Advertisement
E-Paper

বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত-তাণ্ডব নিয়ে ফের সরব পার্থ

অকৃতকার্য পড়ুয়াদের লাগাতার তাণ্ডবেও রাজ্য সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের অবস্থানের যে বিশেষ পরিবর্তন হচ্ছে না, এ দিন তারও সুস্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:৩৫
পাশের দাবিতে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

পাশের দাবিতে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

বহিরাগতদের উপরে তাণ্ডবের দায় চাপিয়ে কড়া ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। তা সত্ত্বেও পাশ করানো এবং ফের সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার দাবিতে মঙ্গলবার দমাদ্দম লাথি পড়ল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে। পার্ট-১ পরীক্ষায় ফেল করা পড়ুয়াদের একাংশ ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করে কলেজ স্ট্রিটে অবরোধ করলেন। প্রায় সারা দিনই বিক্ষোভ দেখালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে।

তবে অকৃতকার্য পড়ুয়াদের লাগাতার তাণ্ডবেও রাজ্য সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের অবস্থানের যে বিশেষ পরিবর্তন হচ্ছে না, এ দিন তারও সুস্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে।

এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকেই কলেজ স্কোয়ারে জড়ো হন পড়ুয়ারা। প্রধান গেটে পরিচয়পত্র দেখে তবেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকানোর প্রক্রিয়া চলছিল। তার মধ্যেই সাড়ে ১২টা নাগাদ স্লোগান দিতে দিতে গেটের সামনে চলে আসেন বিক্ষোভকারীরা। বন্ধ করে দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি গেট। উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে ‘খুনি’ সম্বোধন করে বিক্ষোভ চলতে থাকে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য বেরিয়ে আসেন রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধরচক্রবর্তী। পরিস্থিতি ঘোরালো দেখে ফিরে যান। পরে তিনি বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও ভুল থাকলে সেটা শুধরে নেওয়া হবে। কিন্তু বহিরাগতেরা যে-ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে, সেটা অনুচিত।’’

কিছু পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট টপকে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন কিছু বিক্ষোভকারী। বিফল হয়ে একসঙ্গে গেটে লাথি মারতে থাকেন তাঁরা। তার পরে তাঁদের অবরোধ শুরু হয় কলেজ স্ট্রিটে।

টানা বিক্ষোভ চলতে থাকায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ এ দিন ফের বহিরাগত-তত্ত্ব নিয়ে সরব হয়েছেন। এ দিন আন্দোলনে দেখা গিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, এসএফআই-সমর্থক গীতশ্রী সরকার এবং অন্য বেশ কয়েক জনকে। প্রচুর পুলিশ ছিল। পড়ুয়াদের বুঝিয়ে অবরোধ থেকে সরানো হলেও বিক্ষোভ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ৬ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেটের বৈঠকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তার পরে বিক্ষোভ ওঠে।

এক দল ছাত্রছাত্রী জানান, যাঁরা গেট ভাঙতে চাইছিলেন, তাঁরা তাঁদের সমর্থন করেন না। তাঁরা বলেন, ‘‘ওখানে বেশির ভাগই বহিরাগত এবং রাজনৈতিক মদতে পুষ্ট। তাই আমরা পিছনের গেটে জমায়েত করেছি। পাশ করানোর দাবি জানাচ্ছি।’’ পুরো বিষয়টিকেই ধিক্কার জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা জানান, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে পরীক্ষার নিয়মবিধির ৯/৬ ধারা পরিবর্তন করা হয়। সিন্ডিকেটের সবুজ সঙ্কেত মেলে ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। এই বিষয়ে বর্তমান কর্তৃপক্ষও কিছুই জানতেন না বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, যখন সিন্ডিকেটে এই পরিবর্তিত নিয়ম পাশ হয়, বর্তমান উপাচার্য এবং সহ- উপাচার্য (শিক্ষা) সেই সময়ে সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলেন। তাই তাঁরা কিছুই জানতেন না, এই যুক্তি ধোপে টেকে না। তবে এই কম সময়ের মধ্যে পড়ুয়াদের কাছে নতুন নিয়মের বার্তা পৌঁছতে যে সমস্যা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ সেটা মেনে নিয়েছেন।

শিক্ষামন্ত্রী এ দিন জানান, নিয়মে কতটা কী বদল হয়েছে, তা নিশ্চই দেখা হবে। তবে তাঁর প্রশ্ন, পড়ুয়ারা তিনটে বিষয়ে পাশ করবেন না কেন? মন্ত্রী বলেন, ‘‘ফেল করাদের পাশ করিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ভাসিয়ে দেওয়া কি উচিত? অদ্ভুত অদ্ভুত বিষয়ে বিক্ষোভ হচ্ছে! হাজিরা কম। বিক্ষোভ! পাশ করতে পারছে না। বিক্ষোভ! ভাল ভাবে পড়াশোনা করার জন্য এদের বোঝাতে হবে!’’

এ দিন বিধানসভার প্রেস কর্নারে বাম এবং কংগ্রেসের যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ফেল করাদের পাশ করানোর দাবি করছি না। কিন্তু এঁরা তো কেউ খারাপ ছাত্র নন। কেন এমন ফল হল, তা তদন্ত করে দেখা উচিত। শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।’’ কেন এত ফেল, ডিএসও-র তরফেও তার তদন্ত চাওয়া হয়েছে।

Calcutta University Kolkata Partha Chatterjee কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পার্থ চট্টোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy