Advertisement
E-Paper

রাজ্যের ১২ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র বাতিল সংক্রান্ত একটি মামলা খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট

বিচারপতি বিআর গবই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মসিহের বেঞ্চ নতুন মামলায় জানিয়েছে, ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল নিয়ে হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তাতে হস্তক্ষেপ করা হবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৪২
সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের ওবিসি শংসাপত্র বাতিল সংক্রান্ত মামলা।

সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের ওবিসি শংসাপত্র বাতিল সংক্রান্ত মামলা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ইনলাইন।

রাজ্যের ১২ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র বাতিল সংক্রান্ত একটি মামলা খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। ওবিসি শংসাপত্র বাতিল সংক্রান্ত মামলা অনেক দিন ধরেই চলছে শীর্ষ আদালতে। তার মধ্যে সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি নতুন মামলা দায়ের হয়। ওবিসি শংসাপত্রের বিষয়ে গত ৬ জানুয়ারি দায়ের হওয়া একটি মামলা খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। গত ৩১ জানুয়ারি ওই মামলায় বিচারপতি বিআর গবই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মসিহের বেঞ্চ জানায়, ওবিসি শংসাপত্র বাতিল নিয়ে কলকাতা হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তাতে হস্তক্ষেপ করা হবে না।

গত বছর ২২ মে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এবং বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের প্রায় ১২ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করে দেয়। হাই কোর্ট জানায়, ২০১০ সালের পর থেকে পদ্ধতি মেনে ওই সব সার্টিফিকেট তৈরি করা হয়নি। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। পরে রায়কে চ্যালেঞ্জ করে পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনও। সেই মামলার শুনানি শীর্ষ আদালতে চলছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানি রয়েছে। সেটিরও শুনানি হচ্ছে বিচারপতি গবইয়ের বেঞ্চেই। এরই মধ্যে এ বিষয়ে নতুন করে দায়ের হওয়া মামলা খারিজ করে দিল শীর্ষ আদালত।

ওবিসি শংসাপত্র সংক্রান্ত বিষয়ে হাই কোর্টে মামলাটি করেছিলেন অমলকুমার দাস। ওই মামলায় তাঁর পক্ষে রায় দেয় হাই কোর্ট। বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয় প্রায় ১২ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে প্রথম সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। শীর্ষ আদালতে মূল মামলাটি চলছে রাজ্য সরকার বনাম অমলকুমার দাসের। এরই মধ্যে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ৬ জানুয়ারির নতুন মামলা করে অবনীকুমার ঘোষ। এই মামলাটিতে মোট তিনটি বিবাদী পক্ষ রয়েছে। রাজ্য সরকার, পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর শ্রেণি কমিশন এবং অমলকুমার দাস। নতুন মামলাটিতে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, হাই কোর্টের রায়ে হস্তক্ষেপ করা হবে না। তাঁর মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ। দুই বিচারপতির বেঞ্চ এও জানিয়েছে, যদি এই সংক্রান্ত কোনও আবেদন বিচারাধীন থাকে, তবে তা-ও নিষ্পত্তি করা হল।

এই অবস্থায় ওবিসি শংসাপত্র সংক্রান্ত মামলা রাজ্যের আবেদনের মূল মামলার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে অনেকের মনে। এটি নিয়ে আইনজীবী মহলে দুই রকম মত উঠে আসছে। আইনজীবীদের এক পক্ষের মতে, ওই সংক্রান্ত অন্য আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে। ফলে মূল মামলাটিও খারিজ হয়ে যেতে পারে। তা না-হলে ওই আবেদনটি মূল মামলার সঙ্গে যুক্ত করার নির্দেশ দিত সুপ্রিম কোর্ট। যেমন এসএসসির ২৬ হাজার চাকরি বাতিল সংক্রান্ত মামলায় একাধিক আবেদন খারিজ না করে মূল মামলার সঙ্গে যুক্ত করেছে সুপ্রিম কোর্ট।

আবার অন্য পক্ষের আইনজীবীদের মতে, যে আবেদনটি খারিজ করা হয়েছে, তাতে বিবাদী পক্ষের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। মূল মামলা যে খারিজ, এমন কোনও নির্দেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। মূল মামলার শুনানি অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছে। সব পক্ষের আইনজীবীরা একে একে সওয়াল করছেন। মাঝখানে মামলা খারিজ, এটি ধরে নেওয়া মুশকিল। ফলে এখনই এটি বলা সম্ভব নয় যে রাজ্যের মামলায় হাই কোর্টের রায়ে হস্তক্ষেপ করেনি সুপ্রিম কোর্ট। তাঁদের মতে, ওবিসি শংসাপত্র বাতিল মামলা শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা ১৮ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি গবইয়ের বেঞ্চে স্পষ্ট হতে পারে।

হাই কোর্টে মূল মামলাকারীদের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত এবং বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, নতুন মামলাটি খারিজ হওয়ায় মূল মামলায় প্রভাব পড়তে পারে। তাঁরা বলেন, “রাজ্য সরকারের আবেদন করা মূল মামলায় অবশ্যই এটির প্রভাব পড়বে। কারণ একই ধরনের একটি মামলা খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারাধীন মামলাটিতেও তার প্রভাব পড়বে।” সুদীপ্ত জানান, একই নির্দেশের প্রেক্ষিতে একটি মামলা খারিজ হয়ে গিয়েছে। তখন মূল মামলাটিও খারিজ করার জন্য তাঁরা আদালতে আবেদন জানাবেন।

হাই কোর্টের রায়ের পর সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে একটি মামলা করেন আইনজীবী ফিরদৌস শামিমও। তিনিও মনে করছেন, মূল মামলার উপর এই নির্দেশের প্রভাব পড়তে পারে। তিনি বলেন, “মূল মামলাটি এখনও চলছে। কিন্তু এর মধ্যে নতুন একটি মামলা খারিজ হয়ে গিয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ওই মামলায় রাজ্য সরকার অনুপস্থিত। কোনও স্পেশ্যাল লিভ পিটিশনের সময়ে ক্যাভিয়েট দাখিল করা না থাকলে, তাঁদের সেই মামলায় যুক্ত করা হয় না। কিন্তু রাজ্যের তো নিজস্ব স্ট্যান্ডিং কাউন্সেল রয়েছে। কোন কোন মামলা রাজ্যের বিরুদ্ধে, সেগুলি দেখার জন্যই রাজ্যের নিজস্ব স্ট্যান্ডিং কাউন্সেল থাকে। একটি মামলা খারিজ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও রাজ্য সেখানে উপস্থিত হয়ে জানাবে না মূল মামলার কথা? তারা সেটি না জানানোর ফলে অন্য পক্ষ পরের শুনানিতে দেখাবে, মামলাটি খারিজ হয়ে গিয়েছে।” ফিরদৌসের দাবি, রাজ্য অনুপস্থিত থেকে একটি পক্ষকে মামলায় সাহায্য করে দিয়েছে।

OBC Certificate OBC Supreme Court West Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy