Advertisement
E-Paper

বর্ষা চুরি করল উত্তর ভারত, ঘামছে শহর

বাড়তি গতিই কাল হল! ৭ জুন, নির্দিষ্ট সময়ের সাত দিন পরে, কেরল দিয়ে মূল ভারত-ভূখণ্ডে পৌঁছেছিল সে। সেই দেরি পুষিয়ে দিতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এমনই গতি বাড়িয়েছে যে বিহার, উত্তরপ্রদেশ হয়ে একেবারে পৌঁছে গিয়েছে কাশ্মীরে।

দেবদূত ঘোষঠাকুর

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৬ ০৮:৪৪

বাড়তি গতিই কাল হল!

৭ জুন, নির্দিষ্ট সময়ের সাত দিন পরে, কেরল দিয়ে মূল ভারত-ভূখণ্ডে পৌঁছেছিল সে। সেই দেরি পুষিয়ে দিতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এমনই গতি বাড়িয়েছে যে বিহার, উত্তরপ্রদেশ হয়ে একেবারে পৌঁছে গিয়েছে কাশ্মীরে। আর সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছে দক্ষিণবঙ্গের উপরে থাকা মেঘপুঞ্জকে। মৌসুমি বায়ুর টানে সমুদ্র থেকে যে জলীয় বাষ্প ঢুকছে, তা গিয়ে জমা হচ্ছে উত্তর ভারতের পাহাড়ে। কিছুটা যাচ্ছে উত্তরবঙ্গে। ফলে শিলিগুড়ি ভাসছে, আর উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে এখন ঝেঁপে বৃষ্টি।

কিন্তু গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের আকাশে বর্ষার মেঘ থিতু হতে পারছে না। তাই বৃষ্টিও হচ্ছে না। মেঘের আনাগোনায় কেবল আর্দ্রতা বাড়ছে, বাড়ছে অস্বস্তি।

এক আবহবিদের কথায়, ‘‘এ বার বিহার-দক্ষিণবঙ্গের উপরে থিতু হতেই পারছে না মৌসুমি বায়ু। তাকে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে চলে গেল উত্তরাখণ্ড।’’ সেখানে বর্ষা ঢোকার কথা ১ জুলাই। কিন্তু ২৩ জুনই সেখানে পৌঁছে গিয়েছে মৌসুমি বায়ু। উত্তর ভারতের পাহাড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে বৃষ্টি। মৌসম ভবন জানাচ্ছে, দিল্লি, হরিয়ানা, পঞ্জাব, রাজস্থানেও বর্ষা এল বলে। এ রাজ্যে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও দার্জিলিং জেলা বৃষ্টিতে ভাসছে।

কেরলে ঢোকার পরে বর্ষা উপরের দিকে ওঠে। মধ্য ও পূর্ব ভারতে বর্ষার ঠিক আগে দিনের তাপমাত্রা খুব বেশি থাকে। এর অর্থ, গরম বাতাস উপরের দিকে উঠে যাবে ও নীচের বায়ুমণ্ডলে তৈরি হবে নিম্নচাপ, যা মৌসমি বায়ুকে টেনে আনবে মধ্য ও পূর্ব ভারতের দিকে। সেখানে বৃষ্টি ঝরিয়ে বর্ষা ধীরে ধীরে এগোবে উত্তর ভারতের দিকে। রাজস্থান-হরিয়ানা-পঞ্জাবে তাপপ্রবাহের জেরে সেখানে তত দিনে তৈরি হবে নিম্নচাপ এলাকা। সেই টানে মৌসুমি বায়ু পৌঁছে যাবে উত্তর ভারতে।

এ বার কি পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল?

মৌসম ভবন জানাচ্ছে, মধ্য ভারতে মে মাসের শেষ থেকেই তাপপ্রবাহের মতো পরিস্থিতি ছিল। তাই বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের টানে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু মধ্য ভারত পর্যন্ত উঠে গিয়েছে। কিন্তু গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে অনুকূল পরিস্থিতি পেল না বর্ষা।

এমন কেন হল?

আবহবিদেরা বলছেন, এপ্রিলের শেষাশেষি এবং মে-র গোড়ায় গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের তাপমাত্রা বেড়েছিল চড়চড় করে। এমন চললে সেটা বর্ষার পক্ষে অনুকূল হবে বলে আশা করেছিলেন আবহবিদেরা। কিন্তু মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু সেই পরিস্থিতিকে ঠিক মতো দানা বাঁধতে দিল না। ওই ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত না করলেও, তার প্রভাবে বৃষ্টি হল দক্ষিণবঙ্গে। আর তার প্রভাবটা চলল সপ্তাহ খানেক ধরে। তার জেরে দক্ষিণবঙ্গের আকাশে ভিড় করে থাকল মেঘ। যে সময় তাপমাত্রা বাড়লে বর্ষার পক্ষে সুবিধা হত, হল তার বিপরীত।

কিন্তু বর্ষা দ্রুত উত্তর ভারতে পৌঁছে গেল কী ভাবে?

আলিপুর হাওয়া অফিসের এক আবহবিদের ব্যাখ্যা, রোয়ানুর প্রভাব উত্তর ভারতে প্রভাব পড়েনি। তাই পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, গুজরাতে তাপমাত্রা বেড়েছে। রাজস্থানে তাপমাত্রা এক দিন পৌঁছে গিয়েছিল ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর সেখানে তাপপ্রবাহ জারি ছিল গত সপ্তাহ পর্যন্ত। আর সেটাই দক্ষিণবঙ্গের কাল হল। উত্তর-পশ্চিম ভারতের দীর্ঘ অঞ্চল জুড়ে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ এলাকা টেনে নিয়ে গেল দক্ষিণবঙ্গে দুর্বল হয়ে ঢোকা বর্ষাকে।

দক্ষিণবঙ্গে যখন বৃষ্টির অভাবে বীজতলা তৈরি করা যাচ্ছে না, উত্তরবঙ্গে কিন্তু বন্যা পরিস্থিতি। একই রাজ্যে বর্ষার এই দুই চেহারা কেন?

জবাব পেতে হলে যেতে হবে বর্ষার উৎসে। ভারতে বর্ষা ঢোকার দুটি পথ। আরব সাগর থেকে কেরল হয়ে মূল ভারত-ভূখণ্ডে ঢোকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু। এটিই মূল পথ। অন্য পথটি হল আন্দামান দিয়ে। আন্দামান দিয়ে ঢোকা বর্ষা অবশ্য মূল ভারত-ভূখণ্ডে ঢোকে না। তা আন্দামান থেকে মায়ানমার হয়ে যায় উত্তর-পূর্ব ভারতে। তার পরে আসে উত্তরবঙ্গে। কেরল-পথে মধ্য ভারত হয়ে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢোকার স্বাভাবিক সময় হল ৮ জুন। আর মায়ানমার হয়ে উত্তরবঙ্গে ঢোকার কথা ১ জুন।

এ বার দুই পথেই বর্ষা দেরিতে ঢুকেছে। উত্তরবঙ্গে ১২ জুন আর দক্ষিণবঙ্গে ১৭ জুন। দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা প্রথম থেকেই দুর্বল থাকলেও উত্তরবঙ্গে ঢুকতেই পেয়ে গিয়েছে একের পর ঘূর্ণাবর্ত। তার জেরে ডুয়ার্স আর হিমালয় সংলগ্ন উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি থামছেই না।

উত্তরবঙ্গের চার জেলায় আগামী তিন দিনও প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর হাওয়া অফিস। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, কলকাতা ও তার সংলগ্ন এলাকার এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতিকে বদলে দিতে পারে দিঘা বা সাগরদ্বীপ উপকূল ঘেঁষে তৈরি হওয়া কোনও ঘূর্ণাবর্ত। ওই ঘূর্ণাবর্তই বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প অন্যত্র পাচার হওয়া রুখতে পারে। উপগ্রহ চিত্রে চোখ রেখে আলিপুর হাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদেরা আঁতিপাতি করে খুঁজছেন এমন একটা মেঘপুঞ্জ, যার দ্রুত বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু শনিবার বিকেল পর্যন্ত তার সন্ধান মেলেনি।

এক আবহবিদের মন্তব্য, ‘‘ঝাড়খণ্ড, বিহার, কিংবা উত্তরবঙ্গের উপরে ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। তাদের একটাও যদি ছিটকে আসে, তা হলে তাপদাহ থেকে বাঁচতে পারে দক্ষিণবঙ্গ।’’

rain
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy