এখনও ভোট দেওয়ার বয়স হয়নি তাদের। কিন্তু ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) গণনাপত্র পূরণে সাহায্যের জন্য নাবালিকা স্কুলছাত্রীদের কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠেছে পূর্ব বর্ধমানের ভাতারে। ব্লকের বেশ কিছু এলাকায় ওই ফর্ম পূরণে সাহায্য করতে দেখা যাচ্ছে ‘কন্যাশ্রী ক্লাব’-এর সদস্যদের। বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, স্থানীয় প্রশাসনের তরফে ‘ভিডিয়ো কনফারেন্স’ করে এ বিষয়ে তাঁদের জানানো হয়েছে। ছাত্রীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। এই কাজ নিয়ম বহির্ভূত বলে দাবি করেছেন বিরোধীরা। জেলার অন্যত্র অবশ্য ‘কন্যাশ্রী’-দের এ কাজে দেখা যায়নি।
জেলা প্রশাসনের কর্তারা ‘কন্যাশ্রী’-দের সরাসরি ফর্ম পূরণের কাজে শামিল করার কথা মানতে চাননি। জেলাশাসক আয়েষা রানি এ নিয়ে মন্তব্য করেননি। তবে জেলা প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘সংশ্লিষ্ট ভোটার ফর্ম পূরণ করবেন এবং বিএলও তা সংগ্রহ করবেন। তবে কেউ যদি কাউকে দিয়ে ফর্ম পূরণ করান, সেটা তাঁর দায়িত্ব।’’ আর এক প্রশাসনিক কর্তা বলেন, ‘‘ফর্ম পূরণে রাজনৈতিক দলগুলি সাহায্য করছে। অঙ্গনওয়াড়ি, আশা কর্মী, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা সাহায্য করছেন। পাড়ার শিক্ষিত মেয়েরাও হয়তো সাহায্যে এগিয়ে এসেছে।’’
ভাতারের জনজাতি প্রধান কয়েকটি এলাকায় সোমবার দেখা যায়, স্কুলের পরে ছাত্রীদের কেউ স্কুলের পোশাকে, কেউ সাধারণ পোশাকে বাড়ি-বাড়ি যাচ্ছে। সঙ্গে রয়েছেন শিক্ষিকারা। ভাতার গার্লস হাই স্কুল, বড়বেলুন দেবীবালা বালিকা বিদ্যালয়, মাহাচান্দা বিবেকানন্দ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেড়ুর-ছাতনী ক্ষেত্রনাথ হাই স্কুল, নারায়ণপুর হাই স্কুলের মতো নানা স্কুলের ‘কন্যাশ্রী’-দের ওই সব পাড়ায় নির্দিষ্ট জায়গায় বসে বা বাড়ি গিয়ে ফর্ম পূরণে সহযোগিতা করতে দেখা গিয়েছে। বাসিন্দাদের অনেকের দাবি, ধান কাটার কাজ চলছে। দিনভর মাঠে খেটে ফর্ম পূরণে অন্য কারও কাছে সাহায্য নিতে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। এলাকার শিক্ষিত মেয়েরা এগিয়ে আসায় ভরসা পেয়েছেন।
স্কুলগুলির কর্তৃপক্ষের দাবি, শনিবার ব্লকের কন্যাশ্রী বিভাগ থেকে ছাত্রীদের গণনাপত্র পূরণে সাহায্যে নামানোর বিষয়টি জানানো হয়। ‘ভিডিয়ো কনফারেন্স’-এ প্রশিক্ষণও হয়। একাধিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা, স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের ‘নোডাল’ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কথায়, ‘‘মূলত একাদশ শ্রেণির ছাত্রীরাই এই কাজ করছে। যেহেতু তাদের কাছে সরকারি অনুদানে পাওয়া ফোন রয়েছে, সমস্যা হলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ফোন করে জেনে নিতে পারছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে শিক্ষক বা শিক্ষিকাও থাকছেন।’’ এক ছাত্রীর বক্তব্য, ‘‘ভোটার কার্ড দেখে ফর্মে লেখায় সাহায্য করেছি কয়েক জনকে। দল বেঁধে এই কাজ করতে খারাপ লাগছে না।’’
ভাতারের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সুভাষ মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘পুরোপুরি নিয়ম বহির্ভূত কাজ। সর্বদল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনাও হয়নি।’’ বিজেপির বর্ধমান সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি সঞ্জীব সেনের অভিযোগ, ‘‘কন্যাশ্রীদের কাজে লাগিয়ে সহযোগিতার নামে রাজ্য সরকার প্রকল্পের প্রচার করছে। এটা রাজনীতি।’’ ভাতারের তৃণমূল বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীর যদিও দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানবিক প্রচেষ্টায় রাজ্যের ‘কন্যাশ্রী’রা সামাজিক দায়বদ্ধতায় অগ্রণী ভূমিকা নিতে শিখেছে। প্রশাসন সেটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে।’’ ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিকও বলেন, ‘কন্যাশ্রী’ ছাত্রীরা আগে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’, ‘স্বাস্থ্যসাথী’র ফর্ম পূরণে সাহায্য করেছে। সে কথা মাথায় রেখে, ছুটির দিনে বা স্কুল ছুটির পরে তাদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)