Advertisement
E-Paper

নদী পার হয়ে জয়ন্তীতে ‘উত্তরের পাঠশালা’

শুধু পড়ানোর জন্য তাঁরা খরস্রোতা পাহাড়ি নদীও পার হয়ে যেতে পারেন। 

নারায়ণ দে

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০২
অন্য পাঠ: জয়ন্তীর বনবস্তিতে চলছে পাঠশালা। নিজস্ব চিত্র

অন্য পাঠ: জয়ন্তীর বনবস্তিতে চলছে পাঠশালা। নিজস্ব চিত্র

শুধু পড়ানোর জন্য তাঁরা খরস্রোতা পাহাড়ি নদীও পার হয়ে যেতে পারেন।

জয়ন্তীতে দাঁড়ালে সামনে জয়ন্তী নদী। বছরভর তা পড়ে থাকে প্রায় শুকনো নালা হয়ে। শুধু বর্ষার সময়ে জল উপচে দু’কূল ভাসিয়ে দেয়। উল্টো দিকে যে ভুটিয়া বস্তি, তার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী সেতুটি ১৯৯৩ সালে বন্যায় ভেঙে যায়। ওই ভুটিয়া বস্তির অন্য দিকে আবার ফাঁসখাওয়া নদী। বর্ষা এলে তাই বস্তি এলাকাটা কার্যত বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে যায়। এলাকায় যে পরিবারগুলির বাস, তাদের ঘরে রয়েছে জনা কুড়ি স্কুল পড়ুয়া। জয়ন্তী নদী পার হয়ে স্কুল যাতায়াত তখন বন্ধ তাদের।

গত কয়েক বছর ধরে এই অবস্থাটা দেখছিলেন ওঁরা। পেশায় কেউই শিক্ষক নন। কেউ টুর গাইড, কেউ গাড়িচালক, কেউ আবার কম্পিউটার কোর্স শেষে টুকটাক কাজ করছেন। জয়ন্তীর বাসিন্দা সেই সঞ্জীব রায়, গোপাল গোয়ালা বা নীলাঞ্জন দত্তরা ঠিক করেন, বর্ষার সময়ে জল বাড়লে নিজেরাই নদী পার হয়ে ভুটিয়া বস্তিতে যাবেন। পড়াবেন ছোট বাচ্চাগুলিকে।

যেমন ভাবনা তেমনি কাজ। এই পরিকল্পনা নিয়ে মাস তিনেক আগে তাঁরা হাজির হয়ে যান ভুটিয়া বস্তিতে। জানিয়ে দেন, প্রতি সপ্তাহে শনি ও রবিবার সকালে আসবেন তাঁরা। পাঠশালা বসাবেন গাছতলাতেই। যদি বৃষ্টি নামে, তা হলে কারও বাড়িতে। দু’দিনই তিন ঘণ্টা করে ক্লাস। নাম দেওয়া হয় ‘উত্তরের পাঠশালা’। সেই মতো কাজও শুরু করে দেন সঞ্জীব, নীলাঞ্জনরা। সঙ্গে পড়ুয়াদের জন্য আনেন বিস্কুট ও কেক, প্রয়োজন মতো খাতা-পেনও।

তাঁদের কথায়, “ওই খরস্রোতা জয়ন্তী নদী পার হয়ে বাচ্চাগুলি স্কুলে আসবে কী করে! তাই ভাবলাম আমরাই যদি তাদের পড়াতে ওখানে যাই, ক্ষতি কী!” নীলাঞ্জন, গোপালরা জানান, বর্ষায় খরস্রোতা জয়ন্তী নদী। তাই হাতে হাত ধরে পার হন তাঁরা।

এত দিন নদীতে জল বাড়লেই স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে যেত। তাতে কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলেন জয়ন্তী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুশান্তপ্রসাদ কর বা জয়ন্তী বিএফপি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মৌমিতা রায়৷ এখন তাঁদের চিন্তা অনেকটাই কেটেছে।

দাদারা আসছেন পড়াতে। ষষ্ঠ শ্রেণির হনু কুমাল, বিমল মঙ্গর, রোকন সোনার কিংবা চতুর্থ শ্রেণির মনদীপ মাঝি, শীতল মঙ্গররা জানায়, “বর্ষায় নদীর জল বাড়লে অধিকাংশ দিনই আমরা স্কুলে যেতে পারি না৷ কারণ তখন নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকে৷” এখন যে ঘরের কাছে গাছতলায় ক্লাস হচ্ছে, তাতে খুশি? ওরা সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠল, ‘‘হ্যাঁ!’’

Education Children Jayanti River
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy