Advertisement
E-Paper

ভরদুপুরে থরহরি হাইকোর্ট, ছাদ ফুঁড়ে ওই নামছে কারা!

ফল্স সিলিংটা আচমকা দুলে উঠতে দেখে ভূমিকম্প ছাড়া অন্য কোনও সম্ভাবনার কথা মনেই হয়নি কারও। হ্যাঁ, ফল্স সিলিংটা বিলক্ষণ দুলছে হাইকোর্টের ১৩ নম্বর আদালতে। সঙ্গে খুটখুট, গুড়গুড় শব্দটা আরও ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে। খুলে পড়বে না তো! বিচারপতি দেবাংশু বসাকও তত ক্ষণে ব্যাপারটা খেয়াল করেছেন। আইনজীবী থেকে আর্দালি, কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মক্কেল থেকে ভিড় করা আম-আদমি উসখুস শুরু করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৭
অঙ্কন: সুমন চৌধুরী।

অঙ্কন: সুমন চৌধুরী।

ফল্স সিলিংটা আচমকা দুলে উঠতে দেখে ভূমিকম্প ছাড়া অন্য কোনও সম্ভাবনার কথা মনেই হয়নি কারও।

হ্যাঁ, ফল্স সিলিংটা বিলক্ষণ দুলছে হাইকোর্টের ১৩ নম্বর আদালতে। সঙ্গে খুটখুট, গুড়গুড় শব্দটা আরও ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে। খুলে পড়বে না তো! বিচারপতি দেবাংশু বসাকও তত ক্ষণে ব্যাপারটা খেয়াল করেছেন। আইনজীবী থেকে আর্দালি, কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মক্কেল থেকে ভিড় করা আম-আদমি উসখুস শুরু করেছেন। গত শনিবারের ভূমিকম্পটার পর থেকে অনেকেরই যখন-তখন মনে হচ্ছে, এই বুঝি বাঁই করে মাথাটা ঘুরে গেল। তার ওপর দেড়শো বছরেরও পুরনো বাড়ির তিনতলায় এমন দুলুনি দেখে ঝুঁকি নেবেটা কে?

ফিসফিস করে কে যেন বললেন, ‘‘স্যার, ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে হয় না?’’ আর ঠিক তখনই মড়মড়িয়ে ভেঙে পড়ল ফল্স সিলিংয়ের একটা দিক। জমাট ভিড়টা ভাবছে সিঁড়ির দিকে দৌড় দেবে কি না, এমন সময়...

এক... দুই... তিন!

ওই ভাঙা ফল্স সিলিংয়ের ফাঁক দিয়ে সটান বিচারপতির টেবিলের ওপরেই কারা যেন ধুপধাপ নেমে আসছে! ভুল হল, ঠিক নামা নয়, অনেকটা যেন পতনের ভঙ্গি! একে একে তিন জন— লম্বা লেজ, খাড়া কান, জ্বলন্ত চোখ, অকুতোভয়! এই দুঃসাহসের পর ‘ভাম’ বলে তাদের খাটো করে কার সাধ্যি!

বুধবার দুপুর তখন সাড়ে বারোটা। ভরা এজলাস মুহূর্তে ভেস্তে দিল এই তিন মক্কেল। দু’জন আকারে ছোটই বলতে গেলে। এক জন একটু গায়ে-গতরে।

ঘর জুড়ে হইহই। ভাম-বাহিনী তখন বেজায় অপ্রস্তুত হয়ে নিষ্ক্রমণের পথ খুঁজছে। বিচারপতির মঞ্চের পাশে একটা খোপ মতো জায়গায় নেমেছিল এক মক্কেল। বিচারপতির আর্দালি সবেমাত্র মুখ বাড়িয়ে তাকে দেখতে গিয়েছেন আর সে-ও মেরেছে লাফ। তার থাবার একটা কোণ ভদ্রলোকের কপালের ডান দিক ছুঁয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। কী ভাগ্যিস, চোখটা বেঁচে গিয়েছে খুব জোর।

এজলাস জুড়ে অবশ্য তখন স্বস্তির নিঃশ্বাসের ঝড় বইছে। যাক, ভূমিকম্প নয় তা হলে। ধাতস্থ হতেই সকলের মনে পড়েছে পকেটে রাখা যন্ত্রটির কথা। ব্যস্, হাতে হাতে বেরিয়ে পড়েছে অনেকগুলো মোবাইল। ভামেরা কিন্তু বেজায় লজ্জা পাচ্ছে, ছবি তোলানোয় বিন্দুমাত্র উৎসাহ না দেখিয়ে এ দিক-ও দিক দৌড়ে বেড়াচ্ছে তারা।

এর মধ্যে বিচারপতি উঠে পড়েছেন। হাইকোর্টে বিচারপতিদের যাতায়াতের আলাদা রাস্তা থাকে, যাকে বলে ‘জাজেস্ করিডর’। সেই করিডরের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন তিনি। ওই দরজা-পথে সাধারণের যাওয়া মানা।

কিন্তু যারা বিচারপতির টেবিলে লাফ মারে, তারা আর পার্থিব নিয়মের তোয়াক্কা করেছে কবে! মিনিট কয়েকের মধ্যেই দেখা যায়, চক্ষুলজ্জার মাথা খেয়ে বিচারপতির ওই দরজা দিয়েই একে একে হেঁটে বেরিয়ে গিয়েছে তিন জন।

আগে এমন দেখেছেন নাকি? হাইকোর্টের পুরনো আইনজীবীদের অনেকেই জানালেন, সওয়াল করতে করতে এজলাসের আনাচে-কানাচে ভামেদের আনাগোনা দেখেছেন তাঁরা। তবে বালাই ষাট, কখনও কারও ক্ষতি করেনি ওরা। এ বার নেহাত ফল্স সিলিংটা খসে পড়েছিল, তাই একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছে। ওই ফল্স সিলিংয়ের আড়ালেই বাসা বাঁধে অজস্র পায়রা, শালিক, ঘুঘু। তাদের আন্ডাবাচ্চা খেতেই মাঝেমধ্যে ভামেরা সেখানে হানা দেয়।

বুধবারের ঘটনার পরে অবশ্য ডাক পড়েছে বন দফতরের। খাঁচা পেতে ভাম ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এমন ডাক মাঝেমধ্যেই পড়ে, জানালেন বন দফতরের এক পদস্থ কর্তা। বললেন, ‘‘ভাম বা ‘পাম সিভেট’ কিংবা খটাশ বা ‘কমন সিভেট’ কলকাতার আনাচে-কানাচে বহু পুরনো বাড়ির স্থায়ী বাসিন্দা। রাজভবনেও অজস্র ভাম রয়েছে। রয়েছে মহাকরণেও। এ ছাড়া শেয়াল-পেঁচা তো রয়েইছে!’’ বন দফতর সূত্রে জানা গেল, দিল্লিতে সংসদ ভবন এমনকী প্রধানমন্ত্রীর দফতরও ভামেদের পুরনো ঠিকানা!

অর্থাৎ ধরে নেওয়া যায়, নরেন্দ্র মোদীর দুর্দান্ত দেহরক্ষী বাহিনী এসপিজি পর্যন্ত এই চারপেয়ে বাহিনীর সঙ্গে সহাবস্থানে বাধ্য এবং নিরুপায়! বন দফতরের কর্তাটি খাঁটি কথা বলছিলেন— ‘‘এদের তো জোর করে উৎখাত করা যাবে না।’’

বলা হয়নি, সে দিন ওই সিলিং-পর্বের মিনিট দশেকের মধ্যেই আবার বসেছিল আদালত। কিন্তু তত ক্ষণে ঘরের গুরুগম্ভীর পরিবেশ পাল্টে গোটাটাই চরম ‘ভামপন্থী’। অনেকের মুখ দেখে মনে হচ্ছিল— ‘ভরা কোর্টরুম চত্বর, লাগছে না ভাল, দুত্তোর!’

abpnewsletters Civet cat kolkata high court earthquake mobile prime minister delhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy