শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির রেশ কাটেনি। এ বার রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগের পরীক্ষাতেও জালিয়াতির অভিযোগে তোলপাড় শুরু হয়েছে। রবিবারের ওই পরীক্ষায় নকল প্রশ্নপত্র বিক্রির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন পুলিশেরই এক কনস্টেবল।
কাঞ্চন মেটে নামে বীরভূমের ওই যুবক কলকাতা পুলিশের পূর্ব যাদবপুর ট্র্যাফিক গার্ডে কর্মরত ছিলেন। তাঁকে গ্রেফতার করেছে দিঘা থানার পুলিশ। এই নিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টায় আটজন গ্রেফতার হল। আগে ধৃতদের মধ্যে কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক গার্ডের এক সিভিকও আছেন।
সোমবার কাঞ্চনকে কাঁথি মহকুমা আদালত সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে। ধৃত বাকি সাতজনের পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ শেষ হচ্ছে মঙ্গলবার। ধৃতদের জেরায় জানা গিয়েছে, কলকাতা থেকে প্রশ্ন এবং উত্তরপত্র এনেছিল দুই যুবক। চাকরিপ্রার্থীদের থেকে টাকা নিয়েছিল তিনজন। আর সমন্বয় রাখত দু’জন। ইতিমধ্যে একটি প্রশ্ন উদ্ধারও হয়েছে। তবে মূল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে তার মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে দাবি। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের ডেপুটি সুপারিন্টেনডেন্ট (ডিসিপ্লিন অ্যান্ড ট্রেনিং) আবুনূর হোসেন বলেন, ‘ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি জড়িতদের খোঁজ চলছে।’’
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, ‘‘পরীক্ষায় ওএমআরের ব্যাচ, সিরিয়াল নম্বর ছিল না। পরীক্ষার্থীদের কার্বন কপি দেওয়া হয়নি। পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। এসএসসি-র কায়দায় ওএমআর বদলে, নম্বর বাড়িয়ে দুর্নীতি করবে বলে।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “সব দফতরে টাকার খেলা, চাকরি চুরি হয়েছে।” প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ও বলেছেন, “তৃণমূল বেকারদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলছে।” তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের পাল্টা, “নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আটকাতে সব থেকে বেশি হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে বিজেপি ও সিপিএম।”
কাঞ্চন নানুরের উচকরণ অঞ্চলের গোপডিহির বাসিন্দা। এলাকাবাসীর দাবি, চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকা লেনদেনের অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে আগেও উঠেছে। প্রায় পনেরো বছরের চাকরি জীবনে কাঞ্চন আগে দক্ষিণ-পশ্চিম ট্র্যাফিক গার্ডে ছিলেন। তবে এখন দীর্ঘ ছুটিতে ছিলেন। ছুটির মেয়াদ শেষেও কাজে ফেরেননি।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মাথা কাঞ্চন। একটি প্রশ্নপত্র কলকাতা থেকে ছাপিয়ে সিভিকের মাধ্যমে দিঘায় পাঠিয়েছিলেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, পরীক্ষার্থীদের আস্থা অর্জনে ধৃতেরা নিজেদের একজনকে বড় পুলিশ কর্তা, একজনকে আইনজীবী সাজিয়েছিল।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)