রাজ্যের এক-তৃতীয়াংশ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই। ওই সব পদে নিয়োগের জন্য ফের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে চলেছে সরকার। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি জারি হলেও প্রধান শিক্ষকহীন তিন হাজার স্কুলের মধ্যে ক’টিতে লোক দেওয়া যাবে, তা নিয়ে সন্দিহান স্কুলশিক্ষা দফতরই।
এই সংশয়-সন্দেহের কারণ কী?
স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, প্রধান শিক্ষকের পদে যাঁরা আবেদন করেন, তাঁরা শিক্ষাগত যোগ্যতামান পূরণ করলেও তাঁদের আলাদা ভাবে একটি লিখিত পরীক্ষায় বসতে হয়। সেই পরীক্ষায় যাঁরা উত্তীর্ণ হন, ইন্টারভিউয়ে ডাকা হয় শুধু তাঁদেরই। প্রধান শিক্ষকের পদ কারা পেতে পারেন, সেই তালিকা তৈরি হয় ইন্টারভিউয়ের পরে। ২০১৩ সালে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদের জন্য আবেদনকারীদের যে-লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল, যাবতীয় সন্দেহের মূলে আছে তার শোচনীয় ফলাফল।
কী রকম ফল হয়েছিল সে-বার?
স্কুল সার্ভিস কমিশনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ২০১৩-র প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় অনেক প্রার্থীই ইংরেজি ব্যাকরণে শূন্য পেয়েছিলেন। অন্যান্য বিষয়েও যোগ্যতামান টপকাতে পারেননি অনেকে। এ বার প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় প্রশ্নের মান আরও উন্নত করার অর্থাৎ যোগ্যতামান আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাতে উত্তীর্ণের হার যে আরও কমবে, সেই বিষয়ে দুশ্চিন্তা গোপন করতে পারছেন না কমিশনের অনেক কর্তাই। ‘‘আমরা চাই না, নিযুক্ত হওয়ার পরে কোনও প্রধান শিক্ষকের যোগ্যতামান নিয়ে প্রশ্ন উঠুক,’’ বলেন এক কমিশন-কর্তা।
প্রধান শিক্ষকের পদে প্রার্থীদের বড় একটা অংশ যোগ্যতামানই পেরোতে পারছেন না কেন?
‘‘শিক্ষার মান যে-ভাবে নেমেছে, তাতে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রধান শিক্ষক পাওয়াই দুষ্কর। এটা মোটেই কারও ব্যক্তিগত ভাল-খারাপের ব্যাপার নয়। সামগ্রিক ভাবেই শিক্ষার মান নেমে গিয়েছে,’’ পর্যবেক্ষণ পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক নীহারেন্দু চৌধুরীর। ২০১৩-য় যোগ্যতামান বা নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নের মান যা ছিল, তাতেই অধিকাংশ প্রার্থী কুপোকাত হয়ে গিয়েছিলেন। ‘‘তার পরে যোগ্যতামান যে-ভাবে বাড়ানো হল, তাতে সব শূন্য পদ আদৌ পূরণ হবে কি না, সেই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে,’’ বলেন বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল।
স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে উচ্চ প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার। তার মধ্যে তিন হাজারেরও বেশি স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদ ফাঁকা। ওই সব স্কুলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের পদপ্রার্থী তাঁদেরই এক জনের মন্তব্য, ‘‘এখন প্রধান শিক্ষকদের যে-সব কাজ করতে হয়, তাতে কে কোন বিষয়ে কত নম্বর পেলেন, সেটা বিচার্য নয়। প্রধান শিক্ষকদের এখন তো আর পড়াতে হয় না। তাঁরা প্রধানত আমলা। তাই প্রার্থীদের ম্যানেজমেন্ট প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রধান শিক্ষকের পদে বসালেই ভাল কাজ পাওয়া যাবে!’’
যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না-পারাটা প্রধান শিক্ষকের পদে নতুন প্রার্থীদের সমস্যা। আর পড়ানো বাদ দিয়ে আমলাগিরি করতে বাধ্য হওয়াটাই ব্যথা দিচ্ছে কর্মরত প্রধান শিক্ষকদের। তাঁরা ইতিমধ্যেই যৌথ ভাবে আবেদন জানিয়েছেন, তাঁদের পড়ানোর কাজ ফিরিয়ে দেওয়া হোক। স্কুলের প্রশাসনিক কাজ চালানোর জন্য নেওয়া হোক অন্য লোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy