Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নাকাশিপাড়া জুড়ে ভেজাল মশলার ডেরা

স্থানীয় পরিভাষায় এর নাম ‘গ্যাস চেম্বার’-এর ব্যবসা। যে-হেতু ‘এয়ারটাইট’ বা বদ্ধ ঘরে একটি যন্ত্রে বিষাক্ত উপকরণের সঙ্গে মশলা মিশিয়ে পাক দেওয়ার সময়ে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে প্রচণ্ড গ্যাস বেরোয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুরবেক বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৭ ১১:৪০
Share: Save:

হদিস পেয়ে হাতেনাতে ধরা গিয়েছে মাত্র দু’টি কারখানার মালিকদের। তবে নদিয়ার নাকাশিপাড়ায় ভেজাল মশলা তৈরির আরও গোটা দশেক কারখানা আছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জেনেছেন রাজ্য পুলিশের এনফোর্সমেন্ট শাখা (ইবি)-র গোয়েন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, ধনের সঙ্গে গন্ধক ও লাল মাটি এবং কালো জিরের সঙ্গে মোবিল দিয়ে রং করা মাটি ও শুকনো পিচের গুঁড়ো মিশিয়ে ভেজাল মশলার কারবার নদিয়ার ওই তল্লাটে বছরের পর বছর ধরে চলছে।

স্থানীয় পরিভাষায় এর নাম ‘গ্যাস চেম্বার’-এর ব্যবসা। যে-হেতু ‘এয়ারটাইট’ বা বদ্ধ ঘরে একটি যন্ত্রে বিষাক্ত উপকরণের সঙ্গে মশলা মিশিয়ে পাক দেওয়ার সময়ে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে প্রচণ্ড গ্যাস বেরোয়। সেই গ্যাসের উৎকট গন্ধে অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বহু বার অভিযোগ জানালেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে এখন জানতে পারছে ইবি।

নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া অবশ্য বলেন, ‘‘ইবি গোটা বিষয়টির তদন্ত করছে। এই বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’’ বৃহস্পতিবার ইবি নাকাশিপাড়া এলাকার জোতশুকা গ্রামে এমনই একটি কারখানা থেকে ২৫ হাজার কিলোগ্রাম এবং বীরপুর গ্রামের একটি কারখানা থেকে ১২ হাজার কিলোগ্রাম ভেজাল ধনে উদ্ধার করেছে। জোতশুকার কারখানাটির মালিক সুশীল বিশ্বাস এবং বীরপুরের কারখানার মালিক বিপ্লব ঘোষকে গ্রেফতার করেছে তারা। সুশীলের কারখানায় ৩০০ কিলোগ্রাম ভেজাল কালো জিরে পাওয়া গিয়েছে।

ইবি সূত্রের খবর, তদন্তে জানা গিয়েছে, সুশীল চার বছর এবং বিপ্লব তিন বছর ধরে মশলায় ভেজাল দেওয়ার কারবার করছেন। বিহারের সমস্তিপুর থেকে মশলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা যেমন যেমন বরাত দিতেন, সেই অনুযায়ী তৈরি হতো ভেজাল মশলা। ভেজাল ধনে বিক্রি হতো ৫০ টাকা কিলোগ্রাম দরে। আর এক কিলোগ্রাম ভেজাল কালো জিরের দাম ৭০ টাকা। এমনিতে খুচরো বাজারে নামী কোম্পানির মোড়কে গোটা ধনে ২০০ টাকা এবং কালো জিরে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। ইবি জানাচ্ছে, মূলত ওজন বাড়াতেই ভেজাল উপকরণ মেশানো হতো বলে জেরার মুখে স্বীকার করেছেন ধৃত ব্যবসায়ীরা। তবে ধনের সঙ্গে গন্ধক মেশালে গন্ধও তীব্র হতো। অনেকেই ভাবতেন, মশলার গুণমান নিশ্চয়ই অত্যন্ত ভাল!

‘‘গন্ধক মেশানো ধনে মশলা হিসেবে দিনের পর দিন খাওয়া মানে ‘স্লো পয়জনিং’। গন্ধকের প্রভাবে ধীরে ধীরে রক্তাল্পতা ও স্নায়ুর বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে,’’ বলছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অরিজিৎ রায়চৌধুরী। তিনি জানান, ভেজাল কালো জিরেতে যে-মোবিল ও পিচ থাকে, তা থেকে ক্যানসারের সূচনা হতে পারে। দেখা দিতে পারে ফুসফুস, মূত্রথলি, পেটের সমস্যাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE