি-বিভাগে গিয়ে ভাঙচুর করেছে দুষ্কৃতীরা। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি চারতলার পালমোনারি বিভাগেও তাণ্ডব চালিয়ে আরও কিছু তথ্য-প্রমাণ লোপাটের পরিকল্পনা ছিল?

স্নাতকোত্তর স্তরের চিকিৎসক-পড়ুয়ারা দুপুরে বলছিলেন, “আতঙ্কে রয়েছেন এমবিবিএসের পড়ুয়ারা। হুমকি ও ভয় দেখানো চলছেই।” আন্দোলনকারী ছাত্রীরা ভাঙা মঞ্চে দাঁড়িয়েই পুলিশের ভূমিকায় সরব। স্লোগান উঠেছে, ‘হামলা চালিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।’

দুপুর ১টা নাগাদ আরজি করের পরিস্থিতি দেখতে আসেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। আবাসিক চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করে তিনি জরুরি বিভাগের পরিস্থিতি দেখতে চলে যান। চারতলার পালমোনারি বিভাগেও যান তিনি। এর পরে তিনি নীচে নেমে আরজি করের অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল, সুপার বুলবুল মুখোপাধ্যায় ও নার্সিং সুপার কৃষ্ণা সাহাকে ডেকে পাঠান। তখনই হাসপাতালের প্ল্যাটিনাম জুবিলি ভবনের সামনে বিক্ষোভ চলেছে নার্সদের। তাঁরা দাবি তুলেছেন, রাতের নিরাপত্তা দেবে কে? আন্দোলনকারী আবাসিক চিকিৎসকেরাও তাঁদের পাশে দাঁড়ান। শেষে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার জন্য বেরোতেই অধ্যক্ষ ও অন্য আধিকারিকেরা নার্সদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। রাজ্যপালের সামনেই “উই ওয়ান্ট জাস্টিস, গো ব্যাক প্রিন্সিপাল” বলে স্লোগান দেন নার্সদের একাংশ।

পাশাপাশি নার্সদের অভিযোগ, পুলিশ সব জেনেও জমায়েত হতে দিয়েছিল। আর তা থেকেই হামলা চালানো হয়। বুধবার রাতে ডিউটিতে থাকা এক নার্স আলপনা গোস্বামী বলেন, “আমি পাঁচ তলায় ছিলাম। উপর থেকে ভাঙচুরের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। দুষ্কৃতীরা তিন তলা পর্যন্ত উঠেছিল। মনে হয় ওদের টার্গেট ছিল সেমিনার রুম। কিন্তু সেটা চিনতে পারেনি।” জরুরি বিভাগের এমআরআই বিভাগের ভিতরে অধ্যক্ষের সঙ্গে কিছু ক্ষণ কথা বলে বেরিয়ে যান রাজ্যপাল। এর পরেও আন্দোলনকারী চিকিৎসক, নার্সেরা অধ্যক্ষকে ঘিরে ধরে দীর্ঘ ক্ষণ বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সেখানে এসে যোগ দেন বেশ কয়েক জন সিনিয়র চিকিৎসকও। দাবি ওঠে, এ হেন ঝামেলা-হামলার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, তা নিশ্চিত করে লিখে দিতে হবে অধ্যক্ষকে।

দাবি ওঠে, “কলকাতা পুলিশে বিশ্বাস নেই। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করতে হবে।” বিক্ষোভকারীদের দাবি মেনে এক ঘণ্টা বাদে বৈঠকে বসেন অধ্যক্ষ। তিনি জানান, অন্যান্য হাসপাতাল থেকে নিরাপত্তা রক্ষীদের আনা হচ্ছে। তাঁদের নিয়ে দল তৈরি করে রাতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। যদিও এই ব্যবস্থাপনায় খুশি নন বলেই জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

R G Kar Medical College and Hospital Kolkata Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy