E-Paper

স্কুল থাকলেও শূন্য ক্লাসঘর, রাজপথে নেমেছেন শিক্ষকেরা

স্কুল চলছে পরিকাঠামো ছাড়াই, এমনটা প্রায়শই শোনা যায়। সেখানে পানীয় জল, স্কুল কক্ষ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাব ও নানা ধরনের অভিযোগের কথা উঠে আসে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:১৫
SCHOOL.

—প্রতীকী ছবি।

ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম চক্রে ভালুকগাজরী গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে শ্রেণিকক্ষ আছে। মিড-ডে মিল রান্নার পরিকাঠামো আছে। শৌচালয় আছে। পানীয় জলের সুব্যবস্থা আছে। নেই শুধু শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাই ছাত্র-ছাত্রীও নেই। খন্ডহরের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে সে।

তালিকাটা দীর্ঘ। রাজ্যে এরকম প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০টি স্কুল রয়েছে, দাবি শিক্ষক সংগঠনের।

আর অন্যদিকের ছবিটাও মলিন। শহরের রাজপথে বসে রয়েছেন এমন কিছু যুবক-যুবতী যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক স্কুলে চাকরির জন্য আবেদন করে বসে রয়েছেন। সেই নিয়োগ বিশ-বাঁও জলে।

স্কুল চলছে পরিকাঠামো ছাড়াই, এমনটা প্রায়শই শোনা যায়। সেখানে পানীয় জল, স্কুল কক্ষ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাব ও নানা ধরনের অভিযোগের কথা উঠে আসে। কিন্তু স্কুলের ভবন থেকে শুরু করে যাবতীয় পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও স্রেফ শিক্ষকের অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে স্কুল, এমনটা আগে বিশেষ শোনা যেত না।

শুধুমাত্র শিক্ষকের অভাবে এমন একাধিক স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা এতটাই কমে গিয়েছে যে সেগুলো বন্ধ করে দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সংগঠন উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। তারা নিজেদের উদ্যোগে রাজ্যের এরকম কিছু প্রাথমিক স্কুল চিহ্নিতও করেছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, শিক্ষক নিয়োগ করে এই স্কুলগুলোকে কেন চালু করা হবে না?

নিজেদের গ্রামে স্কুল থাকলেও ঝাড়গ্রামের ভালুকগাজরীর ছাত্র-ছাত্রীদের রোদ-জল-বৃষ্টি মাথায় করে পড়তে যেতে হয় কয়েক কিলোমিটার দূরে পাশের গ্রামের স্কুলে। ঝাড়গ্রামের শিক্ষক রঞ্জন বেরা বলেন, ‘‘ভালুকগাজরী গ্রামের প্রায় ২০-২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। ওই স্কুলে একজন শিক্ষকও ছিলেন। পরে তাঁকে পাশের স্কুলে বদলি করে দেওয়া হয়। ফলে খানিকটা বাধ্য হয়ে গ্রামের পড়ুয়াদারে ওই পাশের স্কুলেই যেতে হচ্ছে। অথচ চাইলে, ভালুকগাজরীর ওই স্কুলে শিক্ষক সংখ্যা বাড়িয়ে স্কুলটিকে চালু রাখা যেত। একটা গোটা স্কুল সমস্ত পরিকাঠামো নিয়ে পড়ে রয়েছে। শুধু শিক্ষকের অভাবে কেন তা বন্ধ করে দিতে হবে?’’

উস্তি প্রাথমিক শিক্ষক স‌ংগঠনের রাজ্য কমিটির সদস্য ও পশ্চিম বধর্মানের এক শিক্ষক নির্ঝর কুন্ডুর কথায়, ‘‘পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা দু’নম্বর চক্রর বাসুদেবপুর জুনিয়র হাই স্কুল এবং জাঠগড়িয়া জুনিয়র হাই স্কুল দু’টি চলছিল অতিথি শিক্ষকদের দিয়ে। তাঁদের অবসরের পরে সেই স্কুল দু’টোও স্রেফ শিক্ষকের অভাবে বন্ধ হয়ে গেল। অথচ স্কুল দু’টোর সব পরিকাঠামোই রয়েছে। স্কুলে তালা পড়ে যাওয়ায় সেই পরিকাঠামো এখন পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। রাজ্যে এখন এরকম স্কুলের তালিকা বেশ বড়।’’

ওই সংগঠনের রাজ্য কমিটির সদস্য রাজীব দত্ত বলেন, ‘‘শুধুমাত্র শিক্ষক নেই বলেই পড়ুয়াদের দূরে যেতে হচ্ছে। অথচ রাস্তায় বসে এতজন আন্দোলন করছেন। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে তো তাঁদের নিয়োগ করে বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুলগুলো আবার চালু করতে পারত।’’

প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থী অচিন্ত ধারা বলেন, ‘‘নিয়োগের দাবিতে আমরা ৪১১ দিন ধরে মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে বসে রয়েছি। মঞ্চে বসেই শুনতে পাচ্ছি পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকের অভাবে প্রাথমিক স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর কতদিন এইভাবে বসে থাকতে হবে?’’

শিক্ষা দফতরের এক কর্তার দাবি, ‘‘যে স্কুলে উদ্বৃত্ত শিক্ষক সেগুলো চিহ্নিত করে যে সব স্কুলে শিক্ষকনেই সেখানে বদলির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে সরকারও চায়। নানা আইনি জটিলতায় তা আটকে আছে। এই জট শীঘ্রই খুলবে বলে আমরা আশাবাদী।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Teachers Schools

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy