বিরল খনিজ চুম্বক ক্ষেত্রে কি বিদেশি নির্ভরতা কমাতে চাইছে ভারত? বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এক সিদ্ধান্তে এমনটাই আভাস মিলেছে। বিরল খনিজ চুম্বক সংক্রান্ত একটি প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভা। প্রকল্পের পোশাকি নাম— স্কিম টু প্রোমোট ম্যানুফ্যাকচারিং অফ সিন্টার্ড রেয়ার আর্থ পার্মানেন্ট ম্যাগনেট। বিশ্ব বাজারে বিরল খনিজ ক্ষেত্রে চিনের আধিপত্য এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সাম্প্রতিক টানাপোড়েনের প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এই প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক ভাবে ৭২৮০ কোটি টাকা ব্যয় ধার্য করেছে কেন্দ্র। নয়াদিল্লির দাবি, দেশে বিরল খনিজ চুম্বক সংক্রান্ত এই ধরনের পদক্ষেপ এই প্রথম। বৈঠকের পরে এক বিবৃতিতে কেন্দ্র জানিয়েছে, এর মাধ্যমে দেশে প্রতি বছর ৬ হাজার টন বিরল খনিজ প্রক্রিয়াকরণ করে স্থায়ী চৌম্বক পদার্থ তৈরি করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশ বিরল খনিজ থেকে স্থায়ী চৌম্বক পদার্থ উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়ে উঠবে। একই সঙ্গে বিরল খনিজের আন্তর্জাতিক বাজারেও ভারতের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি কেন্দ্রের।
নিওডিমিয়াম বা সামারিয়ামের মতো বিরল খনিজগুলি দিয়ে শক্তিশালী স্থায়ী চৌম্বক পদার্থ তৈরি করা যায়। বর্তমানে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এই বিরল খনিজগুলির গুরুত্বও বৃদ্ধি পেয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে। ইলেকট্রিক মোটর, ড্রোন, স্মার্টফোন-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ তৈরিতে এগুলির প্রয়োজন হয়। বৈদ্যুতিক গাড়ি, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানী তৈরি, বিমান পরিবহণ ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ক্ষেত্রেও এ ধরনের চৌম্বক পদার্থ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই বিরল খনিজের দুনিয়ায় চিনের একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে বরাবর। আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশ চিন থেকে এই পণ্য কিনে থাকে। ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। এ ক্ষেত্রে অনেকাংশে বেজিঙের উপরেই নির্ভরশীল দিল্লি।
সাম্প্রতিক সময়ে চিনের বিরল খনিজ রফতানিতে কিছু কড়াকড়ির ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে শোরগোল পড়ে যায়। বিভিন্ন দেশে বিরল খনিজ সরবরাহের উপর প্রভাব পড়ে। বেজিং দেশে দেশে একটি নির্দেশিকা পাঠিয়ে জানিয়েছে, তারা বিরল খনিজ রফতানি নিয়ন্ত্রণ নীতি কার্যকর করতে চলেছে। চিনের অভিযোগ, তাদের পণ্য বিভিন্ন দেশ সামরিক খাতে কাজে লাগাচ্ছে। বিশ্ব শান্তির কথা ভেবে তাই তারা বিরল খনিজের রফতানিতে কিছু বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরও পড়ুন:
ভারতেও প্রায় ছ'মাস বিরল খনিজ রফতানি বন্ধ রেখেছিল চিন। পরে গত মাস থেকে আবার শর্তসাপেক্ষে রফতানি শুরু করেছে। ভারতের চারটি কোম্পানিকে বিরল খনিজ সরবরাহ করবে চিন। সেই চার সংস্থা হল— হিতাচি, কন্টিনেন্টাল, জে-শিন এবং ডিই ডায়মন্ডস। তবে শর্ত হিসাবে বলা হয়েছে, চিন থেকে আমদানি করা বিরল খনিজ আমেরিকাকে রফতানি করা যাবে না। একই সঙ্গে সামরিক খাতেও ব্যবহার না-করার কথাই জানিয়েছে বেজিং।
এ অবস্থায় বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বৈঠক শেষের এক বিবৃতিতে কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশজুড়ে এই ধরনের স্থায়ী চৌম্বক পদার্থের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। এখনের তুলনায় ২০৩০ সালে এর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এখন যে এগুলি বিদেশ থেকে কিনে আনতে হয়, তা-ও বিবৃতিতে জানিয়েছে দিল্লি।