Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নাগজিরার জয়কে মনে পড়াচ্ছে লালগড়ের বাঘ

নাগজিরার জঙ্গলে দু’টি পুরুষ বাঘের ছানা ছিল। একটির কপালে ইংরেজির ‘ভি’-র মতো চিহ্ন থাকায় বনকর্মীরা তার নাম দেন, বীরু। তামাম ভারতবর্ষে ‘বীরু’ মানেই রমেশ সিপ্পির ‘শোলে’, বীরুর সঙ্গীর নাম অবধারিত ভাবেই ‘জয়’।

বাঘের-খোঁজে: দাঁতালের দাপাদাপিতে ভেঙেছিল ক্যামেরা। মেরামত করে ফের তা লাগানো হল মেলখেররিয়ার জঙ্গলে। সোমবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

বাঘের-খোঁজে: দাঁতালের দাপাদাপিতে ভেঙেছিল ক্যামেরা। মেরামত করে ফের তা লাগানো হল মেলখেররিয়ার জঙ্গলে। সোমবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ০১:৫১
Share: Save:

কোথায় গেল লালগড়ের বাঘ! ফাঁদ-খাঁচায় সে ধরা পড়েনি, উল্টে লালগড় ছাড়িয়ে এখন সে পশ্চিম মেদিনীপুরের ধেড়ুয়ায় পাড়ি দিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। আর এ সবে ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে রয়্যাল বেঙ্গল রহস্য! আর সেই সূত্রে উঠে আসছে ‘জয়’-এর নাম।

সাম্প্রতিক অতীতে এক জঙ্গল থেকে অন্য জঙ্গলে পাড়ি দেওয়া এইন জয় বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ মহলে চেনা নাম। শুধু তাই নয়, একদা মহারাষ্ট্রের নাগজিরার বাসিন্দা বাধ জয় যে ভাবে ঠাঁই বদল করতে করতে উধাও হয়ে গিয়েছে, লালগড়ের আগন্তুকও তেমনই করবে কি না, তা নিয়েও চর্চা চলছে বনকর্তাদের মধ্যে।

নাগজিরার জঙ্গলে দু’টি পুরুষ বাঘের ছানা ছিল। একটির কপালে ইংরেজির ‘ভি’-র মতো চিহ্ন থাকায় বনকর্মীরা তার নাম দেন, বীরু। তামাম ভারতবর্ষে ‘বীরু’ মানেই রমেশ সিপ্পির ‘শোলে’, বীরুর সঙ্গীর নাম অবধারিত ভাবেই ‘জয়’। তাই নাগজিরার অন্য বাঘটির নাম হয় জয়। নাম সার্থক হয়েছিল চেহারাতেও। বলিউডের ছ’ফুট দুই ইঞ্চির মতো নাগজিরার জয়ও আকারে আর পাঁচ জনের তুলনায় বড়সড় ছিল। ব্যাঘ্রকূলের এমন ‘হিরো’ সঙ্গী বীরুকে ছেড়ে, নাগজিরার চেনা চৌহদ্দি ছে়ড়ে পাড়ি দেয় অজানা গন্তব্যে। কয়েক বছর পরে মহারাষ্ট্রের উম্রেদ কারহান্ডলায় একটি অতিকায় বাঘের অস্তিত্ব জানা যায়। পরে দেখা গিয়েছিল, সেটি জয়। প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পা়ড়ি দিয়ে নয়া আস্তানা খুঁজে নিয়েছে সে।

কয়েক বছর উম্রেদ কারহান্ডলায় ঘর সংসার করে ফের উধাও হয়েছে জয়। বাঘ বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘জয়কে আন্ধোরি তাড়োবার জঙ্গলে জয়কে শেষ দেখা গিয়েছিল। তার পর আর দেখা যায়নি।’’

লালগড়ের আগন্তুক কোথা থেকে এসেছে তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। তবে আদতে সে ‘ওডিয়া’ বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। জাতীয় ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের প্রাক্তন সদস্য-সচিব বিষণ সিংহ বোনাল বলছেন, ‘‘ওডিশার সিমলিপালের জঙ্গল থেকেই বাঘটির পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। নতুন ঠিকানা খুঁজতে বাঘেরা এমন দূরে পাড়ি দেয়।’’ বন দফতরের সূত্র জানাচ্ছে, সিমলিপালের উত্তর ভাগে বাঘের থাকার সমস্যা হচ্ছে। ফলে বাংলা লাগোয়া উত্তর সিমলিপাল থেকেই এই বিরাট মাপের বাঘটি চলে এসেছে।

অনেকের মতে, উম্রেদের জোয়ান বাঘদের সঙ্গে এলাকা দখলের লড়াই এড়াতেই ঠাঁই বদলেছে জয়। লালগড়ের বাঘমামাও পূর্ণবয়স্ক। এলাকায় গোলমাল হওয়াতেই সে পালিয়ে এসেছে কি না, সেটাও জল্পনার বিষয়।

কিন্তু সে গেল কোথায়? আগন্তুকের পুরনো ঠিকানা নিয়ে যেমন নিশ্চয়তা নেই, তেমনই সে লালগড় এলাকাতেই রয়েছে নাকি ফের নতুন ঠিকানায় পাড়ি দিয়েছে তা নিয়েও ধন্দ রয়েছে। দিন কয়েক হল ওই জঙ্গলে কোনও গবাদি পশু মারা যায়নি, শিকারের চিহ্ন মেলেনি। খাঁচার ছাগলের টোপেও পা দেয়নি সে। তবে রবিবার সন্ধ্যায় মধুপুর খালের ধারে বাঘের পায়ের ছাপ মিলেছে। ধেড়ুয়াতেও তাকে দেখা গিয়েছে বলে খবর। তবে ঠিক কোন জঙ্গলে সে ঘাপটি মেরে রয়েছে, তার ঠাওর বন দফতর করতে পারছে না।

লালগড়ের রয়্যাল বেঙ্গল রহস্য ভেদেও কি তবে ফেলুদাই ভরসা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE