বয়সবিধিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অবসরের পথে বাংলার তিন নেতা-নেত্রী। শেষ পর্যন্ত কোনও ‘ব্যতিক্রমী’ সিদ্ধান্ত না নিলে বয়সের কারণে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে এ বার সরে যেতে হবে সূর্যকান্ত মিশ্র, রবীন দেব এবং রেখা গোস্বামীকে। এই ত্রয়ীর মধ্যে সূর্যকান্ত রয়েছেন পলিটব্যুরোয়। তাঁদের পাশাপাশি আরও দুই নেতা-নেত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা, না-থাকা নিয়ে আলোচনা রয়েছে দলের অন্দরে। তাঁদের এক জন বর্ধমানের নেত্রী অঞ্জু কর এবং বাঁকুড়ার নেতা অমিয় পাত্র। তবে এঁদের শূন্যস্থানে কারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন এবং কোন সূচকে হবেন, তা নিয়ে বিবিধ মতামত রয়েছে সিপিএমে।
ভোট না থাকলেও সিপিএমে যে নেতা হওয়ার দৌড় রয়েছে, তা একাধিক জেলা সম্মেলনেই স্পষ্ট। কোথাও গোষ্ঠী কোন্দলে জেলা কমিটির প্যানেল থেকে গণইস্তফা আবার কোথাও ভোটাভুটি হয়েছিল সম্মেলনের এক সপ্তাহ পরে। সেই সিপিএমে বাংলা থেকে কারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা করে নেবেন, তা নিয়ে আলোচনা আশ্চর্য নয়।
আগামী ২-৬ এপ্রিল তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস। সিপিএমের একটি বড় অংশ চায় মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হোক। অল্প হলেও এর উল্টো অভিমতও রয়েছে। সেই মত বলছে, কেরলের মহিলা সমিতির সম্পাদক বা সভাপতি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। বাংলার ক্ষেত্রে তা হলে কনীনিকা ঘোষ বা জাহানারা খান কেন তা হবেন না? উল্লেখ্য, মহিলানেত্রী অঞ্জু স্বেচ্ছায় রাজ্য কমিটি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ডানকুনি সম্মেলনে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকার বয়স তাঁর রয়েছে। কিন্তু সিপিএমের একটি অংশের বক্তব্য, অঞ্জু ব্যক্তিগত ভাবে চান নতুন কাউকে জায়গা করে দিতে। শেষ পর্যন্ত অঞ্জু কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অব্যাহতি নিলে কনীনিকা বা জাহানারার মধ্যে এক জনকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। তবে রেখা গোস্বামীর জায়গায় মিনাক্ষীকে নিলে অঞ্জুর জায়গায় জাহানারাকে নেওয়ার সুযোগ কম। কারণ, দু’জনেই পশ্চিম বর্ধমানের। সে দিক থেকে দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন কাশীপুর-বেলগাছিয়ার কনীনিকা। আবার সিপিএমের একটি অংশ একান্ত আলোচনায় বলছেন, মিনাক্ষী কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পেলে সৃজন ভট্টাচার্যকেও নেতৃত্বে তুলে নিয়ে যাওয়া উচিত।
সূর্যকান্ত এবং রবীনের জায়গায় দিল্লির শিকে কাদের ভাগ্যে ছিঁড়বে, সেই লড়াইটাই আসল হয়ে উঠেছে সিপিএমে। যাঁদের নাম আলোচনায় রয়েছে, জেলা স্তরে তাঁদের অনুগামীরা অতি উৎসাহ দেখিয়ে বাংলা থেকে দিল্লিতে কাজ করতে যাওয়া বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতাদের জিজ্ঞাসা করছেন, ‘‘দাদার নাম আলোচনায় আছে নাকি?’’
উল্লেখ্য, সূর্য-রবীন ছাড়াও অমিয় যদি কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়েন বা তিনি ছেড়ে দেন, তা হলে তিন জন অন্তর্ভুক্ত হবেন। সেখানে প্রথম নাম রয়েছে কলকাতার জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদারের। চা-বাগানের শ্রমিক আন্দোলনের নেতা জিয়াউল আলমের নামও রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়ার দৌড়ে। অমিয় কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে সরলে তাঁর জায়গায় দু’টি নাম নিয়ে আলোচনা রয়েছে। এক, উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক পলাশ দাস এবং দুই, হুগলির জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ। সিপিএমের অন্দরের খবর, পলাশকে জেলা সম্পাদক করা হয়েছে আলিমুদ্দিনের ‘হস্তক্ষেপে’। উত্তর ২৪ পরগনার অন্য রাজ্য কমিটির সদস্যেরা অন্য নামের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। অন্য দিকে, দেবব্রতের ঝুলিতে রয়েছে সুসংগঠিত ভাবে নিজের জেলায় রাজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত করার সাফল্য।
আরও একটি বিষয় নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে সিপিএমে। পলিটব্যুরোয় কে সূর্যকান্তের স্থলাভিষিক্ত হবেন? সিপিএমের একটি অংশ বলছে, এ ক্ষেত্রে প্রথম দাবিদার প্রবীণ নেতা শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। তবে রাজ্য সম্মেলনে আভাস রায়চৌধুরীর যে ‘সক্রিয়তা’ দেখা গিয়েছিল, সেই সূচকে পলিটব্যুরোয় তাঁকে নেওয়া নিয়েও আলোচনা রয়েছে। ক্ষীণ হলেও সুজন চক্রবর্তীর নাম নিয়েও আলোচনা রয়েছে দলের ছাত্র-যুবদের একাংশের মধ্যে। তবে সবই চূড়ান্ত হবে মাদুরাইয়ে। সিপিএমের এক প্রবীণ নেতার কথায়, ‘‘এ বারের পার্টি কংগ্রেস হতে চলেছে প্রজন্ম বদলের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। সেই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই সব কিছু হবে।’’