মঞ্চের সামনে কিছুটা এলাকা জুড়ে থাকে ‘ডি জোন’। অর্থাৎ, ভিআইপি-র সব থেকে কাছের এলাকা। সেটি মোটামুটি ফাঁকা থাকে। তার পিছনে একটি ব্যারিকেড। তারও পিছনে একটি জায়গা সাধারণ মানুষের জন্য। সব মিলিয়ে এ ভাবেই তৈরি হয় জেড প্লাস ক্যাটেগরির ভিআইপি-র সভাস্থল। সেখানে বৃহস্পতিবার হেমতাবাদের সভায় ডি জোনে ঢুকে মঞ্চের দু’দিকের সিঁড়ি পর্যন্ত দুই তরুণী পৌঁছে গেলেন কেমন করে, কী করেই বা তাঁদের এক জন মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর পা ধরতে চলে গেলেন, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত তার উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরাপত্তায় থাকা উপরতলার অফিসারদের দায়িত্ব এড়ানোর উপায় থাকবে না, তেমনই ইঙ্গিত মিলছে।
ডি জোনের দায়িত্ব থাকে স্পেশ্যাল সিকিওরিটি ইউনিট (এসএসইউ)-এর উপর। যাদের প্রায় সকলেই কম্যান্ডো ট্রেনিংপ্রাপ্ত। এর পিছনের ব্যারিকেডে মূলত থাকে উর্দি পরা পুলিশ। তার পিছনে পুলিশের সঙ্গে থাকে এসবি। কলকাতা বা জেলা, সর্বত্রই নিরাপত্তা কাঠামো এক কথায় এই রকম। ডি জোনে পাহারায় থাকে ১২০ থেকে ১৫০ জন। মুখ্যমন্ত্রী যে মঞ্চে ওঠেন বা যেখানে রাত্রিবাস করেন, সেই এলাকাকে এই বিশেষ বাহিনী ঘিরে রাখে। সেখানে উর্দিধারী পুলিশ অফিসার-কর্মীকে রাখা হয় না। বিনা অনুমতিতে কেউ যাতে সেখানে পৌঁছতে না পারেন, সে জন্য ডি জোনের ১০ থেকে ৩০ মিটার দূরে এসএসইউয়ের আর একটি বলয় থাকে। সেখানে সাদা পোশাকের রাজ্য গোয়েন্দা বাহিনীর অফিসার-কনস্টেবলদেরও থাকার কথা। এ দিনের ঘটনায় জেলার পুলিশ-গোয়েন্দা বিভাগ ও রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মঞ্চের সিঁড়িতে কর্তব্যরত কম্যান্ডোরা কী করছিলেন, তা-ও প্রশ্নের মুখে। রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং ডিজি (সিকিউরিটি)-র তরফে পৃথক তদন্ত করা হবে বলে নবান্ন সূত্রের খবর।
মুখ্যমন্ত্রীর সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাথায় রয়েছেন ডিজি সিকিউরিটি বীরেন্দ্র। এসএসইউয়ের নির্দিষ্ট দায়িত্ব এখন সিদ্ধিনাথ গুপ্তের উপর। কিন্তু এ দিন তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। বীরেন্দ্র সব সময় মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা বলয়ের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। কিছু দিন আগে তাঁকে অন্য দায়িত্বে সরানো হয়েছিল। কিন্তু মাসখানেকের মধ্যেই আবার তাঁকে নিরাপত্তার দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা হয়। নবান্নের মতে, এই অফিসার মুখ্যমন্ত্রীর ‘আস্থাভাজন’। এ দিনের ঘটনার পরে সেই আস্থায় চিড় ধরল কি না, গুঞ্জন তা নিয়েও। পুলিশের একটি মহল বলে, ঘটনার সময় মুখ্যমন্ত্রী তখন বক্তৃতা শেষ করেছেন। তাঁর বেরনোর ব্যবস্থার তদারকিতে ব্যস্ত ছিলেন বীরেন্দ্র। তাই হয়তো অন্য দিকটি তাঁর নজর এড়িয়েছিল। এই যুক্তি মানছেন না পুলিশেরই অনেকে। তাঁদের মতে, নিরাপত্তার দায়িত্ব যাঁর উপর, তিনি ডি জোনের ক্ষেত্রে ফাঁক রাখবেন না, এটাই প্রত্যাশিত। মমতা পৌঁছনোর আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিক থেকে ডিজি (সিকিউরিটি)-র নির্দেশ মানা হয়েছিল কি না, তা-ও দেখা হবে। নিয়ম মতো এই অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারের রিপোর্টও দেখা হবে।
আরও পড়ুন: নিরাপত্তায় বড়সড় গলদ! ভাষণরত মমতার পা ধরতে গেলেন যুবতী
মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা অবিলম্বে ঢেলে সাজার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এ দিন পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের কথা হয়। মমতা নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদাসীন হলেও এ বার পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা মুখ্যমন্ত্রীর উপর ‘চাপ’ সৃষ্টি করতে চান। এক শীর্ষ আমলার কথায়, ‘‘তাঁর নিরাপত্তার প্রোটোকল জোরদার করতে যা করার, তা করতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy