লর্ডসের এমসিসি মিউজ়িয়ামে রাখা সেই ‘উড়ন্ত চড়ুই ও বল’। নিজস্ব চিত্র।
এ এক সাত সমুদ্র-পারের উড়ন্ত চড়ুই পাখির গল্প। মৃত্যুর ৮৬ বছর পরে আজও যে পাখিটি তার সেই ‘নিয়তি’র প্রাক-মুহূর্তটি নিজের উড়ন্ত শরীরে মূর্ত করে ‘বেঁচে’ আছে এক জাদুঘরে। সেই মৃত্যুগাথার সঙ্গে উইলিয়াম শেক্সপিয়রের লেখা চারশো বছরেরও পুরনো এক ধ্রুপদী নাটকের উপজীব্য ‘নিয়তিবাদের’ মিল খুঁজে পেলেন এক বাঙালি।
বিশ্ব ক্রিকেটের ‘মক্কা’ ইংল্যান্ডের লর্ডসের মাঠ লাগোয়া এমসিসি মিউজ়িয়ামে ক্রিকেট ইতিহাসের নানাবিধ সংগ্রহের সঙ্গে সযত্নে রক্ষিত আছে একটি ‘উড়ন্ত চড়ুই পাখি’, যার নীচে রাখা একটি লাল ক্রিকেট বল। নীচে লেখা, ‘দ্য স্প্যারো অন দ্য বল’। ক্রিকেটীয় যত বিষাদ-গাথা আছে এ বিশ্বে, এটি তার মধ্যে অন্যতম।
যাঁরা এই মিউজ়িয়ামে গিয়েছেন, তাঁরা জানেন এই কাহিনি। ১৯৩৬ সালে ৩ জুলাই লর্ডসের মাঠে মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট ম্যাচ চলছিল। কেমব্রিজের ফাস্ট বোলার ভারতীয় বংশোদ্ভূত জাহাঙ্গির খানের ছোড়া বল লেগে স্টাম্পের পিছনে চড়ুইটি মারা যায়। ব্যাটসম্যান ছিলেন টম পিয়ার্স। ক্রিকেটের মাঠে এমন ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে ওই চড়ুই পাখিটির মৃতদেহটি সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেন এমসিসি কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে সে বলটিও। ৮৬ বছর ধরে সেই বলের উপরে ‘স্টাফ’ করা উড়ন্ত চড়ুইটি রাখা আছে মিউজ়িয়ামে। বছরের পরে বছর ধরে ক্রিকেটপ্রেমীরা এটি দেখে এর পিছনের কাহিনিরও খোঁজ নেন।
এ বার সেই চড়ুইয়ের মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে শেক্সপিয়রের ‘হ্যামলেট’ নাটকে হ্যামলেটের এক সংলাপের মর্মার্থের মিল খুঁজলেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত ইংরেজির অধ্যাপক চন্দনআশিস লাহা। বছর দু’য়েক আগে, শিলিগুড়ির বাসিন্দা চন্দনবাবু ই-মেল করেন লর্ডসের জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে। সেখানে তিনি নিয়তির প্রকৃতি নিয়ে হ্যামলেটের এক উদ্ধৃতি তুলে ধরেন। সেটি হল, ‘দেয়ার ইজ় আ স্পেশাল প্রভিডেন্স ইন দ্য ফল অফ আ স্প্যারো’। প্রাক্তন এই অধ্যাপক জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে সেই সঙ্গে লেখেন, ‘আপনাদের সংরক্ষিত চড়ুই পাখির নিদর্শনের ক্যাপশন হিসাবে হ্যামলেটের এই সংলাপটি ব্যবহার করতে পারেন।’
করোনা-কালের জন্য সব যোগাযোগ বন্ধ ছিল। তবে জবাব এসেছে কিছু দিন আগে। ওই জাদুঘর এবং গ্রন্থাগারের কর্তা রর্বাট কারফি দু’টি ইমেল করেছেন চন্দনআশিসকে। হ্যামলেটের ওই উদ্ধৃতিটি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন কারফি। তার পরে লিখেছেন, ‘আমরা সময়ে সময়ে জাদুঘরের নিদর্শনের ক্যাপশন অদলবদল করে থাকি। সময় মতো আপনার উল্লিখিত ক্যাপশন অবশ্যই বিবেচিত হবে। এমন বিষয় আমরা আগে ভাবিনি। আপনি তা আমাদের সামনে তুলে ধরায় আমরা ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ এই চিঠি পেয়ে উৎসাহিত অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটের প্রতি অসীম ভালবাসা। জেলায় জুনিয়র পর্যায়ে ক্রিকেটও খেলেছি। হ্যামলেট পড়তে গিয়েই চড়ুইয়ের কথা এবং বহু দিন আগে শোনা লর্ডস মিউজ়িয়ামের চড়ুই পাখির গল্পের মিল খুঁজে পাই। শেষে চিঠি দিয়ে বসি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy